এই বয়সেই নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন আর্লিং হলান্ড। ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়েছেন নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে। নরওয়ের এই তারকা ভবিষ্যতে লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুতায় পা গলাতে পারবেন কি না, সে আলোচনা প্রায়ই হয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে ইউরোপের তিনটি লিগে ১৫০ গোল করে ফেলা হলান্ডকে নিয়ে সেই আলোচনা হতেই পারে। এই বয়সেই ১৫০টি গোল তো আর সাধারণ কোনো বিষয় নয়। সিটিতে এসে গোলের সেই ক্ষুধা ধরে রাখতে পারাটাই এখন তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
১৫০টি ক্লাব গোলের পাশাপাশি নরওয়ে জাতীয় দলের হয়ে ২১ ম্যাচে ২০ গোল করে ফেলেছেন হলান্ড। ২২ বছর বয়সে এমন অর্জন ফুটবল দুনিয়াতে খুব বেশি খেলোয়াড়ের নেই। এমনকি বিশ্ব ফুটবলের অনেক কিংবদন্তি তারকাও ২২ বছর বয়সে হলান্ডের ধারেকাছ দিয়েও যেতে পারেননি। ভবিষ্যতে তিনি মেসি–রোনালদোর পর্যায়ে নিজেকে নিতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে প্রত্যাশা যখন আছেই, তখন স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল জাগতেই পারে, হলান্ডের মতো বয়সে বিশ্ব ফুটবলের সেরা দুই তারকা কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কতটুকুই–বা ছিল তাঁদের অর্জন।
নিজের ২২তম জন্মদিনে মেসিও ছিলেন সবার আলোচনারই বিষয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক ঘটে আর্জেন্টাইন তারকার। ১৭ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে প্রথম খেলেন। ১৮ বছর বয়সেই পেয়ে যান আর্জেন্টিনার জার্সি।
২২ বছর বয়সে হলান্ড ম্যানচেস্টার সিটিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে যোগ দিলেও মেসি কিন্তু সেই বয়সেই বার্সেলোনার হয়ে ইউরোপ–সেরার গৌরবটা গায়ে মেখে ফেলেছেন। ২০০৬ সালে বার্সার মূল একাদশেরই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
সে সময় স্যামুয়েল ইতোর সহযোগী ভূমিকাতেই দেখা যেত মেসিকে। ২০০৮–০৯ মৌসুমে ৩০টি গোল করেছিলেন মেসি। যদিও ২২ বছর বয়সে তিনি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে গোলে হলান্ডের চেয়ে পিছিয়ে। আর্জেন্টাইন তারকা গোল করতে পেরেছিলেন ৮০টি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তখন তাঁর গোলসংখ্যা ১০। তবে এই বয়সে তিনি তাঁর প্রথম ব্যালন ডি’অরটা পেয়ে গিয়েছিলেন।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ২২ পূর্ণ হওয়ার আগে অবশ্য মেসির মতোই ছায়ায় কাটিয়েছেন। তবে সেই বয়সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অনুশীলন মাঠে ডাচ ফরোয়ার্ড রুড ফন নিস্টেলরয়ের সঙ্গে ঝগড়া বেধেছিল পর্তুগিজ তারকার। সেটি নিয়ে তাঁর কান্নার দৃশ্য আজও অনেকের মনে থাকার কথা। ২০০৬ সালে নিস্টলরয় রিয়াল মাদ্রিদে চলে গেলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোল স্কোরিং দায়িত্বটা পুরোপুরি এসে চাপে ২১ বছর বয়সী রোনালদোর কাঁধে। ২২ বছর বয়সে তাঁর নামের পেছনে গোলের সংখ্যা ছিল ৪৭টি, মেসির চেয়ে কম। হলান্ড এই জায়গায় অনেকটাই এগিয়ে রোনালদোর চেয়ে।
মেসি–রোনালদো দুজনেই ২২ বছর বয়সে হলান্ডের চেয়ে গোলসংখ্যায় পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে দুজনই নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মেসি জিতেছেন ৭টি ব্যালন ডি’অর, রোনালদো পাঁচটি। মেসির গোলসংখ্যা বার্সেলোনার হয়েই ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২টি। পিএসজির হয়ে ১১টি। দেশের হয়ে ৮৬টি। মোট ৭৬৯টি। রোনালদো তো আন্তর্জাতিক ফুটবলেই সর্বোচ্চ গোলদাতা। পর্তুগালের জার্সিতে গোল করেছেন ১৮৯ ম্যাচে ১১৭টি। স্পোর্টিংয়ের হয়ে ৫ গোলের মালিক হয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়ে সেটিকে পরিণত করেছিলেন ১৪২–এ। রিয়ালের হয়ে গোল করেছেন ৪৫০টি। জুভেন্টাসের হয়ে ১০১টি। ক্লাব ক্যারিয়ারে তাঁর মোট গোলই ৬৯৮।
২২ বছর বয়সে হলান্ড এগিয়ে আছেন ঠিকই, কিন্তু সেটি জার্মানি, অস্ট্রিয়া আর নরওয়ের ক্লাবের হয়ে গোলে। ম্যানচেস্টার সিটিতে এ মৌসুম থেকেই শুরু হবে তাঁর মেসি–রোনালদোদের কাতারে যাওয়ার মূল পরীক্ষা। সেটি কি হলান্ড পারবেন? মেসি–রোনালদোরাই এ মিশনে তাঁর আসল প্রেরণা।