ফুটবল একসময় ছিল গোল করার আনন্দময় এক খেলা। এরপর নানা নিয়ম ও শৃঙ্খলার বেড়াজাল আটকে দিল গোলের সে স্রোত। গোলের ধারা থেমে যাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ক্রীড়া লেখক এদোয়ার্দো গালেয়ানো লিখেছিলেন, ‘এখন এগারজন খেলোয়াড় ক্রসবার আগলে পার করে দেয়, তাদের আর গোল করার সময় থাকে না।’ তবে সেই দিনও এখন বদলেছে। নিয়ম ও যান্ত্রিকতার আগল ভেঙে প্রতিভাবান ফুটবলাররা ঠিকই গোল করার পথ বের করে নিয়েছেন।
লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা গত দুই দশক ধরে বিরতিহীনভাবে গোল করে গেছেন। সেই ধারাকেই এখন এগিয়ে নিচ্ছেন আর্লিং হলান্ড-কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। হচ্ছে নতুন নতুন সব গোলের রেকর্ডও। প্রিমিয়ার লিগে ফেব্রুয়ারি মাসে যেমন হয়েছে ম্যাচপ্রতি গোল করার নতুন এক রেকর্ড।
যেখানে ওয়েস্ট হাম-ব্রেন্টফোর্ডের মাসের শেষ ম্যাচেও দেখা মিলেছে ৬ গোলের। এই ছয় গোলসহ ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে হয়েছে ৪২ ম্যাচে ১৫৮ গোল। যেখানে ম্যাচপ্রতি গোল ছিল ৩.৮টি। এর আগে কখনোই প্রিমিয়ার লিগের কোনো নির্দিষ্ট মাসে এই হারে গোলের দেখা মেলেনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে গোল হওয়ার এই ধারা অবশ্য একেবারে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। চলতি মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগে দেখা গেছে গোলবন্যা। ২০২৩-২৪ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ম্যাচপ্রতি গোল হয়েছে ৩.২৫টি। যা কিনা প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ম্যাচ প্রতি গোলের সর্বোচ্চ হার ছিল ২.৮৫।
এমনকি সর্বোচ্চ স্তরের ইংলিশ ফুটবলে এর চেয়ে বেশি ম্যাচপ্রতি গোলের খোঁজ নিতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে। সে মৌসুমে ম্যাচপ্রতি গোল হয়েছিল ৩.৩৪টি করে। সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য এ ফেব্রুয়ারিতেই সবচেয়ে বেশি গোল দেখা গেছে, এমন নয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ৬৯ ম্যাচে গোল হয়েছিল ২০৯টি, ম্যাচপ্রতি গোল ৩.০৩টি।
ফেব্রুয়ারিতে গোল করায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আর্সেনাল। মিকেল আরতেতার দল ৪ ম্যাচে গোল করেছে ১৮টি। এক মাসে এর আগে কখনো এত গোল করেনি ‘গানার’রা।
এর আগে ২০১২ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তারা গোল করেছিল ১৫টি করে। তবে সামগ্রিকভাবে এই মৌসুমে গোলে সবার ওপরে আছে লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের দল চলতি মৌসুমে গোল করেছে ৬৩টি। তবে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়তে হলে লিভারপুলকে নাটকীয় কিছু করে দেখাতে হবে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে সিটি সব মিলিয়ে গোল করেছিল ১০৬টি। ‘অল রেড’রা ম্যাচপ্রতি ২.৪২ গোলের ধারা ধরে রাখলে মে মাসের শেষে গিয়ে সব মিলিয়ে করতে পারবে ৯৪ গোল।
গোল করার বিপরীতে হয়ে যেতে পারে গোল হজমের নতুন রেকর্ডও। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে (৪২ ম্যাচের মৌসুম) সুইনডন টাউন মৌসুমে ১০০ গোল হজমের বিব্রতকর এক রেকর্ড গড়েছিল। তবে সব মিলিয়ে ৪ ম্যাচ কম খেলতে হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ রেকর্ড ‘বেঁচে’ যেতে পারে শেফিল্ড ইউনাইটেড। যারা এখন পর্যন্ত ম্যাচপ্রতি ২.৫৪ গড়ে হজম করেছে ৬৬ গোল। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত গোল হজমের এই হার অব্যাহত থাকলে সব মিলিয়ে শেফিল্ডের জালে বল জড়াবে ৯৬ বার। তবে দুই একটি ম্যাচে গোলবন্যায় ভাসলে, সে ক্ষেত্রে ভেঙে যেতে পারে সুইনডনের রেকর্ডও।
গোলের সংখ্যা বাড়ার কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্য এ মৌসুমে যোগ করা সময়ের বেড়ে যাওয়াকেও দিতে হবে। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে চলতি মৌসুমে গোল হয়েছে ৭৮টি। এখনো লিগে ১২২ ম্যাচ বাকি আছে। অথচ যোগ করা সময়ে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৮৫ গোলের রেকর্ড ছুঁতে প্রয়োজন মাত্র ৭ গোল। ২০১৮-১৯ ও ২০২১-২২ মৌসুমে যোগ করা সময়ে দেখা গিয়েছিল ৮৫ গোল। যা এবার নিশ্চিতভাবেই ভাঙবে।