অ্যানফিল্ডে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে লিভারপুল
অ্যানফিল্ডে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে লিভারপুল

মনে করেন অঁরি

লিভারপুলের কিছু খেলোয়াড়ের দলে থাকার যোগ্যতা নেই

কার্লো আনচেলত্তি জানেন, লিভারপুলের বিপক্ষে ৩ গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও কোনো কিছুর নিশ্চয়তা নেই। সেই যে ২০০৫ সালের ‘মিরাকল অব ইস্তাম্বুল’, এসি মিলানের কোচ হিসেবে লিভারপুলের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিলেন আনচেলত্তি। কিন্তু ম্যাচে বিরতির পর ৩ গোল পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়ানোর ঐতিহাসিক এক নজির গড়ে পরে টাইব্রেকারে ফাইনাল জিতে নেয় লিভারপুলই। সেই স্মৃতিটা আনচেলত্তি ভুলে যাননি বলেই সম্ভবত কাল রাতে লিভারপুলের বিপক্ষে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ৫-২ গোলে জয়ের পর তেমন উচ্চবাচ্য করেননি রিয়াল মাদ্রিদের এই কোচ। কে জানে, ফিরতি লেগে যদি ‘মিরাকল অব ইস্তাম্বুল’ ফিরে আসে!

কিন্তু ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের খেলা দেখে ফিরতি লেগে তেমন কিছু দেখার আশা করছেন না লিভারপুলের সাবেকরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’-এ কাল রাতে ম্যাচের প্রতিবেদনে ডেভিড হেটনার তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এই খেলা (টাই) এখানেই শেষ, এর সঙ্গে লিভারপুলের মৌসুমও।’ আর্সেনাল কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি তো কিছু খেলোয়াড়ের আর লিভারপুলে খেলার যোগ্যতাই নেই বলে মন্তব্য করেছেন।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২২ ম্যাচ শেষে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের আটে লিভারপুল। শীর্ষে থাকা আর্সেনালের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে ক্লপের দল। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৬ মার্চ শেষ ষোলো ফিরতি লেগে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে নামবে ইংলিশ ক্লাবটি। রিয়ালের মাঠে তো এমনিতেই জেতা কঠিন, সেটিও চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩ গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে—এ মৌসুমে তাই বড় প্রতিযোগিতায় লিভারপুলের শিরোপা জয়ের আশার সমাধি দেখছেন অনেকেই।

চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ২ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৫ গোল হজম করেছে লিভারপুল

লিভারপুলের সাবেক ডিফেন্ডার জেমি ক্যারাঘার অবশ্য এখনো শিরোপা নিয়ে হিসাব-নিকেশ করছেন না। ঘরের মাঠে রিয়ালের কাছে পর্যুদস্ত হওয়া ক্লপের দলের তুমুল সমালোচনা করেছেন ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিভারপুলেই পেশাদার ক্লাব ক্যারিয়ার কাটিয়ে দেওয়া ক্যারাঘার।

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় লিভারপুলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪৯ ম্যাচ খেলা ক্যারাঘার ‘সিবিএস স্পোর্টস’-এ ম্যাচের বিশ্লেষণে বলেছেন, ‘এটা বিপর্যয়। লজ্জার। মৌসুমজুড়েই আমরা নানা রকম অজুহাত দিয়েছি। দ্বিতীয় ভাগটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভালো হয়নি। লিভারপুলকে দেখে একেবারেই এলোমেলো লেগেছে। আমরাই মৌসুমজুড়ে তাদের পক্ষে নানা অজুহাত দাঁড় করিয়েছি, আগের মৌসুমের মতো তাদের ভালো খেলতে না পারার সম্ভবত এটাই কারণ। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা তো জঘন্য ছিল।’

প্রথমার্ধ শেষে ২-২ ব্যবধানে সমতায় ছিল লিভারপুল। বিরতির পর ৩ গোল হজম করে। দ্বিতীয়ার্ধে ক্লপের দলের খেলা নিয়ে ক্যারাঘারের ব্যাখ্যা, ‘স্কোরবোর্ডে ২-২ ব্যবধানে সমতায় থাকতে সে অর্ধে ৩ গোল হজম করা রীতিমতো বিপর্যয়কর। গত মৌসুমেও এই দলটার ডিফেন্সিভ রেকর্ড ভালো ছিল। কিন্তু মাঝমাঠে আগের সেই শক্তিমত্তা আর নেই, আক্রমণভাগও সেভাবে চাপ তৈরি করতে পারছে না।’

অ্যানফিল্ডে প্রথমার্ধে গোল করে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় লিভারপুলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড গড়েন মোহাম্মদ সালাহ। যাঁর রেকর্ড ভেঙেছেন, সেই লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড বলেছেন সবার জানা কথাটাই— লিভারপুলের ওপর ‘পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার’ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ।

১৯৯৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত লিভারপুলে কাটানো জেরার্ড বিটি স্পোর্টকে বলেছেন, রিয়ালের কাছে ৫-২ গোলের হারে লিভারপুল ‘বাস্তবতাটা টের পেয়েছে’। রিয়ালের লুকা মদরিচ ও জোড়া গোল করা করিম বেনজেমার প্রশংসা করে জেরার্ড বলেছেন, ‘আমরা আসলে মদরিচ ও বেনজেমার নিরঙ্কুশ গ্রেটনেস দেখলাম।’

আর্সেনাল কিংবদন্তি ও ফ্রান্সের সাবেক স্ট্রাইকার থিয়েরি অঁরি একটু কঠোর ভাষায়ই সমালোচনা করেছেন। সিবিএস স্পোর্টসকে অঁরি বলেছেন, ‘আলিসন ভুল করেছে কিন্তু সতীর্থরা তাকে বাঁচাতে (হার) পারেনি। থিবো কোর্তোয়াও ভুল করেছে, আর রিয়াল মাদ্রিদ গ্রেট দল বলেই তাকে উদ্ধার (জয়) করতে পেরেছে। ইয়ুর্গেন ক্লপের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত, আমি তা মনে করি না। তবে কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাঁদের এখন আর লিভারপুলে খেলার মতো যোগ্যতা নেই। এটা সেরাদের ক্ষেত্রে হয়েছে, আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এটা আসলে যুগের অবসান।’