বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় তহুরা খাতুন খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন তিনি। কমলাপুর স্টেডিয়ামে গত শুক্রবার বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী দল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন। বাংলাদেশ জিতেছে ৩-০ গোলে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ আলম।
খেলা ছাড়তে চেয়েছিলেন কেন?
তহুরা খাতুন: অনেক দিন অসুস্থ ছিলাম। ওজনও অনেকটা কমে যায়। তাই গত জুনে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যাই। তখন মা–বাবা বললেন, তোর আর খেলার দরকার নেই। শরীরের অবস্থা ভালো না।
আর কি কোনো কারণ ছিল?
তহুরা: আসলে নানা কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। লিটু স্যারকে (বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ মাহবুবুর রহমান) বলেছিলাম, ফুটবল আর আমার দ্বারা হবে না। আমি আর আসব না ক্যাম্পে। স্যার বলেছিলেন, তুই আয়, তুই পারবি।
ফুটবল ছাড়ার সিদ্ধান্ত কতটা কষ্টের ছিল?
তহুরা: অনেক কষ্টের। তবু নিতে হয়েছিল। কারণ, আমি আর পারছিলাম না।
খেলা না ছেড়ে ভালোই হয়েছে মনে হয় এখন?
তহুরা: হ্যাঁ, সেটা মনে হয়। জুলাইয়ে নেপালের সঙ্গে খেলেছি ঢাকায়। এরপর এশিয়ান গেমসেও খেলেছি। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে খেললাম।
সিঙ্গাপুরের সঙ্গে প্রথম গোলটা মারিয়া মান্দা করতে পারতেন। পরে তাঁকে আপনি মাঠেই নাকি বলেছেন, আপা আপনার গোলটা আমি দিয়ে দিয়েছি।
তহুরা: হ্যাঁ, আজ সকালেও তাঁকে কথাটা বলেছি। তিনি হেসে বলছেন, ঠিক আছে। ওটা কোনো ব্যাপার না।
আপনাকে অনেকে ‘বাংলাদেশের মেসি’ বলেন। শুনতে কেমন লাগে?
তহুরা: অনেক ভালো। গ্রামে গেলে নারীরা ‘মেসি’ না বলে ‘মেসরি’ বলে (হাসি)। এটা ভালো লাগে।
১২ বছর বয়সে আপনি বাফুফের ক্যাম্পে আসেন, ২০১৫ সালে। সেই দিনগুলো কেমন ছিল?
তহুরা: তখন সবার ছোট আমি। ওজন ছিল অনেক কম। স্যারেরা অনেক আদর করতেন। ডাইনিংয়ে গেলে তাঁরা ফলটল দিয়ে বলতেন, ‘ভালো করে খা। তোর শরীরের অবস্থা ভালো না।’
সেই দিনগুলো কীভাবে পার করলেন?
তহুরা: বাড়ির জন্য অনেক কান্নাকাটি করতাম। স্যারেরা সাহস দিতেন। ছোটন স্যার, লিটু স্যার বাবার মতো দেখেছেন আমাকে। তাঁদের স্নেহ ভালোবাসায় এতগুলো দিন কাটিয়ে দিয়েছি।
পরিবারে আর কে কে আছে?
তহুরা: মা–বাবা, পাঁচ বোন আর এক ভাই। সবার বড় বোন, তারপর ভাই, আমি তৃতীয়। আমাদের নিজস্ব জমিজমা চাষ করতেন বাবা। এখন কিছু করেন না। আমার বড় দুইজনের বিয়ে হয়েছে। অন্যরা পড়াশোনা করে।
ছোটবেলা কেমন ছিল?
তহুরা: ফুটবলে এসে আমি তহুরা খাতুন হয়েছি। কিন্তু স্কুলে আমার নাম ছিল সারাবান তহুরা। ভাইকে নিয়ে বাবার সঙ্গে খেতে কাজ করতাম। কলসিন্দুরে (ময়মনসিংহ) আমরা কাছাকাছি বাড়ির চারজন; আমি, দুই শামসুন্নাহার ও সাবিনা (মারা গেছে) ১০ টাকায় ৫ প্যাকেট চানাচুর কিনে গলায় ঝুলিয়ে খেতে খেতে প্র্যাকটিসে যেতাম।
ফুটবল ছাড়া আর কী ভালো লাগে?
তহুরা: মাছ ধরা ও পাখি শিকার। বাড়ির পাশের বিলে প্রতিদিন প্রচুর মাছ ধরতাম। এ জন্য অনেক বকা খেতাম।
ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?
তহুরা: ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না কিছু। যা আছে কপালে, তা–ই হবে (হাসি)। এশিয়ান গেমসের কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারিনি এবার। দেখা যাক সামনে কী হয়।