সেভিয়ার বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের রাত যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইবেন হ্যারি ম্যাগুয়ার ও দাভিদ দে হেয়া
সেভিয়ার বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের রাত যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইবেন হ্যারি ম্যাগুয়ার ও দাভিদ দে হেয়া

ইউরোপা লিগ

ম্যাগুয়ার–দে হেয়ার শিশুতোষ ভুলে ইউনাইটেডের বিদায়

সেভিয়া ৩ (৫) : (২) ০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

ডিফেন্ডারের ছদ্মবেশে প্রতিপক্ষের প্লে–মেকার তকমা অনেক আগেই পেয়ে গেছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার। একের পর এক শিশুসুলভ ভুলে ভার্চুয়াল জগতেও বনে গেছেন হাসির পাত্র। তবু কী করে যেন তিনিই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নেতৃত্বে রয়ে গেছেন!

গোলকিপিংয়ে আবার এক কাঠি সরেস দাভিদ দে হেয়া। প্রায় এক যুগ হলো ইউনাইটেডের গোলবারের নিচে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু জেতানোর চেয়ে দলকে হারানোর মতো পরিস্থিতিতেই ফেলেছেন বেশি।

ইউনাইটেড সমর্থকদের কাছে ‘অপরাধী’ হয়ে থাকবেন ম্যাগুয়ার–দে হেয়া

সহ্য শক্তি হারানো সমর্থকদের চাপে এ মৌসুম শেষে ম্যাগুয়ার–দে হেয়াকে খুব সম্ভবত ছেড়ে দেবে ইউনাইটেড। এর আগেই ক্লাবের সর্বনাশ করে ছাড়লেন তাঁরা। দুজনের শিশুতোষ ভুলে সেভিয়ার কাছে ৩–০ ব্যবধানে উড়ে গেল রেড ডেভিলরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৫–২ অগ্রগামিতায় ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল স্প্যানিশ ক্লাবটি।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে গত সপ্তাহে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। শেষ দিকে জোড়া আত্মঘাতী গোলে ২–২ সমতা নিয়ে ফেরে সেভিয়া। আত্মঘাতী গোল দুটির শেষটি ছিল বদলি নামা ম্যাগুয়ারের।

সেদিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেভিয়ার মাঠ রামোন সানচেজ পিজহুয়ান স্টেডিয়ামে আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করেছেন ম্যাগুয়ার। এত ভুলের পরও তাঁর হাতেই অধিনায়কের বাহুবন্ধনী তুলে দিয়েছিলেন এরিক টেন হাগ। ইউনাইটেড কোচের তা ছাড়া আর উপায়ও ছিল না।

সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ সেভিয়ার খেলোয়াড়দের

নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ম্যাচে খেলা হয়নি দলের প্রাণভোমরা ব্রুনো ফার্নান্দেজের। নাটকীয়কতায় ঠাসা সে ম্যাচেই চোটে পড়ে মৌসুমই শেষ হয়ে গেছে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজের। পায়ে আঘাত পেয়ে ছিটকে গেছেন রাফায়েল ভারানও। চেনা মঞ্চে তাই কিছুটা এগিয়ে থেকেই খেলতে নেমেছিল সেভিয়া। ঐতিহাসিকভাবেও তারাই তো এগিয়ে!

রিয়াল মাদ্রিদ যদি হয় চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা, তাহলে সেভিয়া তর্কাতীতভাবে ইউরোপা লিগের। রেকর্ড ৬বার ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রতিযোগিতার ট্রফি ছুঁয়ে দেখেছে তারা। ‘লাকি নম্বর সেভেন’ থেকে এখন আর ৩ ধাপ (সেমির দুই লেগ ও ফাইনাল) দূরে ইভান রাকিতিচ–ইয়াসিন বুনু–মার্কোস আকুনিয়ারা।

অথচ এ মৌসুমে কোনো ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সুবিধা করতে পারছে না সেভিয়া। লা লিগায় অবনমন এড়াতে লড়তে থাকা ক্লাবটি মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে ছাঁটাই করেছে দুই হাই–প্রোফাইল কোচ হুলেন লোপেতেগি ও হোর্হে সাম্পাওলিকে। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দিয়েছে হোসে লুইস মেন্দিলিবারকে। অখ্যাত এই কোচই টেন হাগের সব কৌশল ‘অকেজো’ করে ছাড়লেন।

ইউনাইটেডের ৩ গোল হজমেই দায় দে হেয়ার। ম্যাচের ৮ মিনিটে সেভিয়া এগিয়ে যায় দে হেয়া–ম্যাগুয়ারের ‘যৌথ প্রযোজনা’র গোলমালে। দুই পাশেই সেভিয়ার খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও দে হেয়ার কাছ থেকে বল চান ম্যাগুয়ার। নিরাপদ নয় জেনেও স্প্যানিশ গোলরক্ষক পাস বাড়ান ইংলিশ ডিফেন্ডারকে। ডি বক্সের কিনারে বল তাঁর পায়ে আসতেই কেড়ে নিতে আসেন এরিক লামেলা। উপায় না দেখে বাঁ দিকে থাকা ওয়ান বিসাখাকে পাস দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লামেলা ছোঁ মেরে বল কেড়ে নিয়ে দেন ইউসেফ এন–নেসিরিকে। বক্সে দে হেয়াকে একা পেয়ে তাঁকে ফাঁকি দিতে ভুল করেননি মরক্কোর হয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা এই স্ট্রাইকার।

জোড়া গোল করেছেন এন–নেসিরি

৮১ মিনিটে ইউনাইটেডের সমাধিতে এপিটাফ লেখার কাজটাও করেন এন–নেসিরি। এবার তো ডি বক্সের বাইরে এসে বল তাঁর মুখেই তুলে দেন দে হেয়া। অরক্ষিত জাল দূরপাল্লার নিখুঁত শটে কাঁপান এন–নেসিরি।

বিরতির পরপরই সেভিয়ার ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া গোলেও একরকম ভাস্কর্য হয়ে ছিলেন দে হেয়া। রাকিতিচের কর্নার থেকে হেড করেন লোইক বাদে। বল বারে লেগে গোললাইন পার হওয়ার আগে যথেষ্ট সময় থাকলেও ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন দে হেয়া।

রক্ষণভাগের দুঃস্বপ্নের রাতে আরও গোল খেতে পারত ইউনাইটেড। কিন্তু আকুনিয়া সেন্টিমিটার ব্যবধানে অফসাইডের ফাঁদে পড়ায় বিরতির আগমুহূর্তে লুকাস ওকাম্পোসের গোল ভিএআরে বাতিল হয়ে যায়। ম্যাচের খলনায়ক ম্যাগুয়ার–দে হেয়া আর নায়ক এন–নেসিরি হলেও অগোচরের নায়ক আসলে ওকাম্পোসই। পুরো মাঠ চষে বেড়িয়ে ইউনাইটেডের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন এই আর্জেন্টাইন উইঙ্গার।

এ নিয়ে টানা ৬ মৌসুম স্প্যানিশ ক্লাবের কাছে হেরে ইউরোপা লিগ থেকে ছিটকে গেল ইউনাইটেড। এক সেভিয়ার সঙ্গেই পেরে ওঠেনি ৩ বার!

সেভিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে জোসে মরিনিওর এএস রোমা, আনহেল দি মারিয়ার জুভেন্টাস আর পেপ গার্দিওলার শিষ্য জাবি আলোনসোর বেয়ার লেভারকুসেন।

প্রথম লেগে ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লেও ঘরের মাঠে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রোমা। ফিরতি লেগে ডাচ ক্লাব ফেয়েনুর্দকে হারিয়েছে ৪–১ ব্যবধানে। একই ব্যবধানে বেলজিয়ামের ইউনিয়ন সেন্ট গিলইসেকে হারিয়েছে জার্মান ক্লাব লেভারকুসেন। আর স্পোর্তিং লিসবনের মাঠে ১–১ এ ড্র করলেও দুই লেগ মিলিয়ে ২–১ অগ্রগামিতায় শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে জুভেন্টাস।

ইতালিয়ান ফুটবল যে আবারও জেগে উঠেছে, সেটা এবারের উয়েফা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় তাদের সাফল্য দেখলেই বোঝা যায়। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে ‘মিলান ডার্বি’ নিশ্চিত করেছে ইন্টার ও এসি মিলান। দুই দলের একটি এবার ফাইনালও খেলবে। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার ইউরোপা লিগের শেষ চারে নাম লেখাল এএস রোমা ও জুভেন্টাস।

ভাবছেন এখানেই শেষ! মোটেও না। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের তৃতীয় শীর্ষ প্রতিযোগিতা কনফারেন্স লিগ সেমিফাইনালেও যে উঠে গেছে আরেক ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্তিনা! উয়েফা আয়োজিত আসরের এক মৌসুমে ইতালির পাঁচ ক্লাবের সেমিফাইনালে ওঠার ঘটনা এবারই প্রথম।

ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে কে–কার মুখোমুখি

জুভেন্টাস–সেভিয়া

এএস রোমা–লেভারকুসেন

* প্রথম লেগ ১১ মে, ফিরতি লেগ ১৮ মে