কাতার বিশ্বকাপের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, ফুটবল আসলে কত মিনিটের খেলা? বিশ্বসেরার মঞ্চে শুরু থেকেই ৯০ মিনিটের পর ৯-১০ মিনিট করে সময় যোগ করা হচ্ছিল, যা নিয়ে তখনই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন অনেকে।
তবে বিশ্বকাপ প্রসঙ্গকে দূরে সরিয়ে রাখলেও ফুটবল যে এখন আর ৯০ মিনিটের খেলা নয়, তা বলাই যায়। অন্তত পরিসংখ্যান সে কথাই বলছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, ফুটবল আসলে কত মিনিটের খেলা। সেটি কি আসলেই ৯০ মিনিটের চেয়ে বেশি নাকি কম?
মাঠে খেলা শুরুর পর যে সময় নষ্ট হয় এবং যে সময়টুকু খেলা হয় তা নিয়ে বিশ্বকাপের পর নতুন করে আলোচনাও শুরু হয়েছে। যেখানে নতুন করে হাওয়া দিচ্ছে, গত সপ্তাহে আর্সেনাল-নিউক্যাসল ম্যাচ। সেই ম্যাচে আর্সেনাল–ভক্তরা নিউক্যাসলের বিরুদ্ধে সময় নষ্ট করার অভিযোগ এনেছিল।
দুই অর্ধে যোগ করা সময় মিলিয়ে সেদিন সব মিলিয়ে খেলা হয়েছিল ৯৮ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। যা কিনা ২০২২-২৩ মৌসুমে গড় সময়ের চেয়ে বেশি (৯৮ মিনিট ৭ সেকেন্ড)। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সেই ম্যাচে এ সময়ের ভেতর বল খেলা হয়েছে ৫২ শতাংশ সময় (৫১ মিনিট ২৩ সেকেন্ড), যা কিনা প্রিমিয়ার লিগে ২০২২-২৩ মৌসুমের গড় বল খেলার মধ্যে থাকার সময়ের (৫৫.৯ শতাংশ/ ৫৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড) চেয়ে কম।
বল খেলার মধ্যে থাকা বলতে মূলত যে সময়টুকুতে খেলাটা চলছিল। গোল উদ্যাপন, কর্নার নেওয়ার জন্য বিরতি, ভিএআরের সাহায্য নেওয়া, থ্রো-ইন, খেলোয়াড়ের আঘাতে কারণে ম্যাচ বন্ধ থাকাসহ বিভিন্ন কারণে খেলা বন্ধ থাকার সময়কে বাদ দিয়েই এই হিসাবটা করা হয়েছে।
তাই সেদিন আর্সেনালের সমর্থকদের সময় নষ্টের যে দাবি, তা একেবারে অমূলক ছিল না। যদিও সময় নষ্ট করা কিংবা খেলার গতিকে বাধাগ্রস্ত করা ফুটবলে একেবারে নতুন কিছু নয়। আর এমন নয় যে, সেই ম্যাচটিই প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে খেলা সবচেয়ে কম সময় খেলা ম্যাচ। তা কিন্তু নয়। চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে এই ম্যাচের চেয়ে খেলার হার কম ছিল আরও ৩৬টি ম্যাচে।
এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩টি ম্যাচে যোগ করা সময়সহ ৪৫ শতাংশের কম সময় বল খেলার মধ্যে ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনটি ম্যাচেই কিন্তু দুই দলের একটি ছিল লিডস ইউনাইটেড। এই তিনটি ম্যাচের একটি ছিল ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে এলান রোডে ২-২ গোলে ড্র করা ম্যাচটি। যে ম্যাচে বল খেলার মধ্যে ছিল ৪৩.৬ শতাংশ। এর আগে অক্টোবরে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে লিডসের হারা ম্যাচে বল খেলার মধ্যে ছিল মাত্র ৪৩.৪ শতাংশ। যা ছিল এই মৌসুমে সর্বনিম্ন।
প্রিমিয়ার লিগে সময়ের পার্থক্যকে বিবেচনায় নিলে এ মৌসুমে ৪৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ড (অ্যাস্টন ভিলা ৪:০ ব্রেন্টফোর্ড) থেকে ৬৮ মিনিট ৭ সেকেন্ড (ম্যানচেস্টার সিটি ৪:০ সাউদাম্পটন) পর্যন্ত খেলা হয়েছে। চোখ কপালে তোলার মতোই পার্থক্য বলতে হয়— প্রায় ২৫ মিনিটের মতো। আর সিটির জেতা সেই ম্যাচ ছিল শতাংশের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সময় বল খেলার মধ্যে থাকা ম্যাচ (৭১.৬ শতাংশ)।
এমন নয় যে, শুধু প্রিমিয়ার লিগেই এমনটা দেখা যায়। বরং ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে যেসব লিগে দর্শকেরা বেশি সময় ধরে ম্যাচ উপভোগ করার সময় পান, সেই তালিকায় প্রিমিয়ার লিগের অবস্থান বেশ ওপরের দিকেই।
ইউরোপের শীর্ষ ৮ লিগের মাঝে ২০২২-২৩ মৌসুমে শুধু ডাচ লিগ (৫৯.১ শতাংশ) ও ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে (৫৭.৪ শতাংশ) প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে বেশি সময় খেলা হয়েছে। আর সবচেয়ে কম সময় বল খেলার মধ্যে ছিল স্কটিশ লিগে (৫২.২ শতাংশ)।
এ মৌসুমে স্কটিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচই এক ঘণ্টার বেশি সময় খেলা হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় খেলা ম্যাচ ছিল ডান্ডি ইউনাইটেডের বিপক্ষে রেঞ্জার্সের ২-১ গোলে জেতা ম্যাচটি। তবে সেপ্টেম্বরের সেই ম্যাচও এক ঘণ্টার চেয়ে দুই সেকেন্ড কম সময় বল খেলার মধ্যে ছিল।
এর ভেতর ২০২২ সালের বিশ্বকাপে বল খেলার মধ্যে ছিল ৫৭.৩ শতাংশ। যেখানে ম্যাচে যোগ করা সময়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। ফিফার রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান পিয়েরলুইগি কলিনা বলেছেন, ‘আপনি যদি বেশি সক্রিয় সময় দেখতে চান, তবে আপনাকে এ ধরনের অতিরিক্ত সময়ের দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিন গোল করা ম্যাচের কথা একবার ভাবুন। উদ্যাপনের জন্য সাধারণত এক কিংবা দেড় মিনিট সময় চলে যায়। তাহলে সব মিলিয়ে তিনটি গোল উদ্যাপনে সময় চলে যায় ৫ থেকে ৬ মিনিট।’
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে কলিনার কথার সত্যতা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত সময় বাদ দিলে কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলা হয়েছে গড়ে ১০০ মিনিট ২৩ সেকেন্ড। যেখানে বল খেলার মধ্যে ছিল ৫৭.৩ শতাংশ, যা সময়ের হিসাবে ৫৮ মিনিট ৪ সেকেন্ড।
তবে প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত যে সময়টুকু বল খেলার মধ্যে ছিল সেটা শেষ ১১ মৌসুমের মধ্যে বেশ হ্রাস পেয়েছে। এ মৌসুমে বল খেলায় ছিল ৫৪ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড, যা কিনা সবচেয়ে কম। গত মৌসুমে এর চেয়ে ৮ সেকেন্ড বেশি সময় বল খেলায় ছিল। আর ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড কম। চূড়ায় ওঠার পথে সেবার খেলা হয়েছিল ৫৬ সেকেন্ড ৫৩ মিনিট।