গিয়ের্মো ওচোয়া মেক্সিকোর রাস্তায় বের হলে লোকজন এখনো তাঁকে ঘিরে ধরে। জানতে চায়, ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে পোস্টের নিচে রক্তমাংসের মানুষ থেকে তাঁর ‘অতিমানব’ হয়ে ওঠার রহস্য।
তবে এর চেয়েও বড় রহস্য আছে। যে লোকটাকে নিয়ে ক্লাব ফুটবলে কোনো আলোচনা নেই, সেই লোকটাই বিশ্বকাপ এলে পোস্টের নিচে কীভাবে ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে ওঠেন! উত্তর আজও মেলেনি।
ওচোয়া অবসর নেওয়ার পর হয়তো মিলতে পারে। নাতিপুতিদের সঙ্গে গল্পের আসরে হয়তো বলবেন, ফেলে আসা সেসব সোনালি দিনের কথা। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার একহারা গড়নের একটি মানুষ তে–কাঠির নিচে কীভাবে শাওলিন সকার–এর সেই গোলকিপারের মতো হয়ে উঠেছিলেন—ওচোয়া সেসব গল্প বলতে পারেন। আর মেক্সিকোর সমর্থক?
ভবিষ্যতে তাঁরা এমনই কোনো বিশ্বকাপে হয়তো নিজেদের গোলকিপারের কোনো ভুল দেখে বলে উঠবেন—একসময় আমাদের এক ওচোয়া ছিলেন!
ছিলেন—শব্দটা ধরেই একটি বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া যায়। বিশ্বকাপে আজই ওচোয়াকে শেষবারের মতো দেখা যেতে পারে! লুসাইলে ‘সি’ গ্রুপ থেকে নিজেদের শেষ ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে মেক্সিকো। জিতলে শেষ ষোলোয় ওঠার পথ খুলবে, যদিও সেখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে, তবে হারলেই বিদায়।
আরও একটি বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া উচিত। ওচোয়ার বয়স ৩৭ বছর। ২০২৬ সালে কানাডা–যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে তাঁর বয়স হবে ৪১ বছর। মেক্সিকোর পাঁড় ভক্তও নিশ্চয়ই তাঁকে সে বিশ্বকাপে দেখার আশা করেন না। ঝুঁকিটা তাই আছে।
ওচোয়াকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখতে মেক্সিকোকে আজ জিততে হবে। এত দিন ওচোয়া মেক্সিকোকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখতে পোস্টের ডানে–বাঁয়ে ঝাঁপিয়েছেন। ২০১৪ নয়, ২০১৮–ও নয়, এই তো কিছুদিন আগে এবারের বিশ্বকাপেই পোল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোকে পয়েন্ট এনে দিয়েছেন ওচোয়া। রবার্ট লেভানডফস্কির পেনাল্টি তিনি না ঠেকালে মেক্সিকো কি বিশ্বকাপের এই পর্যন্ত টিকে থাকতে পারত? না। তাই ওচোয়াকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখতে সৌদির রক্ষণে আজ হিরভিং লোজানো–অ্যালেক্সিস ভেগাদের ঝাঁপ দেওয়ার পালা।
মেসিকে ঠেকাতে চেয়েছিলেন ওচোয়া। পারেননি, ২–০ গোলের জয়ে জিতেছে আর্জেন্টিনা। তবে ৮ বছর আগের সেই বিশ্বকাপে নেইমারকে থামিয়েছিলেন। সে ম্যাচে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ওচোয়ার ৬টি সেভ এবং তার মধ্যে নেইমারের একটি হেড—যেখান থেকে গোল না হওয়াটাই বিস্ময়—সেটাও ঠেকিয়েছিলেন।
ম্যাচ শেষে ওচোয়া যেমন নেইমারের অভিনন্দন পেয়েছিলেন, তেমনি পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকানোর পর লেভার অভিনন্দনও পেয়েছেন। বিশ্বের বাঘা বাঘা ফরোয়ার্ড যখন এভাবে নতমস্তকে কুর্নিশ জানায়, তখন ওচোয়ার কেমন লাগে? ওচোয়ার এই কথা থেকে উত্তরটা বুঝে নেওয়া যায়, ‘বিশ্বব্যাপী সবাই আমাকে চেনায় কৃতজ্ঞবোধ করি। এটার অর্থ হলো আমি ভালো পারফর্ম করেছি।’
২০০৬ বিশ্বকাপে দলের তৃতীয় পছন্দের গোলকিপার ছিলেন। পরের বিশ্বকাপে আরেকটু উন্নতি হলো। পুরো মৌসুম দুর্দান্ত খেলেও দলের ব্যাকআপ গোলকিপার।
কিন্তু চার বছর পর ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে সেই যে ওচোয়ার ‘লিজেন্ড’ হওয়া শুরু হলো, রাশিয়া ঘুরে তা এখন কাতারে উপসংহার লেখার পথে। ঝাঁকড়া চুল, মাথায় হেডব্যান্ড আর চকচকে চোখের এই মানুষটিকে বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই আরও কিছুদিন দেখতে চান ফুটবলপ্রেমীরা।
পোস্টের নিচে ওচোয়া নিজের কাজটা তো করবেনই, তবে জিততে হলে গোলও করতে হবে। লোজানোরা সে কাজটি করতে পারলে এবং পোল্যান্ড–আর্জেন্টিনা ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে এলে ওচোয়াকে বিশ্বকাপে আরও কিছুদিন দেখা যাবে। আরও নতুন সব গল্পেরও জন্ম হবে হয়তো।