গত চার মৌসুম ম্যান সিটি ছিল অপ্রতিরোধ্য
গত চার মৌসুম ম্যান সিটি ছিল অপ্রতিরোধ্য

প্রিমিয়ার লিগ

ফেবারিট সিটির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

একসময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ মানেই ছিল হাড্ডাহাড্ডি এক শিরোপা–লড়াই। যেখানে শেষ মুহূর্তে গিয়ে অনেক সময় বদলে যেত ট্রফি জয়ের সব সমীকরণ। গত চার মৌসুমেও অবশ্য লড়াই হয়েছে সমানতালে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, শেষে গিয়ে বিজয়ী দলের নামটা আর বদলানো যায়নি।

প্রতিবারই শেষ পর্যন্ত জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড–ফুলহামের আজ রাতের ম্যাচ দিয়ে শুরু এবারের লিগে তারা নামবে টানা পঞ্চম শিরোপা জয়ের মিশনে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রিমিয়ার লিগে এবার কি পরিস্থিতি বদলাবে, নাকি সেই একই গল্পেরই পুনরাবৃত্তি হবে?

এবার মাঠে নামার আগেই বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে সিটি। এরই মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভঙ্গের ১১৫টি অভিযোগের শুনানি এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নভেম্বরে শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দুই মাস এগিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট মৌসুমগুলোতে সিটির পয়েন্ট কাটা, জরিমানা, এমনকি লিগ থেকে অবনমনের শাস্তিও হতে পারে। ফলে একধরনের অস্বস্তি নিয়েই নতুন মৌসুমের যাত্রা শুরু করবে সিটি। যার প্রভাব পড়তে পারে দলটির মাঠের খেলাতেও।

শুধু মাঠের বাইরেই নয়, মাঠেও সিটির জন্য অপেক্ষা করছে নতুন চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে ক্লাব ছেড়ে গেছেন হুলিয়ান আলভারেজ। গত মৌসুমে দলের একাধিক খেলোয়াড় যখন চোটে পড়েছিলেন, তখন বিকল্প হিসেবে বড় ভূমিকা রেখেছেন এই আর্জেন্টাইন তরুণ। এর মধ্যে জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে কেভিন ডি ব্রুইনার সিটি ছাড়ার গুঞ্জনও।

সিটিকে আবার চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে আর্সেনাল

গার্দিওলার অধীনে সিটির জাদুকরি উত্থানের অন্যতম নায়ক ছিলেন ডি ব্রুইনা। গত মৌসুমে চোট ও ছন্দহীনতায় ভোগার পরও দলে নিজের অবদান রেখেছিলেন এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। কিন্তু এবার শেষ পর্যন্ত তাঁর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। আর শেষ পর্যন্ত থেকে গেলেও সেরা ছন্দে থাকবেন কি না, সে প্রশ্নও আছে।

পাশাপাশি আলভারেজ ও ডি ব্রুইনার বিকল্প হিসেবে কারা আসবেন, তা নিয়েও আছে নানা জল্পনা–কল্পনা। জিরোনার তরুণ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার সাভিওকে এনেছে সিটি। কিন্তু সাভিও বড় মঞ্চে এখনো সেভাবে পরীক্ষিত নন। আর প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, সে প্রশ্নও আছে। তরুণদের মধ্যে ২১ বছর বয়সী অস্কার ববও অবশ্য দলকে আশা জোগাচ্ছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অভিজ্ঞতার অভাব সিটিকে বিপদে ফেলে কি না, সেই প্রশ্নও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

এবার আসা যাক প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রসঙ্গে। গত দুই মৌসুমে সিটির জন্য বড় হুমকি ছিল আর্সেনাল। দুই মৌসুমেই একপর্যায়ে শিরোপা–দৌড়ে এগিয়ে ছিল গানাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিটির বিপক্ষে আর পেরে ওঠেনি তারা। এবারও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে মিকেল আরতেতার দল। এরই মধ্যে রিকার্ডো কালাফিওরির মতো তারকার আগমন দলের শক্তিও অনেক বাড়িয়েছে। পাশাপাশি আগের দুবারের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে তারা। সব মিলিয়ে এবারও সিটির শিরোপা জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এমিরেটসের ক্লাবটি।

ইয়ুর্গেন ক্লপ যুগ শেষ করে নতুন এক পথচলা শুরু করতে যাচ্ছে লিভারপুল। আর্নে স্লটের অধীনে লিভারপুল কেমন করে, সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকেরই। প্রাক্‌–মৌসুম সফরে আশার বার্তা দিয়েছে স্লটের দল। তবে লিগের হিসাব একেবারেই ভিন্ন। লিভারপুলের জন্য ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে নতুন কোনো খেলোয়াড়ও এখনো দলে টানেনি। অর্থাৎ দলে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে পরিকল্পনা সারতে হবে স্লটকে। এই পরীক্ষায় লিভারপুল এখন কত দূর এগোতে পারে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।  

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিয়েও খুব বেশি আশাবাদী হওয়া কঠিন। এরিক টেন হাগের অধীনে দলটি চেষ্টা করছে নিজেদের সেরা ছন্দ ফিরে পাওয়ার। এরই মধ্যে কমিউনিটি শিল্ডে ম্যান সিটির কাছে শিরোপা হারিয়েছে তারা। তবে এবারের মৌসুমটি টেন হাগের মতো অ্যাসিড টেস্টের মতোই হতে যাচ্ছে। এবার নয়তো, আর কখনোই নয়। মৌসুম শুরুর আগে চেলসির অবস্থা নিয়েও স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। দলবদলেও খুব একটা ভারসাম্য দেখাতে পারেনি দলটি। এমনকি এই দলে গোলরক্ষকও এখন ৮ জন। সংখ্যাটা নাকি ৯ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। এমন উদ্ভট দলবদল কৌশল চেলসিকে ভোগাতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

শীর্ষ এই চার দলের বাইরে টটেনহাম ও অ্যাস্টন ভিলাকেও আলোচনার বাইরে রাখার সুযোগ নেই। তবে এই দুই দল নিজেদের শিরোপা জয়ের চেয়ে, বাকিদের পয়েন্ট কাটার কাজটাই বেশি করবে। শেষ পর্যন্ত নিজেরা রাজা না হতে পারলেও অন্য কোনো দলের রাজা হওয়ার পেছনে ভূমিকা থাকবে এই দুই দলের।