বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রাথমিক রাউন্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘আই’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। একটিতেও ‘সেরা একাদশ’ বলতে যেটা বোঝায়, তা নামাতে পারেননি কোচ কাবরেরা।
গত সেপ্টেম্বরে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে মালদ্বীপে এএফসি কাপের ম্যাচ খেলতে গিয়ে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তৈরি করেছিলেন জাতীয় দলের সেরা একাদশের তিন ফুটবলার—তপু বর্মণ, আনিসুর রহমান জিকো ও শেখ মোরছালিন। ক্লাব নিষিদ্ধ করায় জাতীয় দলেও তাঁদের জায়গা হয়নি। মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রাথমিক রাউন্ডের ম্যাচ দুটি বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছে তাদের ছাড়াই। মোরছালিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরলেও এখনো নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়নি তপু ও আনিসুরের। এদিকে লেবাননের বিপক্ষে কালকের ম্যাচেও কাবরেরা পাচ্ছেন না দলের দুই সেরা খেলোয়াড় রাকিব হোসেন ও সাদ উদ্দিনকে। ‘দুই হলুদ কার্ডের’ খড়গে পড়েছেন এই দুই ফুটবলার।
মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রাথমিক রাউন্ডে রাকিব–সাদ দুজনই ছিলেন দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। মালের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ১–০ গোলে পিছিয়ে থাকা দলের স্বপ্ন বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন সাদই। ৮৯ মিনিটে মাঠে বদলি হিসেবে নেমে যোগ করার সময়ে করেছিলেন সমতাসূচক গোল। ঢাকার হোম ম্যাচেও সাদ খেলেছিলেন দারুণ। রাকিব প্রথম ম্যাচে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন মালদ্বীপের রক্ষণভাগ। ঢাকার ম্যাচে তো প্রথম গোলটি তাঁরই। এমন দুই ফুটবলারকে লেবাননের বিপক্ষে না পাওয়া বড় ধাক্কাই। অথচ রাকিব ও সাদের দুই হলুদ কার্ডের একটি হচ্ছে গোল করার পর জার্সি খুলে উদ্যাপনের জন্য।
আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মতো ম্যাচে হলুদ কার্ড খাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা কতটা সচেতন থাকেন? যেখানে দুটি হলুদ কার্ড পেলেও তৃতীয় ম্যাচে নিষিদ্ধ হওয়ার নিয়ম, সেখানে নিয়ম জানা থাকা সত্ত্বেও গোলের আনন্দের অতিশয্যে জার্সি খুলে উদ্যাপন নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। জার্সি খোলার ব্যাপারটি তো আছেই, অপ্রয়োজনীয় ফাউল করে কার্ড দেখা, প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি দেওয়ার পুরোনো সেই রোগ থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না কিছুতেই। মালদ্বীপের বিপক্ষে কিংস অ্যারেনার ২–১ গোলে জেতার ম্যাচেও বাজে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেছিলেন সোহেল রানা জুনিয়র। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারেননি তিনি।
অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া জানান, তিনি রাকিব ও সাদকে দুই হলুদ কার্ড নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা দুজনই অধিনায়ককে জানিয়েছেন, দুই হলুদ কার্ড পেলে নিষিদ্ধ হতে হবে, এমন নিয়ম তারা জানতেন না, ‘আমি রাকিব আর সাদকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওরা বলল, দুই হলুদ কার্ডের ব্যাপারটি তারা জানত না। তারা মনে করেছিল ৩ হলুদ কার্ড পেলে নিষিদ্ধ হতে হবে।’
জামাল যা বললেন, এটা বেশ অদ্ভুতই। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুই হলুদ কার্ডের নিষিদ্ধ হতে হয়। এত দিন ধরে জাতীয় দলে খেলেও এই নিয়ম রাকিব আর সাদ জানতেন না! এ ব্যাপারে জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট কি তাদের কিছুই বলেনি? জামাল অবশ্য এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।
এমনিতে যেকোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগেই নিয়মকানুন সম্পর্কে ফুটবলারদের জানানো হয়। সেটা বাংলাদেশ জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট করেছে কি করেনি, সেই প্রশ্ন এখানে থাকছেই। তবে তার চেয়েও বড় কথা, হলুদ কার্ডের আইনটি আন্তর্জাতিক ফুটবলের খুব মৌলিক একটা বিষয়। সে বিষয়ে সাদ কিংবা রাকিবের পরিস্কার ধারণা থাকবে না—এটা মেনে নেওয়া একটু কষ্টকরই।