বাংলাদেশ কি সেমিফাইনালে যেতে পারবে
বাংলাদেশ কি সেমিফাইনালে যেতে পারবে

প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ কি সেমিতে খেলতে পারবে, ইতিহাস যা বলছে

বাংলাদেশ কি পারবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলতে

কাল নিজেদের গ্রুপের প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে ২–০ গোলে হেরে যাওয়ার পর শেষ চারে খেলার সম্ভাবনা কতটুকু বাংলাদেশের? যদিও ২০০৯ সালের পর গ্রুপপর্বের বাধা বাংলাদেশ পেরোতে পারেনি কখনোই। এখন লেবাননের কাছে হারের পর সর্বশেষ ১৫ বছরের ইতিহাসটা বদলে ফেলার সুযোগ কতটা। ২৫ জুন মালদ্বীপ আর ২৮ জুন ভুটানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য বাঁচা–মরারই লড়াই। পরীক্ষাটা কঠিন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে মালদ্বীপ যেহেতু বাংলাদেশের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষই।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের রেকর্ড খুব সমৃদ্ধ নয়। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে (১৯৯৩ সালে প্রথম সাফে বাংলাদেশ অংশ নেয়নি) নিজেদের ১২টি প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৫টিতে। ড্র করেছে ৪টিতে। অতীতে নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কাছে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার ইতিহাস আছে বাংলাদেশের। সূচনা ম্যাচে যে পাঁচটি জয় এসেছে, তার তিনটি ভুটানের বিপক্ষে। বাকি দুটি ম্যাচ নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

মালদ্বীপের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য বাঁচা–মরারই

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর সাফে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার ঘটনা আছে কয়টি? ১৯৯৫ সালে অংশ নেওয়া প্রথম সাফের (তখন নাম ছিল সার্ক গোল্ডকাপ) গ্রুপের প্রথম ম্যাচে কলম্বোয় পাকিস্তানের কাছে ১–০ গোলে হেরে যাওয়ার পর সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। এখনো পর্যন্ত সেটিই প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার একমাত্র ঘটনা। শুরুর ম্যাচে ড্র করে সেমিতে খেলার ঘটনাও একটি—সেটি ১৯৯৯ সালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত সাফে। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেও সেমিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে যে আসরে বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছিল, সেবার গ্রুপের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ১–০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে করাচির সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ৩–০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে উঠেছিল সেবারও। এ ছাড়া ২০০৯ সালে সর্বশেষ সেমিফাইনালে খেলার আসরেও ভুটানকে প্রথম ম্যাচে ৪–১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বাজে ‘প্রথম ম্যাচ’ বাংলাদেশ খেলেছিল ২০১৫ সালে। কেরালায় অনুষ্ঠিত সেই সাফের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান ৪–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০১৩ সাফেও কাঠমান্ডুতে স্বাগতিক নেপালের কাছে ২–০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত সাফে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র ছাড়া আরও দুটি টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। ১৯৯৭ সালে কাঠমান্ডু ও ২০০৮ সালে কলম্বোয়। প্রথমটিতে মালদ্বীপের সঙ্গে, পরেরটিকে ভুটানের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে বাংলাদেশ। দুবারই স্কোরলাইন ছিল ১–১। ২০২১ সালে সর্বশেষ সাফে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর অবশ্য সেমিফাইনাল ছিল না। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির টুর্নামেন্টে শীর্ষ দুই দল খেলেছিল ফাইনাল। নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের সঙ্গে ড্র করে ফাইনালে খেলা হয়নি বাংলাদেশের, টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল চতুর্থ স্থানে থেকে।

জামাল ভূঁইয়ারা কি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে

গতকাল লেবাননের সঙ্গে শেষ ১৬ মিনিটের ‘ঝড়ে’ হেরে গেছে বাংলাদেশ। যদিও ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে গোলের নিশ্চিত সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচটি যদি বাংলাদেশ জিততে বা ড্র করতে পারত, তাহলে মালদ্বীপের বিপক্ষে ২৫ জুনের ম্যাচটি কিছুটা নির্ভার হয়ে খেলা যেত। কিন্তু এখন এটি পরিণত হয়েছে বাঁচা–মরার ম্যাচে। মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩৮ বছর আগে ঢাকা সাফ গেমসে ৮–০ গোলের জয় নিয়ে অনেক চর্চা হলেও ভারত মহাসাগরের এই ছোট্ট দেশটির সঙ্গে ফুটবল মাঠে বাংলাদেশের রেকর্ড গত ২০ বছরে মোটেও ভালো নয়। ২০০৩ সালের ঢাকা সাফের গ্রুপপর্বে মালদ্বীপকে ১–০ গোলে হারানোর পর তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। ২০০৩ সালের ফাইনালে মালদ্বীপকেই টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে সেই ম্যাচ ছিল ১–১ গোলে অমীমাংসিত।

মাঝে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশ গ্রুপপর্বের ম্যাচে হেরেছে ২০১১ (৩–১) ও ২০১৫ (৩–১) সালে। ২০২১ সালের সর্বশেষ সাফে মালদ্বীপের কাছে বাংলাদেশ হেরেছিল ২–০ গোলে। এখন দেখা যাক, প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ এবার নিজেদের ভাগ্যটা কেমন করে লিখতে পারে!