টাইব্রেকার জয়ের পর মেসি ও মার্তিনেজ
টাইব্রেকার জয়ের পর মেসি ও মার্তিনেজ

প্রথমে মেসি, পরে মার্তিনেজ

নেইমার দিস ওয়ে। মেসি দিস ওয়ে।

কাল বিকেল ৪টায় কাতার মেট্রোলাইনের মূল জংশন মশিরেবে গিজগিজে ভিড়। সেই ভিড় মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। হলুদ জার্সি আর নীল-সাদা জার্সি। সন্ধ্যা ৬টায় ব্রাজিলের খেলা, রাত ১০টায় আর্জেন্টিনার। মশিরেবের প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে দাঁড়ানো তরুণ স্বেচ্ছাসেবক দুই দিকের লাইন দেখিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছেন—নেইমার দিস ওয়ে। মেসি দিস ওয়ে।

এক পাশে গ্রিন লাইন। অন্য পাশে রেড। গ্রিন লাইন যাবে ব্রাজিলের ম্যাচের ভেন্যু এডুকেশন সিটিতে। রেড লাইন লুসাইলে, যেখানে খেলবে আর্জেন্টিনা। দোহার মধ্যরাতে এই লেখা লিখতে বসে বিকেলে শোনা স্বেচ্ছাসেবকের কণ্ঠটা বারবার কানে বাজছে, নেইমার দিস ওয়ে। মেসি দিস ওয়ে।

এই বিশ্বকাপে শুক্রবারের এক রাত তো সত্যি সত্যিই নেইমার আর মেসির পথ আলাদা করে দিল। মিল থাকল অবশ্য সেখানেও। ব্রাজিলের হতাশা আর আর্জেন্টিনার আনন্দের রাত দুটিরই বাহন টাইব্রেকার। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে নেইমারের ব্রাজিলকে। আর নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা।

মার্তিনেজ টাইব্রেকার জিতিয়ে আবেগে শুয়ে পড়েন মাঠেই। মেসি এসে তাঁকে তুলেছেন

দারুণ এক গোল করার পরও কান্নায় শেষ হয়েছে নেইমারের বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসিও গোল করেছেন, করিয়েছেনও এর আগে। তারপরও শেষের নাটক তাঁর বিশ্বকাপ শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল, যা জয় করার পর মেসি মাঠে শিশুর মতো লাফালেন।

সে জন্য এমিলিয়ানো মার্তিনেজের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ থাকার কথা নয়। টাইব্রেকারে ডাচদের প্রথম দুটি শটই দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। আর্জেন্টিনা গোল করেছে প্রথম তিন শটেই। এনজো ফার্নান্দেজের চতুর্থ শটটি বাইরে চলে যাওয়ার পর এই রাতের সব নাটকের পরিসমাপ্তি নির্ভর করছিল লাওতারো মার্তিনেজের ওপর। অতিরিক্ত সময়ে সহজ একটা সুযোগ অপচয় করা স্ট্রাইকার এখানে আর ভুল করেননি।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল দেখবে বলে অধীর অপেক্ষায় ছিল প্রায় পুরো ফুটবল বিশ্ব। সেই স্বপ্নের ম্যাচের সমাধি হয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ব্রাজিলের পরাজয়েই। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বদলে এখন আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনাল। ১৩ ডিসেম্বর এই লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামেই।

টাইব্রেকারের আগে দুর্দান্ত খেলেছেন মেসি। টাইব্রেকারে ভেলকি দেখিয়েছেন মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনার জয়ের দুই নায়ক

ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে দুই গোল আর টাইব্রেকারকে যদি নাটক বলেন, তাহলে এই ম্যাচের জন্য অন্য কোনো শব্দ খুঁজতে হয়। ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে মেসি যখন আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে এগিয়ে দিলেন, ম্যাচ তো সেখানেই শেষ বলে মনে হচ্ছিল। ৮৩ মিনিটে ভাউট ভেগহোর্স্টের হেডে গোল দিয়ে উত্তেজনার শুরু। যোগ করা সময়ে এই ভেগহোর্স্টই দ্বিতীয় গোল করে সমতা এনেছেন খেলায়। সেই গোলটি দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত এক ফ্রি কিকে। যেখানে ফ্রি কিক পেয়েছিল নেদারল্যান্ডস, সেখান থেকে সরাসরি গোলেই মারার কথা। তা না করে কপমাইনার্স আস্তে করে পাস দিয়ে দিলেন ভেগহোর্স্টকে। আর্জেন্টিনা একটু হতভম্বই হয়ে গিয়ে থাকবে। ভেগহোর্স্টের ফিনিশিংটা অবশ্য দারুণ ছিল।

এর আগে আর্জেন্টিনা যথারীতি এগিয়েছে মেসি-জাদুর ওপর ভর করে। ৩৫ মিনিটে মেসির দারুণ এক পাস থেকে গোল করেন মলিনা। রাইট ব্যাকে খেলেন, এর আগে আর্জেন্টিনার হয়ে ২৪ ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি। আর এখানে বিশ্বকাপে এসে এমন এক গোল, মলিনার জন্য এই রাত অবিস্মরণীয় হয়েই থাকবে। শেষ পর্যন্ত জিততে না পারলে হয়তো তা থাকত না।

৭৩ মিনিটে মেসির গোল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে তাঁকে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার পাশে বসিয়ে দিল। রেকর্ডটা নিজের করে নেওয়ার সুযোগ তো পাচ্ছেনই। ক্যারিয়ারের একমাত্র অতৃপ্তি বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগও।