আর্জেন্টিনা, ফুটবল বিশ্বে এ নামের মাহাত্ম্য অনেক। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি...যুগে যুগে আর্জেন্টিনায় জন্ম নিয়েছেন মহান কত ফুটবলার। এই তো গত বছরের ডিসেম্বরে নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে পুরো বিশ্বই মাতিয়ে তুলেছে আর্জেন্টিনা। আর কুরাসাও? ফুটবল বিশ্বে এখনো অজানা এক নাম। অথচ কদিন ধরে এ নামটিই উচ্চারিত হচ্ছে আর্জেন্টিনার সঙ্গে।
কেন? তিন তারকার আর্জেন্টিনা দলের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ যে কুরাসাও। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচের প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে আসার পর থেকে আলোচনায় এ নামটি। ফুটবল বিশ্বে তো বটেই, এমনিতেও খুব একটা আলোচিত নয় দেশটি।
কিন্তু ফুটবল মঞ্চে খুব একটা হেলাফেলা করার মতো দলও নয় কুরাসাও। র্যাঙ্কিং অন্তত তেমনটাই বলছে। র্যাঙ্কিংয়ের ৮৬ নম্বরে থাকা এ দলের বিপক্ষেই আগামী বুধবার মুখোমুখি হবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
তর্ক সাপেক্ষে সময়ের সেরা ফুটবলার মেসি, ফিফা দ্য বেস্ট জয়ী এমিলিয়ানো মার্তিনেজদের প্রতিপক্ষ এই কুরাসাও কারা? কীই–বা তাদের ফুটবল ঐতিহ্য? আগামীকালের ম্যাচের আগে জেনে নেওয়া যেতে পারে। ৪৪৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুরাসাও মূলত দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান সাগর এবং ডাচ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দ্বীপদেশ।
দেশটিতে বাস করে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো মানুষ। আর তাদের রাজধানীর নাম ভিলেমস্টাড। দেশটির অবস্থান ভেনেজুয়েলা উপকূলের ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে। অন্য দুটি দ্বীপ দেশ আরুবা এবং বোনাইরের সঙ্গে মিলে এটি গঠন করেছে এবিসি দ্বীপপুঞ্জ।
কুরাসাও ১৮১৫ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত কুরাসাও অ্যান্ড ডিপেন্ডিন্সিস কলোনির অংশ ছিল। এরপর ১৯৫৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তারা ছিল নেদারল্যান্ডস এন্টিলিসের অংশ। ২০১০ সালের অক্টোবরে নেদারল্যান্ডস এন্টিলিসের বিলুপ্তির পর থেকে কুরাসাও রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তারা মূলত কিংডম অব নেদারল্যান্ডসের অন্তর্গত স্বায়ত্তশাসিত একটি রাষ্ট্র। যেখানে তাদের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতির নিয়ন্ত্রণ মূলত ডাচদের হাতে।
টেরিটরি অব কুরাসাও ন্যাশনাল ফুটবল টিম নামে তারা যাত্রা শুরু করে ১৯২৪ সালে। একই বছরে তারা নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলে প্রতিবেশী দেশ আরুবার বিপক্ষে। তবে আধুনিক ফুটবলে নিজেদের নতুন যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। সে বছরের মার্চে তারা ফিফার সদস্যপদ লাভ করে, আর আগস্টে প্রথম ম্যাচ খেলে ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে। ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে হেরে যায় তারা। কিন্তু হারে শুরু হলেও ফুটবলে কুরাসাওয়ের যাত্রাটা ছিল দারুণ। খুব দ্রুত র্যাঙ্কিংয়েও ওপরের দিকে উঠে আসতে শুরু করে।
এর মাঝে ২০১৭ সালের ক্যারিবিয়ান কাপে দারুণ চমক দেখায় কুরাসাও। ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন জ্যামাইকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পায় তারা। এবিসি’স টুর্নামেন্টেও দারুণ সাফল্য পাচ্ছে তারা। ২০১৩ সালে রানার্সআপ হওয়া দলটি ২০২১ ও ২০২২ সালে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর মাঝে ২০১৯ সালে কনকাকাফ নেশনস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছে কুরাসাও।
২০২২ সালে হয়ে যাওয়া কাতার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন না করলেও বাছাইপর্বে ভালোই করেছিল তারা। ৬ ম্যাচ খেলে ৩টি জয়ের বিপরীতে ড্র করেছে ২ ম্যাচে, আর হেরেছে মাত্র ১ ম্যাচে। আর এসব পারফরম্যান্সই তাদেরকে র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ নম্বরে নিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে ক্যারিবিয়ান কাপ জয়ের সালে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিংয়েও ওঠে (৬৮) কুরাসাও।
সাম্প্রতিক সময়টা অবশ্য ভালো যাচ্ছে না দলটির। ২০২২ সালে ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ১টিতে জিতেছে তারা, ড্র করেছে ২টিতে এবং হেরেছে বাকি ৫ ম্যাচে। আর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আগামী মঙ্গলবার মাঠে নামার আগে গতকালও ধাক্কা খেয়েছে কুরাসাও। কনকাকাফ নেশনস লিগের ম্যাচে কানাডার কাছে ২-১ গোলে হেরেছে তারা। এখন বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা কোন কৌশলে খেলবে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
এমনিতে আর্জেন্টিনা-কুরাসাও লড়াইকে বেমানানই বলতে হবে। কিন্তু এই বেমানান লড়াইয়ে আরও বেশি বেমানান ফল যদি তারা কোনোভাবে উপহার দিতে পারে, তাহলে ফুটবল বিশ্বে সত্যিকার অর্থেই ছড়িয়ে পড়বে কুরাসাও নামটি!