সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি পেলে ক্যারিয়ারে হাজারখানেক গোল করেছেন। যদিও তাঁর গোলের সংখ্যা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয়, তিনি এক হাজার গোল করেননি, তারপরও তিনি যতগুলো গোল করেছেন, ফুটবল ইতিহাসে অমরত্ব পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট। তিনি গোল করেছেন, করিয়েছেন। পায়ের কারিকুরিতে মাত করেছেন ফুটবলপ্রেমীদের মন। অনেকেই বলেন, মেসি, নেইমার, রোনালদো কিংবা এমবাপ্পেরা আজকের দিনে যা যা করছেন, তার সবই বল পায়ে পেলে দেখিয়ে গেছেন ৫০ বছর আগেই। কিন্তু পেলে গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন—এমন তথ্যে ক্ষণিকের জন্য হলেও কিন্তু থমকে যেতে হয়।
তথ্যটা মিথ্যা বা ভুল নয়, ফুটবল সম্রাট আসলেই গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন। এবং গোলরক্ষণেও তিনি কোনো অংশে কম ছিলেন না। ২০১৪ সালে ইএসপিএন ব্রাজিলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলীয় কিংবদন্তির সান্তোসের সতীর্থ লিমা নিজেই সেই তথ্য দিয়েছিলেন। পেলে সান্তোসের হয়ে চার ম্যাচে গোলকিপিং করেছিলেন। তিনি বেশ ভালো কিপারই ছিলেন। যে চার ম্যাচে তিনি গোলরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সে চার ম্যাচের একটিতেও হারেনি সান্তোস। পেলেও গোল খাননি একটিও। ব্রাজিলের হয়েও একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে গোলরক্ষণ করেছিলেন পেলে।
লিমা বলেছিলেন, গোলরক্ষক হিসেবে রীতিমতো সিরিয়াস ছিলেন পেলে। তিনি দলের গোলকিপিং কোচদের কাছ গিয়ে অনুশীলন করতেন। তিনি তাঁদের কাছ থেকে টিপস নিতেন। ব্যাপারটা নিখুঁত করার চেষ্টা করতেন।
১৯৭০ সালের দিকে ব্রাজিলীয় ঘরোয়া ফুটবলে বদলি খেলোয়াড় নামানোর ব্যাপারটি শুরু হয়। এর আগে দলের গোলরক্ষক চোট পেলে বা তাঁকে কোনো অপরাধে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হলে দলের একজন ‘আউটফিল্ড’ খেলোয়াড় পোস্টে গিয়ে দাঁড়াতেন। সান্তোসের হয়ে চারবার এই কাজটি করেছেন পেলে নিজেই, যিনি বিশ্বের সর্বকালের ফুটবল ইতিহাসের সেরা হিসেবেই বিবেচিত হন।
২০০৬ সালে নিজের আত্মজীবনীতে পেলে গোলরক্ষক হিসেবে ভূমিকা বিষয়ে লিখেছেন, ‘যদিও আমার উচ্চতা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু আমি খুব ভালো লাফাতে পারতাম। সে কারণে আমি গোলরক্ষক হিসেবে মন্দ ছিলাম না। সান্তোসে আমি সব সময়ই “বদলি” গোলরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতাম। সে কারণেই আমি সান্তোসের হয়ে চার ম্যাচে ও ব্রাজিলের হয়ে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে কিপিং করেছি।’
পেলে প্রথমবারের মতো সান্তোসের হয়ে গোলরক্ষকের জার্সি পরেছিলেন সাও পাওলো স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে। ‘কমার্শিয়াল’ নামের একটি মোটামুটি দুর্বল দলের বিপক্ষে। পেলে ততক্ষণে দলের হয়ে গোলও করে ফেলেছিলেন। এরপর ম্যাচের ২০ মিনিট তিনি গোলকিপিং করেন।
তাঁর দ্বিতীয়বার গোলকিপিং অবশ্য বেশ কঠিন একটি ম্যাচে। সেটি ছিল ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। সেদিন মাঠে প্রায় ৬০ হাজার দর্শক ছিল। ম্যাচটি ছিল গ্রেমিওর বিপক্ষে। সালটা ছিল ১৯৬৩।