এলাকাটা ভয়ংকর, ছড়িয়ে–ছিটিয়ে মাদকের আখড়া। মাদকের সঙ্গে যেটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে, সেই অপরাধেরও কমতি ছিল না বুয়েনস এইরেসের ফুয়েরতে আপাচে এলাকাটায়।
বুয়েনস এইরেস, মাদক, অপরাধ—তিনটি বিষয়কে এক করা হচ্ছে—এটা দেখেই হয়তো ধরে নিয়েছেন, আর্জেন্টিনার ফুটবলে উঠতি কোনো তারকার কথা বলা হবে। ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা তথা লাতিন আমেরিকার অনেক ফুটবলারের গল্পই তো এমন!
ঠিকই ধরেছেন, এবারও একজন ফুটবলারের গল্প বলা হবে। সেই ফুটবলার এ মাসের দুটি প্রীতি ম্যাচের জন্য সদ্য ঘোষণা করা আর্জেন্টিনা দলে ডাক পাওয়া থিয়াগো আলমাদা। এটুকু পড়ে যেমনটা কল্পনা করে নিয়েছেন, আলমাদার গল্পটাও সেই কল্পনার মতো করেই এগোবে!
ফুয়েরতে আপাচের এক বস্তিতে বাস করত আলমাদার পরিবার। বাবা–মা দুজনেই একসঙ্গে কাজে যেতেন। আলমাদাকে তাই বেশির ভাগ সময়ই থাকতে হতো দাদা–দাদির কাছে। কিন্তু ছোট্ট আলমাদার জীবনটা দাদা আর দাদির কোলে শুয়ে গল্প শুনে কাটেনি। অভাব যেন কোনোভাবেই সংসারে জেঁকে বসতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে ছোটবেলা থেকেই কাজ শুরু করে দেয় ছোট্ট আলমাদা।
শিশুকালে আলমাদার বড় একটা সময় কেটেছে মানুষের দ্বারে দ্বারে ফল আর সবজি বিক্রি করে। এই কাজের মধ্যে সময় পেলে বেরিয়ে পড়ত বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে। চার বছর বয়সেই আলমাদা খেলতে শুরু করে স্থানীয় ক্লাব সান্তা ক্লারাতে। আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজেরও ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছিল এই ক্লাবেই।
এক বছর সান্তা ক্লারায় খেলার পর আলমাদাকে প্রতিভা হিসেবে চিহ্নিত করে ভেলেজ সার্সফিল্ড। পাঁচ বছর বয়সী আলমাদাকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে দলে নিয়ে নেয় তারা। ২০১৮ সালে ১৭ বছর বয়সে সার্সফিল্ডের যুবদলে জায়গা করে নেন আলমাদা।
গত বছর আলমাদাকে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল আটলান্টা ইউনাইটেডের কাছে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে বিক্রি করে দেয় সার্সফিল্ড।
সেখানে তাঁর শুরুটা হয়েছে ভালো। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার আলমাদা এরই মধ্যে ৪টি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১০ গোল। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা আলমাদা এরই মধ্যে দেশের হয়ে অলিম্পিক গেমসে খেলেছেন। আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের ধারণা, এ দুটি প্রীতি ম্যাচে ভালো করলে বিশ্বকাপের জন্যও বিবেচনা করা হতে পারে আলমাদাকে।
আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অবশ্য আগেই হয়েছে আলমাদার। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিদের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ হোর্হে সাম্পাওলি মেসিদের অনুশীলনের সঙ্গী হিসেবে আরও অনেকের সঙ্গে রেখেছিলেন আলমাদাকে।
সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘যারা ফুটবল খেলে, তাদের সবারই এ রকম স্বপ্ন থাকে যে দলের ভেতরে থেকে বিশ্বকাপ দেখবে। দলের অনুশীলনসঙ্গী হিসেবে তালিকায় নিজের নাম দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।’