তাঁর মনে কী আছে, তা বুঝতে কখনোই খুব একটা সমস্যা হয় না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজেই তা জানিয়ে দেন। জানিয়ে দিয়েছেন গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে তুলে নেওয়ার পরও। এমনভাবেই যে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তাঁর খেলাটাই পড়ে গেছে সংশয়ে।
৬৫ মিনিটে কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে তুলে নেন। মাঠ থেকে বেরোনোর সময় দক্ষিণ কোরিয়ার এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে লেগে যায় তাঁর। রোনালদোকে দ্রুত মাঠ ছাড়তে বলাতেই রেগে যান পর্তুগিজ সুপারস্টার। এটা যে তাঁকে তুলে নেওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তা তো অনায়াসেই বোঝা যায়।
ব্যাপারটা এখানেই শেষ হলে সমস্যা ছিল না। ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের উদ্দেশে রোনালদোর কথাও, ‘আমাকে তুলে নিতে তাঁর তর সইছে না’। সান্তোস তখন তা খেয়াল করেননি। করেছেন পরে। এটা যে তাঁর পছন্দ হয়নি, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন পরিষ্কার।
কোনো কোচেরই তা পছন্দ হওয়ার কথা নয়। ফার্নান্দো সান্তোসের পছন্দ না হওয়াটা তাই বড় কোনো খবর নয়। সেটিই বড় খবর হয়ে গেল, যখন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রকাশ্যে তা বলে গেলেন। বললেনও চোখেমুখে চরম বিরক্তি ফুটিয়ে। বিষয়টা চাইলে এড়িয়েও যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করা থেকেই পরিষ্কার, রোনালদোকে কড়া একটা বার্তাই দিতে চেয়েছেন সান্তোস। তা শুধু বার্তা দেওয়াতেই শেষ হবে, নাকি আরও বড় কোনো শাস্তি অপেক্ষা করছে রোনালদোর জন্য?
প্রশ্নটা উঠছে, কারণ ফার্নান্দো সান্তোস পরদিনের (আজ) ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো প্রথম একাদশে থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি। যুক্তি হিসেবে বলেছেন, একাদশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। হলেও তা প্রথমে তিনি ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের বলবেন। সেটাও স্টেডিয়ামে যাওয়ার পর। ২০১৪ সালে পর্তুগালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি এটা মেনে এসেছেন। মেনে এসেছেন আসলে সারা জীবনই।
রোনালদো ওই প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। সান্তোসের কাছে ওই ঘটনার ওখানেই সমাপ্তি ঘটেছে। অন্তত সেটাই পর্তুগাল কোচের দাবি। তবে রোনালদোকে খেলানো না-খেলানো নিয়ে প্রশ্নের উত্তরটাই বলে দিচ্ছে, ওই ঘটনার জের ওখানেই শেষ না-ও হতে পারে। প্রথম একাদশ না জানাতে পারেন, কিন্তু দলের অধিনায়ক অবশ্যই খেলবেন, এটা বলে দেওয়া তো এমন কঠিন কিছু নয়। সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে তাই বড় কৌতূহল এটা নিয়েই—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কি থাকবেন প্রথম একাদশে?
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ৩৮ ছুঁতে যাওয়া রোনালদোর এটি শেষ বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটা তাই বিশ্বকাপে রোনালদোর শেষ ম্যাচও হয়ে যেতে পারে। এই বিশ্বকাপেই ঘানার বিপক্ষে গোল করে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েছেন।
তবে এই রেকর্ড বাদ দিলে এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত রোনালদোর মনে রাখার মতো কিছু নেই। নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন প্রতি ম্যাচেই। শুধুই নামের জোরে খেলে যাচ্ছেন—এমন অপবাদও দিচ্ছেন অনেকে। এসব সমালোচনা বরাবরই রোনালদোকে আরও উদ্দীপ্ত করেছে। কৌতূহল তাই ছিলই—আবারও কি রোনালদো একটা জবাব দিয়ে দেবেন সবাইকে?
আরেকটি অতৃপ্তিও তো ঘোচানোর ছিল। এর আগে চারটি বিশ্বকাপ খেলে মেসির মতোই নকআউট পর্বে কোনো গোল করতে পারেননি রোনালদোও। দ্বিতীয় রাউন্ডে পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করে মেসি সেই ‘কলঙ্ক’ মুছেছেন, রোনালদোও নিশ্চয়ই আরও উজ্জীবিত হয়েছেন তাতে। কিন্তু তার আগে তো বড় প্রশ্ন ওটাই—আজ মাঠে নামার সুযোগ পাবেন তো?