জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন রাব্বি (বাঁ থেকে), তাজউদ্দিন ও কাজেম শাহ
জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন রাব্বি (বাঁ থেকে), তাজউদ্দিন ও কাজেম শাহ

কাবরেরার দলে তিন নতুনের গল্প

কাজেম শাহর জন্ম বাংলাদেশেই। কানাডায় গিয়ে ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ। টুকটাক খেলতে খেলতেই স্কুলজীবনে আলবার্টার এডমন্টনের সাউথ ওয়েস্ট ইউনাইটেড ক্লাবে নাম লেখানো। সেখানেই ফুটবলের পাঠ। গ্রেড টেনে থাকার সময় স্কটল্যান্ড থেকে কয়েকজন ফুটবল স্কাউট গিয়েছিলেন এডমন্টনে। কাজেম পড়েছিলেন তাঁদের চোখে। স্কটল্যান্ডের নিচের দিকের স্তরের ক্লাবে খেলার প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু তখন যাননি। মা–বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে আগে পড়াশোনা শেষ করুক।

কিন্তু সেই কাজেমই এখন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তোলার অপেক্ষায়। ২০২০ সালে সাইফ স্পোর্টিংয়ে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্লাবটিই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় পর নাম লেখান পুলিশ ফুটবল ক্লাব দলে। পুলিশে এবার দ্বিতীয় মৌসুম খেলছেন। প্রিমিয়ার লিগের প্রাথমিক পর্বে দারুণ খেলেই ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রাথমিক দলে।

এই কাজেমের আরও একটি পরিচয় না দিলেই নয়। তিনি সাবেক ক্রিকেটার সৈয়দ হালিম শাহর ছেলে। নব্বইয়ের দশকে এই হালিম শাহ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিতেন। কিন্তু কখনোই জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ হয়নি। তাঁর সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে খেলেছেন। কেউ কেউ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্বও করেছেন। সেই হালিম শাহর ছেলে কাজেম এখন জাতীয় ফুটবল দলের দরজায় দাঁড়িয়ে। আগেই কাজেম সুযোগ পেয়ে যেতেন।

সাবেক ক্রিকেটার সৈয়দ হালিম শাহর ছেলে কাজেম শাহ

গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু হঠাৎ চোটে পড়ায় তখন আর হয়নি। এবার আবার হাভিয়ের কাবরেরার ডাক পেয়েছেন। অপেক্ষা চূড়ান্ত দলে খেলার। আপাতত সেই স্বপ্নে বিভোর তিনি, ‘জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পাওয়াটা বড় ব্যাপার। আমি দেশের হয়ে খেলতে চাই। আশা করি, সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। তবে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’

এবারের প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন রাব্বি হোসেনও। ব্রাদার্স ইউনিয়নের জার্সিতে লিগে করেছেন ৫ গোল। স্কুল ফুটবল থেকে উঠে আসা রাব্বি অবশ্য বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়। এবারের মৌসুমে ধারে তাঁকে খেলতে পাঠানো হয়েছিল ব্রাদার্সে।

ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলা রাব্বি হোসেন

গোপীবাগের কমলা বাহিনীর অবস্থা লিগে হতাশাজনক হলেও রাব্বি নিজেকে মেলে ধরেছেন। গত বছর নেপালে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের জার্সি পরেছেন। এবার হাতছানি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার। প্রাথমিক স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি তিনি, ‘জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে সুযোগ হয়েছে। এখনো মূল জাতীয় দল অনেক দূরের বিষয়। আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আরও অনেক কিছু শিখতে হবে। আশা করি, দেশের হয়ে খেলতে পারব।’

জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে এবার আরও একটি চমক আছে। প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ডিফেন্ডার তাজউদ্দিন। মূলত মিডফিল্ডার হলেও ক্লাবের হয়ে তিনি খেলছেন রাইটব্যাক পজিশনে। তিনি জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ সাদউদ্দিনের ছোট ভাই।

দুই ভাই এবার একসঙ্গে জাতীয় দলের স্কোয়াডে। প্রাথমিক স্কোয়াড হলেও দুই সহোদরের জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার খুব বেশি নজির নেই দেশের ফুটবলে। সেদিক দিয়ে এটি বিশেষ ঘটনাই। তাজও সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়েই খেলা শুরু করেছিলেন। তিন মৌসুম এই দলের হয়ে খেলেছেন। এ মৌসুমে শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন। কাবরেরার চোখেও পড়ে গেছেন নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ডিফেন্ডার তাজউদ্দিন

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুই ম্যাচ মার্চে। এর আগে প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পাওয়া ফুটবলাররা যাবেন সৌদি আরবে অনুশীলন ক্যাম্প করতে। দুই সপ্তাহের একটু বেশি সময়ের সেই ক্যাম্পেই মূল স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে স্বপ্ন পূরণের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবেন রাব্বি-কাজেম-তাজরা। সেই পরীক্ষায় উতরে গেলে দেশের ফুটবলে নতুন দিনের শুরু হবে তাঁদের হাত দিয়ে।