ফের জাদু দেখিয়েছেন মেসি
ফের জাদু দেখিয়েছেন মেসি

মেসির দ্রুততম গোলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার দারুণ জয়

অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ। ম্যাচের আগে নিজেদের সেই লক্ষ্যের কথা ঘটা করে বলেছেও তারা। কিন্তু কিসের আর প্রতিশোধ! খেলা শুরুর দেড় মিনিট পার হওয়ার আগেই ম্যাচের ভাগ্য লিখে দেন লিওনেল মেসি। ৭৯ সেকেন্ডেই অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণকে বিবশ বানিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এটি মেসির ক্যারিয়ারে দ্রুততম গোল। শুধু গোল করেই নয়, ড্রিবলিংয়ের চিরচেনা জাদুতেও এদিন মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এই মহাতারকা। মেসির জাদুকরি দিনে আর্জেন্টিনার ২-০ গোলের জয়ে পরের গোলটি করেন গেরমান পেৎসেয়া।

বেইজিংয়ের ওয়ার্কাস স্টেডিয়ামে মেসিদের অবশ্য জার্সিতে নাম দেখে চেনার উপায় ছিল না। সবার জার্সিতেই নাম লেখা ছিল চীনা ভাষায়। চিনতে হচ্ছিল জার্সি নম্বরে। মেসিকে চিনতে অবশ্য নম্বর, নাম না হলেও চলে, পায়ের জাদুই যে যথেষ্ট!

সেই বাঁ পায়ের জাদুতে আর্জেন্টিনার এগিয়ে যেতে সময় লাগে মাত্র ২ মিনিট। অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার ম্যাথিউ লেকির ভুলে বল পান এনজো ফার্নান্দেজ। চেলসি তারকা বল বাড়ান মেসিকে উদ্দেশ্য করে। ডি-বক্সের একটু বাইরে বল পেয়ে ট্রেডমার্কে বাঁকানো শটে বল জালে জড়ান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। মেসির এই গোলেই আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। শুরুতে এগিয়ে গিয়ে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। পরের কিছু সময় অস্ট্রেলিয়াকে কোনো সুযোগ না দিয়ে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

মেসির গোল উদ্‌যাপন

এ সময় অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণকে রীতিমতো তটস্থ করে রাখেন মেসিরা। ৫ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার প্রচেষ্টা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৯ মিনিটে মেসির শট সাইড নেটে লাগে। অস্ট্রেলিয়া দু-একবার আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারদের প্রেসিংয়ে আক্রমণগুলোকে পরিণতি দিতে পারছিল না তারা।

অন্যদিকে দ্বিতীয় গোল না পেলেও মাঝমাঠের দখল নিয়ে দারুণ পাসিংয়ে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখে আর্জেন্টিনা। একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে একাধিকবার কাছাকাছি গিয়েও নিরাশ হয় তারা। ম্যাচের প্রথম ২৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার দখলে বল ছিল ৭৮ শতাংশ, বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার দখলে ছিল ২১ শতাংশ।

২৮ মিনিটে অবশ্য দারুণ একটি সুযোগ এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার সামনে। জর্দান বসের কাছ থেকে ডি-বক্সে বল পেয়ে কাছাকাছি জায়গা থেকে শট নেন মিচেল ডিউক। প্রথম প্রচেষ্টায় এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ঠেকানোর পরও বল ফিরে আসে পোস্টে লেগে। এরপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ফের দলকে রক্ষা করেন মার্তিনেজ। এরপর আরও উজ্জীবিত হয়ে লড়াই চালিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

গোলের পর মেসি–মারিয়ারা

এ সময় একাধিকবার আর্জেন্টাইন রক্ষণে ভীতি সৃষ্টি করলেও গোল নামক সোনার হরিণটি অবশ্য পাওয়া হয়নি তাদের। ৩৮ মিনিটে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করার দারুণ সুযোগ এসেছিল মেসির সামনে। রদ্রিগো দি পলের থ্রো পাস ধরে দারুণভাবে মেসি ঢুকেও পড়েছিলেন প্রতিপক্ষের রক্ষণে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষককে একা পেয়েও পোস্টের ওপর দিয়ে বল বাইরে পাঠান মেসি। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

বিরতির পর ৪৯ মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোলকিপারের ডাবল সেইভে সে যাত্রায় বেঁচে যায় সকারুরা। ৫৩ মিনিটে ফের কাছাকাছি গিয়ে গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। তবে ৬৮ মিনিটে ভুল করেননি গেরমান পেৎসেয়া। দি পলের ক্রসে দারুণ এক হেডে বলকে জালের ঠিকানা দেখান পেৎসেয়া। ৭১ মিনিটে হুলিয়ান আলভারেজের শট অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেওয়ায় তৃতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার।

৭৪ মিনিটে অভিষেক হয় আলেসান্দ্রো গারনাচোর। নিকোলাস গনসালেসের পরিবর্তে মাঠে নামেন এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তরুণ। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে যা দেখা গেল তার জন্যই ছিল যত অপেক্ষা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য গোটা ওয়ার্কাস স্টেডিয়ামকে যেন মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন মেসি।

ড্রিবলিং জাদুতে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের বোকা বানিয়ে মাঝমাঠ থেকে বল বাড়ান মেসি। যদিও সেই আক্রমণ শেষ পর্যন্ত গোলে পরিণতি পায়নি। তবে স্টেডিয়ামে আসা দর্শকেরা ঠিকই পয়সা উশুল করেই মাঠ ছেড়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা পরের ম্যাচ খেলবে ১৯ জুন।