কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে বিপরীত মেরুতে এগিয়েছে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার ফুটবল। আর্জেন্টিনার ফুটবল যেখানে সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছে, ব্রাজিল সেখানে পৌঁছেছে তলানিতে। এ নিয়ে সর্বশেষ ৩ ম্যাচের সব কটিতেই হারল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। সর্বশেষ আজ ভোরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিল হেরেছে ১–০ গোলে।
এই হারে দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে পয়েন্ট তালিকার ৬ নম্বরে নেমে গেছে ব্রাজিল। হারের পর সমর্থকদের কাছ থেকে বেশ দুয়োও শুনতে হয়েছে ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ফার্নান্দো দিনিজকে। ব্রাজিল কোচ অবশ্য নিজেদের হারের জন্য পরোক্ষভাবে নেইমার–ভিনিসিয়ুস–কাসেমিরোদের চোটের কারণে না থাকাকে দায়ী করেছেন। পাশাপাশি অবশ্য দলের শক্তি বিবেচনায় নিজেরা ভালো খেলেছেন বলেই মনে করেন দিনিজ।
ব্রাজিলের পারফরম্যান্স নিয়ে জানতে চাইলে ম্যাচ শেষে দিনিজ বলেছেন, ‘পরিসংখ্যানই সব নয়। যদি পরিসংখ্যান দেখা হয়, তবে সবকিছুই খারাপ। কিন্তু আমরা যদি এটাকে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, খেলোয়াড়দের দেখি, তবে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে। আজ আমাদের মাত্র তিনজন খেলোয়াড় ছিল, যারা গত বিশ্বকাপে খেলেছে। আর্জেন্টিনা প্রায় পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলেছে।’
দিনিজের মতে, দল এখন পুনর্গঠনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে প্রত্যাশিত ফল আসছে না। তবে ব্রাজিল দল ধীরে ধীরে উন্নতি করছে বলেও মনে করেন এই কোচ, ‘খেলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। যখন অনুশীলনে আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে, খেলাতেও আপনি সেটা দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কখনো কখনো ফল হাতছাড়া হয়ে যায়। বিকাশ এবং পুনর্গঠন বন্ধ রেখে কীভাবে আপনি জিতবেন? এই ছেলেদের ওপর আমরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলব, যাদের অনেকেই জন্মেছে ২০০০ সালের পর? এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই খেলোয়াড়েরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনি যদি উন্নতি করতে পারেন, তবে ধারাবাহিকভাবে ফলে সেটি ফুটে উঠবে।’
এরপরও ব্রাজিল দল এভাবে টানা হারতে পারে কি না, জানতে চাইলে দিনিজের উত্তর, ‘হ্যাঁ, আমি একমত যে আমরা হারতে পারি না। আপনি যখন ব্রাজিলের জার্সি পরবেন, তখন আপনাকে ম্যাচ জেতার জন্য সবকিছু করতে হবে। কাজের মধ্য দিয়েই সেটা করতে হবে। আমি মনে করি, যদি আমরা নিজেদের ভেতরকার সম্পর্ক গভীর করি, অনুশীলনে এবং কাজে উন্নতি ঘটাতে পারি, তবে ফলেও সেটা দেখা যাবে। তবে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি না যে সেটা ঘটবেই। কিন্তু পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তাটুকু আমরা দিতে পারি। আমরা ভুল করেছিলাম, আমাদের বোঝাপড়ায় ঘাটতি ছিল, যা আমরা এই ম্যাচে শোধরাতে পেরেছি। কিন্তু সবকিছু শোধরাতে পারিনি। আমি কাজে বিশ্বাস করি।’
ম্যাচ শেষে সমর্থকেরা দুয়ো দিয়েছেন দিনিজকে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ট্রলের শিকার হচ্ছেন এই কোচ। যদিও এসবকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন তিনি, ‘সমর্থকদের যা খুশি, করার অধিকার আছে। আমাদের কাজ নিজেদের সেরাটা দেওয়া। সমর্থকেরা আবেগপ্রবণ এবং তারা জিততে চায়। তাই তাদের দুয়ো দেওয়ার অধিকারও আছে। তারা চায়, আমরা ভালো খেলি এবং জিতে আসি। আমার ধারণা, দল ভালো খেলেছে, কিন্তু জিততে পারিনি। আর দল হারলে এটা খুবই স্বাভাবিক (দুয়ো দেওয়া)।’
ফল পক্ষে না এলেও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজেদের পারফরম্যান্সকে সাম্প্রতিক সময়ের সেরা পারফরম্যান্স হিসেবেই দেখছেন দিনিজ, ‘এটা সেরা পারফরম্যান্স কি না, বলা কঠিন। বলিভিয়ার বিপক্ষে দল খুব ভালো খেলেছিল। কিন্তু আপনি যদি দ্বৈরথের কথা ভাবেন, আর্জেন্টিনা দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছে। তারা এক বছরের কম সময়ের আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর এই ম্যাচ যা হয়েছে, সব যদি আপনি বিবেচনায় নেন, তবে এটা আমাদের সেরা পারফরম্যান্স না হলেও সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি।’