ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম
ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম

মেসির রাতটা নীরব করতে প্রস্তুত দেশম

তাঁকে পানি বাহকের বেশি কিছু ভাবতে পারেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা। বলেছিলেন, ‘তার মতো খেলোয়াড় আপনি রাস্তার কোনাতেও পাবেন।’ জবাবটা ঠিকই দিয়েছিলেন দিদিয়ের দেশম। বলেছিলেন, ‘রাস্তার কোনায় দাঁড়ানো কজন খেলোয়াড় আপনি পাবেন, যার কিনা দুটি ইউরোপিয়ান কাপের (চ্যাম্পিয়নস লিগ) শিরোপা আছে?’

দেশম-ক্যান্টোনার এই কথার লড়াই ১৯৯৬ সালের। সেবারই জুভেন্টাসের হয়ে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব জিতেছিলেন দেশম। এর আগে প্রথমবার জিতেছিলেন ১৯৯৩ সালে মার্শেইয়ের হয়ে। অবশ্য দেশম যদি উত্তরটা ১৯৯৮ সালে দিতেন, তবে ক্যান্টোনাকে মনে করিয়ে দিতে পারতেন তাঁর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাও।

অবশ্য কে জানত দেশম-রূপকথা ১৯৯৮ সালের ১২ জুলাই প্যারিসে বিশ্বকাপ জিতেই শেষ হয়ে যায়নি। সেই গল্প ভিন্নরূপে পুনরুত্থিত হয়েছে ৪ বছর আগে রাশিয়ায়। যখন ইতিহাসের তৃতীয় খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন দেশম। তাঁর আগে এই অর্জন ছিল শুধু ব্রাজিলের মারিও জাগালো ও জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের।

কখনো হাল না ছেড়ে নিজের শতভাগ উজাড় করে দেওয়া দেশমের সামনে সুযোগ এখন আরও ওপরে ওঠার। যেখানে ওঠার কথা অন্য কোনো কোচ শুধু স্বপ্নেই ভাবতে পারেন। কোচ হিসেবে এখন দুটি বিশ্বকাপ জেতার অনন্য সুযোগ দেশমের সামনে। আর্জেন্টিনাকে আজকের ফাইনালে হারাতে পারলে ইতালিয়ান কোচ ভিত্তোরিও পোজ্জোর পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পাবেন দেশম। পোজ্জো এই কীর্তি গড়েছিলেন ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে।

ছন্দে থাকা মেসিকে কীভাবে থামাবেন দেশম?

বাস্তবতা অবশ্য মুদ্রার নির্মম এক পিঠকেই সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই চায় না দেশম বিশ্বকাপ জিতে এই মাইলফলক স্পর্শ করুক। দেশমের ভাষ্য, কিছু ফরাসিও হয়তো চান না ফ্রান্স এবার বিশ্বকাপ জিতুক। বিশ্বের মানুষের বড় একটি অংশকে চোখের জলে ভাসিয়ে শিরোপা জিততে হবে দেশম ও তাঁর দলকে। অনেক মানুষের প্রার্থনা ও চাওয়াকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে হবে তাঁকে। কিন্তু কেন? কারণ একটাই, লিওনেল মেসি। 

নিজের শেষ বিশ্বকাপটা মেসি শিরোপা হাতেই শেষ করুক, তাঁর ‘শত্রু’রও নাকি এমনটাই চাওয়া! দেশমও বুঝতে পেরেছেন, তাঁর ইতিহাসের চূড়ায় ওঠার আনন্দটা খুব বেশি মানুষকে স্পর্শ করবে না।

বরং ‘মেসি মেসি’ ধ্বনিকে কবর চাপা দিয়েই মাইলফলকের চূড়ায় উঠতে হবে তাঁকে। তা যে মানুষটির অর্জন কারও কাম্য নয়, তিনি কী ভাবছেন এ নিয়ে? তিনি কি নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করছেন? দেশমের উত্তর, ‘আমি প্রায়ই নিঃসঙ্গ বোধ করি। তবে এটা আমাকে একেবারেই বিরক্ত করে না।’

হ্যাঁ, সত্যি এটাই যে উদ্‌যাপনের সঙ্গী হিসেবে খুব বেশি মানুষকে দেশম পাবেন না। তবে সেসব নিয়ে ভাবার মানুষও যে তিনি নন।