শেষ বাঁশি বাজতেই দশরথের গ্যালারিকে স্তব্ধ করে উল্লাসে ফেটে পড়েন বাংলাদেশের মেয়েরা। শিরোপা জয়ের উদ্যাপন বলে কথা! সেই নেপালকে আবারও হতাশায় ভাসিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ। ফাইনালের জমজমাট লড়াই শেষে বাংলাদেশের জয় ২–১ গোলে। শুরুতে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেন মনিকা চাকমা। এরপর আমিশা কার্কির গোলে সমতা ফেরায় নেপাল। তবে শেষ দিকে ঋতুপর্ণা চাকমার দারুণ এক গোলে শিরোপা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ফুটবলে আরেকটি স্মরণীয় ক্ষণের অপেক্ষা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামছেন সাবিনা খাতুনেরা।
ফাইনালে সাগরিকার জায়গায় একাদশে ফিরেছেন ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র। প্রত্যাশিতভাবেই এই একটি বদল এনেছেন কোচ পিটার বাটলার। আজ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি শামসুন্নাহারের জন্য অপেক্ষা করে তাঁকে একাদশে ফিরিয়েছেন। কিছুটা চোট থাকায় শামসুন্নাহার সেমিতে খেলেননি। তাঁর বদলে সুযোগ পেয়েছিলেন সাগরিকা।
প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল এর আগে ৫বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলে সব কটিই হেরেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে ৩-১ গোলে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় স্থানীয়দের। ফলে এবার তারা শিরোপা জিততে মরিয়া।
রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম, আফঈদা খন্দকার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, সাবিনা খাতুন, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র।আ
স্থানীয় ফুটবল জনতা শিরোপা উৎসবের আশায় ভিড় জমিয়েছেন রঙ্গশালার গ্যালারিতে। ফাইনাল শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই কাঠমান্ডুর ১৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারি প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ‘নেপাল’, ‘নেপাল’ স্লোগানে তাঁরা মাতিয়ে রেখেছেন চারপাশ। অনেকের হাতে নেপালের পতাকা। স্টেডিয়ামে তৈরি হয়েছে উৎসবের পরিবেশ।
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ–নেপাল ফাইনাল শুরু সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। সরাসরি দেখা যাবে কান্তিপুর ম্যাক্স এইচডি ইউটিউব চ্যানেলে।
নেপালী গোলরক্ষকের ভুলে দ্বিতীয় মিনিটেই সুযোগ এসেছিল তহুরার সামনে। তবে তহুরার শট ফিরে আসে সাইড পোস্টে লেগে। অল্পের জন্য গোল পাওয়া হলো না বাংলাদেশের।
পরিচয় পর্ব ও জাতীয় সংগীতের পর শুরু হয়েছে সাফ নারী ফুটবলের ফাইনাল। ৪–৩–৩ ফরমেশনে ম্যাচ শুরু করেছে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই বাংলাদদেশের চোখ আক্রমণে।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক বাংলাদেশ। আর নেপালের চোখ প্রতি–আক্রমণে। মিডফিল্ডে খেলোয়াড় বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের রাখার চেষ্টা বাংলাদেশের। অন্য দিকে লং পাসে প্রতি–আক্রমণ থেকে সুযোগ তৈরি চেষ্টা করছে নেপাল।
বাঁ প্রান্ত দিয়ে বারবার হুমকি তৈরি করছে বাংলাদেশ। ৯ মিনিটে সেই উইং ধরেই আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। যদিও গোল মেলেনি।
১০ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ পেয়েছিল নেপাল। বাংলাদেশের ভুলে পাওয়া বলে আমিশা কার্কির শট পোস্টে লাগলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে রক্ষণে তৈরি হচ্ছে ফাঁকা জায়গা। সেই শূন্যতাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে নেপালের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা।
দুই দলই চেষ্টা করছে মিডফিল্ডের দখল নিয়ে আক্রমণে যেতে। তবে কেউই বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। ভুল পাসের কারণেও বল হারাচ্ছে দুই দল। এর মধ্যে দুইবার আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু নেপালের ডিফেন্স লাইন ভাঙতে পারেননি তহুরারা। এর মধ্যে মনিকাকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেছেন নেপালের আম্রিতা জইশি।
২৪ মিনিটে মাসুরার দূর থেকে নেওয়া শট তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারেনি নেপালের গোলরক্ষক আনজিলার। গোলহীন বাংলাদেশ। পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশ গোলরক্ষক রূপনার ভুলের পরও বিপদ হয়নি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
২৭ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন নেপালের আমিশা। কিন্তু বল ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। এ সময় রক্ষণে দৃঢ়তা দেখায় বাংলাদেশ। প্রথম আধাঘণ্টায় গোল পায়নি কোনো দল। দুই দলই সমানে সমান খেলছে। দুই দলেরই একটি করে শট পোস্টে লেগেছে।
৩৩ মিনিটে নেপাল বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি–কিক পায় বাংলাদেশ। ফ্রি–কিকটি আদায় করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। ফ্রি–কিক নিতে আসেন মারিয়া মান্দা। তবে মারিয়ার শট বারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়।
৩৫ মিনিটে নেপালের ভুলে সুযোগ পেয়েছিলেন মনিকা। কিন্তু ঠিকঠাক শট নিতে ব্যর্থ হন তিনি। বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
ম্যাচ এখন প্রথমার্ধের শেষ ভাগে। নেপালের প্রেসিংয়ে তাল রাখতে কষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের। যে কারণে বল পায়ে রাখতে পারছিলেন না মনিকা–মারিয়ারা। পাসগুলোও ঠিকঠাক হচ্ছিল না এবং আক্রমণগুলোও পূর্ণতা পাচ্ছিল না।
প্রথমার্ধে দুই দলই চেষ্টা করেছে আক্রমণে গিয়ে গোল আদায়ের। বাংলাদেশের আক্রমণের জবাব বেশ ভালোভাবেই দিয়েছে নেপাল। বিশেষ করে রক্ষণে নেপাল ছিল দারুণ সুদৃঢ়। প্রেসিংয়েও ভালো করেছে তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ ও প্রতি–আক্রমণে জমে ওঠে লড়াই। দুই দলই এ সময় চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার। যদিও প্রথম কয়েকটি প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি।
আক্রমণের ধারায় দ্বিতীয়ার্ধের ৫২ মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দারুণ এক আক্রমণে নেপালের রক্ষণবহ্যু ভেদ করে বাংলাদেশ এগিয়ে দেন মনিকা চাকমা। উজ্জ্বল বাংলাদেশের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন।
ম্যাচে দুর্দান্ত খেলতে থাকা প্রীতি রাইয়ের অসাধারণ এক থ্রু পাস ধরে লক্ষ্যভেদ করেন নেপালি ফরোয়ার্ড আমিশা। এই গোলে পিছিয়ে পড়ার ৩ মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফিরল নেপাল।
৬০ মিনিটে কর্নার থেকে সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। তবে কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা পায়নি সাবিনা খাতুনের দল।
প্রথমার্ধে গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল আদায় করে নেয় দুই দল। প্রথমে মনিকার গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। এরপর দ্রুত সমতা ফেরায় নেপাল। দুই গোলের পর বেড়ে যায় গ্যালারির উত্তাপও। যার প্রভাব দেখা যায় ম্যাচেও। ৬৬ মিনিটে সুযোগ হাতছাড়া করে নেপাল।
৬৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ এক শট নেন মারিয়া মান্দা। তাঁর সেই শট আরও দুর্দান্ত দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন নেপালের গোলরক্ষক আঞ্জিলা। অল্পের জন্য গোল পাওয়া হলো না বাংলাদেশের। কর্নার থেকে সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ৭১ মিনিটে প্রতি–আক্রমণে কাছাকাছি গিয়েও গোল পায়নি নেপাল।
শেষ ১৫ মিনিটে প্রবেশ করেছে ফাইনালের লড়াই। দুই দলই কিছুটা সতর্ক থেকে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করছে। শেষ মুহূর্তে গোল খেতে চায় না কোনো দলই। এর মধ্যে ৭৬ মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ গড়ে নেপাল। যদিও সেটা গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। একটু পর সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশও।
৮১ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে অসাধারণ এক শটে নেপালি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেছেন ঋতুপর্ণা। এই গোলে শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন উজ্জ্বল করল বাংলাদেশ।