হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে যেন বিয়েবাড়ি। রাস্তার পাশেই চমৎকার সাজানো একটা তোরণ। বাড়িতে ঢোকার মুখ পর্যন্ত জোনাকি বাতি জ্বলছে। বাড়ির ভেতর থেকে উঁচু ভলিউমে ভেসে আসছে হিন্দি গান। আসলে এতসব আয়োজন কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য নয়। সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দার বাড়ি ফেরা ঘিরেই এত আয়োজন। কলসিন্দুর গ্রাম থেকে শুরু করে মন্দিরগোনা মারিয়ার বাড়ি পর্যন্ত এলাকাবাসী তৈরি করেছে তিনটি সুসজ্জিত তোরণ।
এসব আনন্দ আয়োজনের উপলক্ষ ছিল মারিয়া মান্দাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন থেকে পেয়েছেন এক দফা সংবর্ধনা। এরপর শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে সাফজয়ী বাংলাদেশ দলে কলসিন্দুরের আট মেয়েকে। আজ কলসিন্দুর স্কুল ও গামারিতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খানের উদ্যোগে দেওয়া হলো আরেক দফা সংবর্ধনা। যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন।
এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে কিশোর আলোর নবম জন্মদিন পালন করা হয় কলসিন্দুর স্কুলে। কেক কাটেন সদ্য সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দলের আট ফুটবলার—মারিয়া মান্দা, সানজিদা আক্তার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, তহুরা খাতুন, মার্জিয়া খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, শিউলি আজিম ও সাজেদা খাতুন।
‘আমার পৃথিবী অনেক বড়’—কেকের ওপরে লেখা এই স্লোগান ছিল ফুটবলারদের মুখে মুখে। কেক কাটার সময় ‘শুভ জন্মদিন কিশোর আলো’ বলেও হাততালি দিলেন ফুটবলাররা।
আনন্দের এই অনুষ্ঠানেও ফুটবলারদের মুখে ছিল একটুখানি কষ্টের রেশ। মারিয়া মান্দার বাড়ি মন্দিরগোনা যেতে পার হতে হয় নেতাই নদ। সেতু না থাকায় স্থানীয় অধিবাসীদের ভোগ করতে হয় অবর্ণনীয় কষ্ট। আজ কিশোর আলোর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সেই দুঃখ অবসানের দাবি করলেন সানজিদা, ‘মারিয়ার বাড়িতে যাওয়ার পথে যে নদীটা আছে, সেখানে আমরা একটা সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই আমরা এই নদী পার হয়ে গুচ্ছগ্রাম খেলার মাঠে অনুশীলন করি। স্কুলের নতুন যে ফুটবলাররা উঠে আসছে, তাদেরও ওই মাঠে গিয়ে অনুশীলন করতে হয়। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় সেখানে যেতে সমস্যা হয় আমাদের।’
নদীর পাড়ে বাঁধা থাকে একটামাত্র নৌকা। আজ দুপুরে ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, নদীর দুই পারে আড়াআড়িভাবে বাঁধা একটা দড়ি। এই দড়ি দিয়েই টেনে টেনে নৌকায় নদী পার হচ্ছেন স্থানীয় জনগণ। নদীর পাড়েই বাড়ি জাতীয় দলের ডিফেন্ডার শিউলি আজিমের। নদীতে সেতু নির্মাণের পাশাপাশি ভাঙন রোধে ব্লক দেওয়ারও দাবি জানালেন শিউলি, ‘আমাদের বাড়ির পাশে গির্জা ও মসজিদ রয়েছে। এখানে একটা মাদ্রাসাও আছে। ভাঙনের কারণে এগুলো হুমকির মুখে। ভরা বর্ষায় চাইলেও এই ঘাট দিয়ে কেউ পার হতে পারে না। এ জন্য আমরা নদীর পাড়ে ব্লক দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি নদীতে যেন একটা সেতুও নির্মাণ করা হয়।’
কিশোর আলোর জন্মদিন কলসিন্দুর গ্রামে পালন করা হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণভাবে। ঢাকা থেকে মেয়েদের জন্য আনা হয় বিভিন্ন উপহার—কিশোর আলো লোগো–সংবলিত টি-শার্ট, মগ, ফুটবল।
ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই ঢাকা থেকে রওনা হয় কিশোর আলোর টিম। সকাল সাড়ে আটটায় ময়মনসিংহ শহরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও সদস্য হামিদুল হক।