রেকর্ড অর্থে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
রেকর্ড অর্থে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

এশিয়ান ফুটবলে ‘রোনালদো–ইফেক্ট’

শেষবার এএফসি কাপে বাংলাদেশি ক্লাবের প্রতিপক্ষ কে ছিল, বলতে পারবেন?

চট করে উত্তরটি দেওয়া কঠিন, যদি না ঘরোয়া ফুটবলের নিবিড় দর্শক হন। কিন্তু আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব যদি এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে উঠে যায়, পাকেচক্রে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে যায় আল নাসরকে, কী দৃশ্যপট তৈরি হবে অনুমান করতে পারেন? প্রতিপক্ষ তো বটেই, ওই দলে কারা কারা খেলেন, সেই ঠিকুজিও গেঁথে যাবে দর্শকের মনে।

বাংলাদেশে খেলতে আসবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো—এই এক সম্ভাবনায় দেশের ফুটবল দর্শকেরা যে একঝটকায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠবেন, সে কথা ঝুঁকি না নিয়েই বলে দেওয়া যায়। বছরের পর বছর দূর থেকে দেখা তারা হঠাৎ যখন চোখের সামনে, কাছ থেকে দেখার সুযোগ কে মিস করতে চাইবে? ম্যাচের সূচি চূড়ান্ত থেকে শুরু করে খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাই এই একটি ম্যাচ ঘিরে বুঁদে থাকবেন ফুটবল দর্শক। টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি, ক্লাবের বিপুল প্রচার ও অর্থকড়ি প্রাপ্তি—এসব তো আছেই।

শুধু বাংলাদেশে নয়, রোনালদোকে নিজেদের মাঠে খেলতে দেখার অপেক্ষায় ভারত আর চীনের ফুটবল দর্শকেরাও। আইএসএল আর চাইনিজ সুপার লিগের দর্শকেরা হিসাব কষতে শুরু করেছেন, কীভাবে কী করলে রোনালদোকে খেলতে দেখতে পারবেন তাঁরা।

শুধু বাংলাদেশে নয়, রোনালদোকে নিজেদের মাঠে খেলতে দেখার অপেক্ষায় ভারত আর চীনের ফুটবল দর্শকেরাও। আইএসএল আর চাইনিজ সুপার লিগের দর্শকেরা হিসাব কষতে শুরু করেছেন, কীভাবে কী করলে রোনালদোকে খেলতে দেখতে পারবেন তাঁরা।

ইংরেজিতে এসব পরিস্থিতি বোঝাতে একটা শব্দবন্ধ আছে। এ ক্ষেত্রে শব্দটা ‘রোনালদো-ইফেক্ট’। আল নাসরে যোগ দিয়ে এরই মধ্যে সৌদি আরবের ফুটবলে বড়সড় ‘কম্পন’ সৃষ্টি করে ফেলেছেন রোনালদো। একদিন আগেও যে ক্লাবের ইনস্টাগ্রাম অনুসারী ছিল ৮ লাখ, চুক্তির খবর প্রকাশের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে সেটি পেরিয়ে যায় কোটির ঘর। যে লিগের নামডাকই ছিল না ইউরোপে, সেই লিগের খেলা দেখার ওয়েবলিংক আর সম্প্রচার চ্যানেলের নাম খুঁজতে শুরু করেন অনেকে। দুই দশক ইউরোপ মাতানো পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে সোজা অখ্যাত সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দেবেন, এমনটা যে ভাবনারও অতীত ছিল।

অভাবনীয় সেই ব্যাপারটিই বাস্তব করে ২০২২ সালের শেষ সপ্তাহে আল নাসরে যোগ দেওয়ার খবর দেন রোনালদো। রেকর্ড গড়া অর্থে আড়াই বছরের চুক্তি রিয়াদের ক্লাবটিতে যোগ দেন ৩ জানুয়ারি। ৩৭ বছর বয়সী পর্তুগিজ তারকাকে অনুসরণ করে ফুটবল-বিশ্বের দৃষ্টি তাক হয় রিয়াদে। সেদিন রোনালদোর ‘পরিচিতিমূলক’ সংবাদ সম্মেলনে হাজির ছিল সৌদি ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের বিপুল উপস্থিতি, যা দেখে কোচ রুডি গার্সিয়া রাখঢাক না রেখেই বলেছিলেন, অন্য সময় তো তিন-চারজনের বেশি সাংবাদিক দেখি না। ফরাসি এই কোচ পরে রোনালদোর সৌদি আরবে আগমনের সঙ্গে পেলের নিউইয়র্ক কসমসে যোগদানের তুলনা টানেন। কিংবদন্তি পেলে তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী হিসেবে ১৯৭৫ সালে কসমসে যোগ দিয়েছিলেন।

যে ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবলের বিস্তৃতি ও তরুণদের মধ্যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। অনেকে তো এমনও মনে করেন, চার দশক বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্র যে ১৯৯০ বিশ্বকাপে ফিরল, এর পর ’৯৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন ও ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি আসরের মূল পর্বে জায়গা করে, তার পেছনে পেলের যুক্তরাষ্ট্র গমনের অন্যতম প্রভাব ছিল। রুডি গার্সিয়ার আশা, সৌদির ফুটবল উন্নয়নে এমন কিছুর সূচনা করবেন রোনালদোও। বিশেষ করে ২০৩০ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় এক ধাপ সূচিত হবে এতে।

শুধু সৌদিই নয়, রোনালদোর আগমনে আশাবাদী যেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনও (এএফসি)। বৈশ্বিক অঙ্গনে এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের প্রচার-প্রসারের সম্ভাবনায় এএফসি টুইট করেছিল, ‘অবশেষে তিনি এখানেই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, এশিয়ান ফুটবলে আপনাকে স্বাগত।’ এদিকে আরব আমিরাতের অ্যারাবিয়ান বিজনেস তো সৌদি আরবে রোনালদোর জন্য বিশেষায়িত ‘রোনালদো-প্রতিবেদক’ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে।

অনেকের কাছে বিষয়টি বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, তবে গোটা বিশ্বের ৬ শতাংশের বেশি মানুষ (৫৩ কোটি ৫০ লাখ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁর অনুসারী, তার প্রভাব কি এমনই হওয়ার কথা নয়?