১৪ মিনিটে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের জয়টা নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ২১ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ১ গোল শোধের পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করে পরিস্থিতি। এরপর ঘরের মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে লিভারপুল।
২ গোলে পিছিয়ে থাকা কার্লো আনচেলত্তির দল পরের সময়টুকুতে খেলল লিভারপুলকে নিয়ে। একে একে লিভারপুলের জালে বল জড়াল পাঁচবার। শেষ পর্যন্ত ৫-২ গোলের জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা রেখেই মাঠ ছাড়ে ‘লস ব্লাঙ্কোস’ শিবির। কিন্তু দারুণ শুরুর পরও কেন এভাবে বিধ্বস্ত হলো লিভারপুল? কোথায় ভুল করেছে দলটি?
আলিসনের অমার্জনীয় ভুল
এ সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষকদের একজন আলিসন বেকার। কারও কারও কাছে বিশ্বসেরাও। তবে কাল আলিসনের মারাত্মক ভুল রিয়ালকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেয়। ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়েই ছিল লিভারপুল। মাঠের খেলাতেও রিয়ালের ওপর বেশ চাপ প্রয়োগ করে খেলছিল ‘অল রেড’রা।
তবে ৩৬ মিনিটে আলিসনের ভুল ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুযোগ করে দেয় রিয়ালকে। গোলকিপার আলিসনকে ব্যাক পাস দেন ডিফেন্ডার জো গোমেজ। ভিনিসিয়ুসও বলের দখল নিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। আলিসন গোমেজকে ফিরতি পাস দিতে গিয়ে বল মেরে বসেন ভিনিসিয়ুসের গায়ে। বলটা আলিসনের পাশ দিয়ে শূন্যে উড়াল দিয়ে একটা বাউন্স খেয়ে জালে জড়াল! ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষকের এই ভুলে ম্যাচে সমতা ফেরায় রিয়াল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায়নি তারা।
জো গোমেজের ব্যর্থতা
এ ম্যাচে রক্ষণে লিভারপুলের ব্যর্থতার প্রতীক জো গোমেজ। আলিসনের ভুলের আগে রিয়ালের দ্বিতীয় গোলের উৎস ছিলেন এই ডিফেন্ডার। এরপর পর তৃতীয় গোলে অহেতুক রিয়ালকে ফ্রি কিক উপহার দিয়েছেন। আর চতুর্থ গোালটি এসেছে তাঁর গায়ে বল লেগে দিক পাল্টে গিয়ে। রক্ষণে যেন লিভারপুলকে একাই ডোবালেন গোমেজ। এ রাত নিশ্চয়ই খুব দ্রুত তিনি ভুলে যেতে চাইবেন।
মিডফিল্ডে দুর্বলতা
মৌসুমের শুরু থেকেই কথা হচ্ছিল লিভারপুলের মিডফিল্ড দুর্বলতা নিয়ে। সমর্থকদের জোরালো দাবিও ছিল দলে যোগ্য মিডফিল্ডার কেনার। কিন্তু শীতকালীন দলবদলেও মিডফিল্ডে তেমন কাউকে আনেনি লিভারপুল। মিডফিল্ডে লিভারপুলের পিছিয়ে থাকা স্পষ্ট হলো গতকাল রাতের ম্যাচেও।
শুরুতে গতিময় ফুটবল খেললেও মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি তারা। মাঝমাঠে বারবার খেই হারিয়েছে, যা রিয়ালকে সুযোগ করে দিয়েছে দ্রুত আক্রমণে যেতে। ম্যাচে রিয়াল যতবারই আক্রমণে উঠেছে, চাপে পড়েছে লিভারপুল। মূলত, মিডফিল্ড থেকে জোরালো কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়তে না হওয়াতেই বিশেষভাবে ভুগতে হয়েছে লিভারপুলকে।
ভিনিসিয়ুসকে আটকাতে না পারা
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এ সময়ের আলোচিত এক নাম। বর্ণবাদী আক্রমণের ঝড় সামলে ম্যাচের পর ম্যাচে পারফরম্যান্স দেখিয়ে চলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। গতকাল রাতেও আনচেলত্তির মূল হাতিয়ার ছিলেন ভিনি। তাঁকে কোনোভাবেই আটকাতে পারেনি লিভারপুল। ২-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দুর্দান্ত এক গোলে ম্যাচে ফিরে রিয়াল। এরপর সমতা ফেরানো গোলটিতেও আলিসনকে ভুল করতে বাধ্য করেছিলেন ভিনি। ম্যাচের পুরোটা সময় নিজের ছাপ রেখেছেন এই উইঙ্গার, যা লিভারপুলের বিধ্বস্ত হওয়ার বড় কারণ।
লিড হারানো
বড় ম্যাচে শুরুতে পাওয়া মোমেন্টাম ধরে রাখা বেশ জরুরি। ১৪ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে তেমন ছন্দই পেয়েছিল লিভারপুল। তবে সেটি ধরে রাখতে পারেনি তারা। পিছিয়ে পড়া রিয়াল দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচে সমতা ফেরায়। রিয়াল ম্যাচে ফেরার পর মানসিকভাবে বেশ পিছিয়ে পড়ে লিভারপুল। তাদের খেলাতেও দেখা যায় সে প্রভাব। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা দলটিকেই হারতে হয়েছে ৫-২ গোলে।