ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গেছেন, সঙ্গে নেইমার, করিম বেনজেমাও।
রোনালদোর বয়স এখন ৩৯, বেনজেমার ৩৭, নেইমারের ৩২। তাঁরা তিনজনই সৌদি আরবের লিগে যোগ দিয়েছেন গত বছর দুয়েকের মধ্যে। রোনালদো, বেনজেমার তো এটা ক্যারিয়ারের পড়তি সময়ই বলা যায়, নেইমারও আসলে চোট-বাজে ফর্ম মিলিয়ে কিছুটা শেষের গানই শুনতে শুরু করেছিলেন। তবু তাঁর ওই বয়সে সৌদি লিগে চলে যাওয়াটা কিছুটা বিস্ময় হয়েই এসেছিল। এই বিস্ময় হতভম্ব হওয়ার মতো খবরে রূপ নেবে যদি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আগামী এক–দুই বছরের মধ্যে ইউরোপের ফুটবল ছেড়ে সৌদি আরবে চলে যান।
সৌদি প্রো লিগের প্রধান নির্বাহী ওমর মুগারবেলের কথা সত্যি হলে সে রকম কিছু হতে পারে নিকট ভবিষ্যতেই। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুগারবেল দাবি করেন, ভিনিকে সৌদি প্রো লিগে দেখতে পাওয়াটা শুধুই সময়ের ব্যাপার।
ইউরোপের তারকা ফুটবলারদের পাওয়ার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই উঠে পড়ে লেগেছে সৌদি আরব। এটা তাদের দীর্ঘমেয়াদি এক পরিকল্পনার অংশ। সৌদির প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশটিকে বৈশ্বিক ক্রীড়ার কেন্দ্রস্থল বানানোর যে পরিকল্পনা, তারই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে খেলাধুলায় ৫০০ কোটি পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব। এরই মধ্যে দেশটিতে বেশ কিছু হাই প্রোফাইল বক্সিং ম্যাচ ও ফর্মুলা ওয়ান টুর্নামেন্ট হয়েছে। দেশটির সরকারি মালিকানাধীন পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিক। এ ছাড়া ছেলেদের পেশাদার এলআইভি গলফ সিরিজও চালু করেছে সৌদি আরব। কিছুদিন আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়েছে ২০৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনের স্বত্বও।
যদিও খেলাধুলায় সৌদি আরবের এত এত টাকা ঢালা ‘স্পোর্টসওয়াশিং’–এর অংশ বলেও মনে করছেন অনেকে। তেলসমৃদ্ধ দেশটি মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সব বিতর্ক ধুয়ে মুছে ফেলতে টাকা ঢালছে খেলাধুলায়, এমন অভিযোগ কিছুদিন পরপরই উঠছে।
যা–ই হোক, সৌদি প্রো লিগে ইউরোপের নামীদামি খেলোয়াড়দের টেনে আনাও সেই পরিকল্পনারই একটা অংশ। রোনালদো, বেনজেমা, নেইমার তো গেছেনই, শোনা যাচ্ছে মো. সালাহ, কেভিন ডি ব্রুইনাদের মতো ৩০–এর ওপারে চলে যাওয়া খেলোয়াড়, এমনকি কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুসের মতো তরুণদের নামও। মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুগারবেল স্পষ্ট করেই বলেছেন, এটা এখন আর স্বপ্ন নয়। এখন এটা শুধু সময় আর আলোচনার ব্যাপার।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ২৪ বছর বয়সী ভিনিসিয়ুসের বর্তমান চুক্তি ২০২৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর রিলিজ ক্লজ (রিয়াল মাদ্রিদের অনিচ্ছায় তাঁকে অন্য কোনো ক্লাব কিনে নিতে চাইলে যে টাকা দিতে হবে) ১০০ কোটি ইউরো। টাকার অঙ্ক অবশ্য সৌদি আরবের জন্য কোনো সমস্যা নয়। দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) ৯৩ হাজার কোটি ডলারের, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় তহবিলগুলোর একটি। ভিনিসিয়ুসের রিলিজ ক্লজের টাকাটা সেই তুলনায় সমুদ্রের এক ফোঁটা জলের মতো। সৌদি আরবের মূল চ্যালেঞ্জ তাই অর্থ নয়, ভিনিকে রাজি করানো।
ভিনি কেন রাজি হবেন, সেই যুক্তি দিতে গিয়ে মুগারবেল বলেন, ‘আমাদের লিগে বৈশ্বিক আগ্রহ এখন অনেক বেড়েছে। এটা এখন বিশ্বের ১৬০টি দেশে সম্প্রচারিত হয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একই সঙ্গে ইংরেজি, পর্তুগিজ ও মান্দারিন ভাষায় আমরা সক্রিয়। বৈশ্বিক অনুসারীদের আগ্রহ বিবেচনা করে আমরা আরও বেশি ভাষায় এটা চালু করব।’
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এরই মধ্যে সৌদি লিগের সবচেয়ে বড় প্রচারক হয়ে উঠেছেন। বেশ কয়েকবার বলেছেন, সৌদি লিগ এই মুহূর্তে ফরাসি লিগ আঁ-র চেয়েও ভালো।
আর সবকিছুর পরে মূল কথা হচ্ছে, সৌদি আরবের ক্লাবগুলোয় থাকে বিশাল অর্থের হাতছানি। ইউরোপের ক্লাবগুলোকে নিজ নিজ দেশের লিগ কর্তৃপক্ষের একটা নির্দিষ্ট বেতনসীমার মধ্যে থেকে পরিচালনা করতে হয়। এর ফলে চাইলেও কোনো খেলোয়াড়কে অঢেল বেতন দেওয়া সম্ভব হয় না। সৌদি আরবের লিগের ক্ষেত্রে এই নিয়মের কোনো বালাই নেই। সেখানে রোনালদো, নেইমাররা সৌদি আরবে যে বেতন পান বলে শোনা যায়, সেটা ইউরোপের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়ের জন্যও স্বপ্নের মতো।
রোনালদো যেমন আল নাসরে বছরে ২০ কোটি ইউরোর মতো শুধু বেতন পান বলে গুঞ্জন আছে, নেইমার পান ১০ কোটি। অন্যদিকে কিলিয়ান এমবাপ্পের রিয়ালে বেতন ৩ কোটি ১০ লাখ ইউরোর মতো, ভিনিসিয়ুসের আড়াই কোটির মতো। তার মানে সৌদি আরবে গেলেই ভিনি বা এমবাপ্পের বেতন এক লাফে ৮–১০ গুণ কিংবা এরও বেশি বেড়ে যেতে পারে।
ভিনিসিয়ুস কি পারবেন সেই হাতছানি উপেক্ষা করতে? কিংবা পারলেও কত দিন!