নরক!
পিএসজিতে কেমন ছিলেন—শব্দটি দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন নেইমার। শুধু তাঁর কেন, লিওনেল মেসিরও নাকি পিএসজিতে যোগ দিয়ে ‘নরক’ দেখা হয়ে গেছে বলে মনে করেন নেইমার। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো এস্পোর্তে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথাই বলেছেন আল হিলাল তারকা।
অথচ দলবদলের ইতিহাসে ট্রান্সফার ফির বিশ্ব রেকর্ড গড়েই ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন নেইমার। ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোয় ব্রাজিলিয়ান এই তারকাকে কিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল পিএসজি। ওই মৌসুমেই মোনাকো থেকে ধারে আনা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পরের বছর কিনে নেয় পিএসজি। এরপর ২০২১ সালে বার্সা ছেড়ে মেসিও যোগ দেন পিএসজিতে। তিন মহাতারকাকে নিয়েও পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গত মৌসুমে তো মেসি-নেইমারের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছিল। পিএসজির সমর্থকেরা তাঁদের বাসার সামনে বিক্ষোভ করেছেন, আর নেইমারকেও বলে দেওয়া হয়েছিল ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তাঁকে বিবেচনা করা হচ্ছে না। গত মাসে পিএসজি ছেড়ে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল হিলালে যোগ দেন নেইমার।
নেইমারের মতো মেসিও পিএসজিতে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। ক্লাব একবার তাঁকে নিষিদ্ধও করেছিল। পিএসজি সমর্থকদের দুয়োও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল! আসলে নেইমার ও মেসি পিএসজিতে কেমন ছিলেন, সেটি আরও পরিষ্কার বোঝা যায় তাঁরা চলে যাওয়ার পর ক্লাবটির সমর্থকদের প্রদর্শন করা দুটি ব্যানারে। গত মাসে শেষ দিকে লাঁসের বিপক্ষে ম্যাচে পিএসজি সমর্থকদের একটি অংশ ব্যানারে লিখে এনেছিল, ‘নেইমার: অবশেষে অসভ্যর হাত থেকে মুক্তি মিলেছে।’ ইন্টার মায়ামির ম্যাচেও পিএসজি সমর্থকেরা ডিএনভি পিএনকে স্টেডিয়ামের বাইরে ব্যানার নিয়ে হাজির হয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘মেসি: অবশেষে অসভ্যর হাত থেকে মুক্তি মিলেছে।’
সেই মেসি এখন মায়ামির হয়ে দুর্দান্ত খেলছেন। আজও মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ম্যাচে লস অ্যাঞ্জেলেস এফসির (এলএ এফসি) বিপক্ষে মায়ামির ৩-১ গোলে জয়ের ম্যাচে দুটি গোল করিয়েছেন মেসি। নেইমারের অবশ্য এখনো আল হিলালের হয়ে অভিষেক ঘটেনি। চোট থেকে এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। প্যারিসে মেসির সঙ্গে ফেলে আসা দিনগুলো স্মরণ করে সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, ‘প্যারিসে আমরা নরকবাস করেছি। আমরা সেখানে নিজেদের সেরাটা দিতেই গিয়েছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। সে জন্যই আমরা (মেসির সঙ্গে) আবার একসঙ্গে খেলা শুরু করেছিলাম। একসঙ্গে ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পারিনি।’
আর্জেন্টিনার হয়ে গত ডিসেম্বরে বিশ্বকাপজয়ী মেসিকে নিয়ে নেইমার আলাদা করে বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার হয়ে সে স্বর্গবাস করেছে। তার জন্য খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু প্যারিসে সে নরকবাস করেছে। আমার মতে, প্যারিসে তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সে (পিএসজি থেকে) যেভাবে চলে গিয়েছে, সেটি প্রাপ্য ছিল না।’
সান্তোস থেকে তারকাখ্যাতি নিয়ে বেড়ে উঠে ২০১৩ সালে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন নেইমার। সেখান থেকে প্যারিস ঘুরে সৌদি আরব হয়ে নেইমারের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হতে পারে? সম্ভবত সান্তোস। নেইমার নিজেই জানিয়েছেন শৈশবের ক্লাবে ফেরার ইচ্ছার কথা, ‘সান্তোসে ফেরার ইচ্ছা আছে। কবে জানি না, তবে ফিরব, এটা নিশ্চিত।’
ব্রাজিলের হয়ে এরই মধ্যে তিনটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন নেইমার। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২—এই তিন বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ানদের আশা পূরণ করতে পারেননি তিনি। জিততে পারেননি বিশ্বকাপ। সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নেইমার বলেছেন, ‘অবশ্যই একদিন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু সবাই এটা জিততে পারে না। আমাদের ব্রাজিলে এমন একজন আছেন, যিনি কিংবদন্তি এবং আমাদের ইতিহাসেই অনেক বড় নাম—জিকো। তিনি কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। এখন বিশ্বকাপ না জেতায় তার যোগ্যতার কিন্তু এতটুকু অমর্যাদা হয় না। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম।’