নিজেদের মাঠে বসুন্ধরা কিংস হারে না।
এই মাঠে অতিথি দলের পক্ষে ম্যাচ বের করে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। আজ তা আবারও দেখা গেল। এএফসি কাপে মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও কিংস পেয়েছে ২-১ গোলের দারুণ এক জয়। বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে গোল দুটি করেছেন বাবুরবেক ইউলদাশোভ ও মিগুয়েল ফেরেইরা।
ম্যাচের ১১ মিনিটে গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজেদের বক্সে ভুল পাস দিলে তা থেকে এগিয়ে যায় মাজিয়া। এই শ্রাবণের ভুলেই সপ্তাহখানেক আগে লেবাননের বিপক্ষে গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। আজও ভুল করেছেন। তারিক কাজীর পাস আবার তাঁকে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে বক্সের মধ্যে ভুল পাস দেন। তাঁর বাড়ানো পাস মাঝ থেকে ধরে ফেলেন বালা বানোভিচ। তাঁর কাছ থেকে রেগান ওবেং বল পেয়ে গোল করেন।
পিছিয়ে পড়ে একের পর এক আক্রমণে মালদ্বীপের ক্লাবটির রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে ম্যাচে ফিরেছে কিংস। তবে বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন নাইজেরিয়ান ফুটবলার উদো, ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন। কিংসের আক্রমণের প্রাণভোমরা রবসন দা সিলভা চোটের কারণে ছিলেন না। তাঁর বদলে আজ খেলেছেন নাইজেরিয়ান এমফোন উদো। কিন্তু তিনি রবসনের অভাব পূরণ করতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত ৮০ মিনিটে গোল পায় কিংস। বদলি নামা শেখ মোরছালিনের কর্নার থেকে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান বাবুরবেক ইউলদাশোভ। কিন্তু ম্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত ৮৮ মিনিটে। বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে করা শটে মিগুয়েল ফেরেইরা পরাস্ত করেন মাজিয়ার গোলকিপার হুসেইন শরিফকে। অনেক কঠিন কঠিন সেভের পর শরিফ শেষ পর্যন্ত বোকা বনেন ব্রাজিলিয়ান তারকা মিগেলের অসাধারণ এক শটে।
রবসনের অনুপস্থিতি টের পেয়েছে কিংস। তাঁর অনুপস্থিতিই হয়তো নিষ্প্রভ করে দিয়েছিল অন্য ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন গোমেজকে। ম্যাচের একটা বড় অংশজুড়ে দলের অন্যরাও ছিলেন বিভ্রান্ত। রাকিব হোসেন কিংবা আশরোর গফুরভ—নিজেদের খেলাটা খেলতে পারছিলেন না কেউই। অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরা সোহেল রানাও সেভাবে দলকে চালাতে পারেননি। রক্ষণভাগে বারবারই সৃষ্টি হয়েছে ফাঁকফোকর। গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ ভুগেছেন আস্থার সংকটে।
ম্যাচের শুরুতেই সহজ সুযোগ নষ্ট করেন উদো। সেটি তৃতীয় মিনিটের মাথায়। সাত মিনিটের মাথায় মাজিয়ার রক্ষণের ভুলে ফাঁকায় বল পেয়ে যাওয়া আরেক ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন গোমেজ যে সুযোগটি নষ্ট করলেন, সেটিতে আক্ষেপ থাকবেই। দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করার খেসারতই এরপর দিয়েছে কিংস, গোল হজম করে। একাদশ মিনিটে কিংস গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে। গোল হজম করে তেড়েফুঁড়ে উঠবে কিংস—প্রত্যাশা ছিল এমনটাই। আক্রমণ কিংস করেছে ঠিকই, গোলের সুযোগও তৈরি হয়েছে একাধিক কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ম্যাচের ৪২ ও ৪৩ মিনিটেই পরপর দুটি সুযোগ নষ্ট করেন দরিয়েলতন ও উদো। প্রথমবার রাকিবের ক্রস থেকে বলে পা-ই লাগাতে পারেননি দরিয়েলতন, পরেরবার উদো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়েছে কিংস। মিগেল, দরিয়েলতন, উদোদের পাশাপাশি ডিফেন্ডার বিশ্বনাথও এ অর্ধে সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। দ্বিতীয়ার্ধে রাকিব হোসেনের জায়গায় শেখ মোরছালিনকে মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। সোহেল রানার জায়গায় নামেন রফিকুল ইসলাম। কিন্তু মোরছালিন ৭৭ মিনিটে ফাঁকায় বল পেয়েও সহজ এক সুযোগ নষ্ট করেন। তবে ঘরের মাঠে কিংস যে আসলেই অপ্রতিরোধ্য, সেপ্টেম্বরে মালেতে এই মাজিয়ার কাছে হারটা যে পুরোপুরি দুর্ঘটনা—মিগেলের এক গোলেই যেন সেটি প্রমাণিত।
এই জয়ে ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেল কিংস। গ্রুপের অন্য ম্যাচে আজ ভারতের দুই দল মোহনবাগান আর ওডিশা মুখোমুখি হবে। সে ম্যাচে ফল যা-ই হোক, কিংসকে শীর্ষস্থান থেকে নামাতে পারছে না কেউই।