বাফুফে ভবন।
বাফুফে ভবন।

বাফুফের সভাপতি হতে চাওয়া কে এই মিজানুর

২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন তরফদার রহুল আমিন ও তাবিথ আউয়াল। গতকাল মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দিনে দুজনের কেউই মনোয়নপত্র কেনেননি। তবে আজ দ্বিতীয় দিনে তাবিথ আউয়াল কিনেছেন। দুপুরে বাফুফে ভবনে এসে তাঁর পক্ষে ফরম সংগ্রহ করেন নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত ভূঁইয়া শাহীন। তাবিথ এই ক্লাবের সভাপতি।

সভাপতি পদে এদিন চমক দেখিয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছেন এ এফ এম মিজানুর রহমান চৌধুরী নামের দিনাজপুরের এক ফুটবল সংগঠক ও কোচ; ফুটবল অঙ্গনে যিনি একেবারেই অচেনা। ৬৮ বছর বয়সী মিজানুর এখন দিনাজপুরেই আছেন। বাফুফে ভবনে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে এক লাখ টাকায় ফরম কিনিয়েছেন তিনি।

কেন হঠাৎ বাফুফে সভাপতির মতো পদে প্রার্থী হওয়ার আশায় মনোনয়নপত্র কেনা? মিজানুর ফোনে বারবারই প্রথম আলোকে বলেছেন, ফুটবলের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। এই অবস্থার উন্নতি চান বলেই সভাপতি হওয়ার আগ্রহ নিয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। নিজেকে তিনি পরিচয় দেন দিনাজপুরের ফুটবল-অন্তপ্রাণ হিসেবে, ‘আমাকে দিনাজপুরের ফুটবল কারিগর বলতে পারেন। লোকে আমাকে ফুটবল-পাগলও বলে। ভাত একবেলা না খেলেও হয়, কিন্তু ফুটবলে কোচিং না করলে আমার দিন কাটে না।’

১৯৮৬ সাল থেকে ফুটবল কোচিং করান। জাতীয় দলে খেলা ফুটবলার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, বর্তমান জাতীয় দলে মজিবুর রহমান জনিও তাঁর ছাত্র বলে জানান মিজানুর। সঙ্গে যোগ করেন, ‘দিনাজপুরে একসময় ৪টি ক্লাব চালাতাম। ব্যক্তিগতভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছি ফুটবলের পেছনে। ধান বিক্রির টাকা ফুটবলের পেছনে দিয়েছি। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না কারও কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছি।’

মিজানুর জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছেন দিনাজপুর জেলা দলের হয়ে। একসময় ঢাকায় ওয়ারী ক্লাবে ট্রায়ালে এসেছিলেন। এক–দেড় মাস থেকে চলে যান। আশির দশকের শুরুতে ব্যাংকে চাকরি নেন। পাশাপাশি ফুটবল কোচিং ও সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যান।

ফুটবল অঙ্গনে অনেকের ধারণা, তরফদার রহুল আমিন শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে নির্বাচন না–ও করতে পারেন। ফলে তাবিথ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারেন। তাবিথ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না জিততে পারেন, সে জন্য তাঁর বিপক্ষে অচেনা কাউকে দাঁড় করানো নাকি আলোচনায় আসতে মিজানুর সভাপতি পদে ফরম কিনেছেন? এমন কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

মিজানুর অবশ্য তাঁকে ঘিরে কৌতূহলের উত্তরটা এভাবে দিয়েছেন, ‘কারও কথায় আমি মনোনয়নপত্র কিনিনি। ফুটবল আমার নেশা। নেশার টানেই সভাপতি পদে ফরম কিনেছি। ফরম জমা দিয়ে প্রার্থী হব, আশা করি।’ মনোনয়নপত্র (১৪-১৫ অক্টোবর) জমা দেওয়া নিয়ে তিনি অবশ্য চিন্তায় আছেন। মনোনয়নপত্রে একজন কাউন্সিলরের প্রস্তাবনা আর আরেকজন কাউন্সিলরের (ভোটার) সমর্থন লাগে। সেই দুজন এখনো তিনি জোগাড় করে উঠতে পারেননি। তবে প্রার্থী হয়ে জয়ী হলে ফুটবলের র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি আনার কথা বলছেন জোর দিয়েই।

৫০ বছর ধরে ফুটবলে আছেন জানিয়ে মিজানুর নিজেকে সভাপতি পদে যোগ্য প্রার্থী মনে করেন, ‘আমি খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জোর করে আমাকে ব্যাংকে ঢোকানো হয়েছিল। ৩১ বছর চাকরি করেছি। ফুটবলের টানে ৭ বছর বাকি থাকতেই ২০১২ সালে চাকরি ছাড়ি। ব্যাংকের আর্থিক সুযোগ–সুবিধা তিন ভাগের এক ভাগও পাইনি। ফুটবলের টানে, কোচিংয়ের টানে সেসব আমি ত্যাগ করেছি। ফুটবলে আমি নিজেকে যোগ্য সভাপতি প্রার্থী মনে করি।’

বাফুফে নির্বাচনে গতকাল প্রথম দিনে ২৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। সিনিয়র সহসভাপতি পদে ফরম নিয়েছেন বাফুফের সহসভাপতি ইমরুল হাসান। সহসভাপতি পদে নিয়েছেন সাবেক ফুটবলার ইকবাল হোসেন, দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠান রেডিয়্যান্টের চেয়ারম্যান, দেশের প্রথম বেসরকারি ফুটবল একাডেমি শামসুল হুদা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। আজ সভাপতি পদে দুটি ছাড়া সদস্য পদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন শফিকুল আজম ভূঁইয়া, শরিফ উদ্দিন ও মঞ্জুরুল করিম। মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিন শনিবার।