বাফুফের নতুন কমিটি আজ প্রথম সভায় বসেছিল আলোচ্যসূচিতে ২৮টি বিষয় নিয়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা শেষে সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের দেড় কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা আর বাফুফের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোর নতুন চেয়ারম্যানের নামই শুধু জানানো হয়েছে। নির্বাচিতদের মধ্যে মূলত স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোর নেতৃত্ব বণ্টন করা হয়েছে এ সভায়।
মিডিয়া কমিটির দায়িত্ব ফিরে পাওয়া মোহামেডানের সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমান কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম বাবু সভা শেষে বাফুফে ভবন চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, শুধু অর্থ কমিটি করা হয়েছে চার বছরের জন্য। বাকি কমিটিগুলোর মেয়াদ আপাতত এক বছর। পারফরম্যান্স দেখেই সেসব কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে।
অর্থ কমিটি ও জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যানের পদ নিজের হাতে রেখেছেন বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ২০০৮ থেকে গত ১৬ বছরে বাফুফের সভাপতি হিসেবে কাজী সালাহউদ্দিন কখনো এই দুটি কমিটির প্রধান হননি। সেই ধারা ভাঙলেন তাবিথ। তবে বাফুফের সহসভাপতি থাকার সময় তিনি জাতীয় দল কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাফুফের সাবেক সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ।
বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান আজকের প্রথম সভায় আসেননি। অনেকে মনে করছেন, হয়তো মান অভিমান থেকে আসেননি।
সালাহউদ্দিন যুগে অর্থ কমিটির প্রধানের দায়িত্বে লম্বা সময় দেখা গেছে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদীকে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সালাম পদত্যাগ করলে এই কমিটির দায়িত্ব পান সহসভাপতি ইমরুল হাসান। নতুন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল অর্থ ও জেলা লিগ কমিটির প্রধানের পদ প্রত্যাশা করেছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন। পেয়েছেন শুধু পেশাদার কমিটির চেয়ারম্যানের পদ। গত কমিটিতেও পেশাদার লিগ কমিটি ছিল তাঁরই হাতে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান আজকের প্রথম সভায় আসেননি। অনেকে মনে করছেন, হয়তো মান অভিমান থেকে আসেননি। তবে সেসব ঠিক নয় জানিয়ে ইমরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো কমিটির প্রধান হতে চাইনি। সকালে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম অফিসের কাজে। তাই আসতে পারিনি সভায়।’
ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান হয়েছেন বাফুফের নতুন সহসভাপতি রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। যশোর শামসুল হুদা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি ফুটবলে। বিপণন কমিটির প্রধান হয়েছেন আরেক নতুন সহসভাপতি ফাহাদ মোহাম্মদ আহমেদ করিম। সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ পেয়েছেন ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। আরেক সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী গভর্নমেন্ট রিলেশন কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন।
পাইওনিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ক্লাবের সভাপতি টিপু সুলতান। স্কুল ফুটবল কমিটি প্রধান হয়েছেন দুই সাবেক ফুটবলার গোলাম গাউছ ও বিজন বড়ুয়া। ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩২টি করে জেলার দায়িত্বে থাকবেন তাঁরা।
সংগঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাফুফের নির্বাচনে আপিল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ জকরিয়াকে। তিন মাসের মধ্যে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে
অনূর্ধ্ব-১৫ ন্যাশনাল কাপ কমিটির প্রধান মঞ্জুরুল করিম। অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন সাবেক ফুটবলার ছাইদ হাছান কানন। ডিএফএ কমিটি প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ফুটবলার ও এই নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য হওয়া সাবেক ফুটবলার ইকবাল হোসেন। টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান। ডিএফএ মনিটরিং কমিটির প্রধান রাজবাড়ীর কাউন্সিলর অধ্যাপক দুলাল। সংগঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাফুফের নির্বাচনে আপিল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ জকরিয়াকে। তিন মাসের মধ্যে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে।
কেনাকাটা কমিটির প্রধানের পদে বহাল রাখা হয়েছে জাকির হোসেন চৌধুরীকে। নারী কমিটির চেয়ার পদে বহাল আছেন মাহফুজা আক্তার। আরও কয়েকটির শীর্ষ পদে পুরোনোদেরই রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২৬ অক্টোবরের নির্বাচনে সদস্য পদে সমান ভোট পাওয়া দুজনের মধ্যে উপনির্বাচন হবে ৩০ নভেম্বর বাফুফে ভবনে।
সভা শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার পথে সাংবাদিকদের নাসের শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমি ডেভেলপমেন্ট কমিটিই চেয়েছিলাম। কাজটা চ্যালেঞ্জিং এবং আশা করি আমি সফল হব। যেহেতু একাডেমি নিয়ে কাজ করি, একটা একাডেমি কীভাবে গড়ে তুলতে হয় আমার জানা আছে। ফুটবলকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য থাকবে। মেয়েদের ফুটবল উন্নয়নে আমরা বড় একটা ভূমিকা রাখতে চাই।’
নতুন সভাপতি প্রথম সভায় কী বলেছেন সেটা জানিয়েছেন সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ, ‘সভাপতি সভায় বার্তা দিয়েছেন মাঠে খেলাটা রাখতে হবে। শুধু মুখের কথায় চললে হবে না। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমরা সেভাবেই ফুটবল উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করব।’
সহসভাপতি ফাহাদ করিম আগামী বছর মেয়েদের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন করতে চান, ‘ফুটবলে একটা ডিজিটাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কমিটির করা হয়েছে। যেটার চেয়ারম্যান হয়েছি আমি। অনেক কাজ করতে হবে। ২০০৫ সালে যেভাবেই হোক মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ করব। এটাকে খুব গুরুত্বসহকারে নিচ্ছি।’