গোললাইন থেকে

স্পেনের সঙ্গে অন্য দলটা কে

১৯৭৮ থেকে পুরোদমে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে আসছি টিভিতে। ৪৪ বছর হলো, কিন্তু এমন বিশ্বকাপ আগে দেখিনি। গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচ শেষেও জোর দিয়ে বলতে পারছি না, কোন দল যাবে নকআউটে। কাকে রেখে কাকে এগিয়ে রাখব, বোঝা কঠিন। এবারের বিশ্বকাপটা অন্য রকমই লাগছে।

যেমন ধরুন, আজ ‘ই’ গ্রুপের স্পেন-জাপান, কোস্টারিকা-জার্মানি ম্যাচে চার দলেরই সুযোগ আছে। সমীকরণের মারপ্যাঁচ এমনই যে প্রথম দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া স্পেন এই জায়গা থেকেও বিদায় নিতে পারে। তবে স্পেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কয়েকজন দুর্দান্ত তরুণ প্রতিভা আছে স্পেন দলে, যারা ম্যাচ ঘোরাতে পারে। জাপানের সঙ্গে শক্তিতে স্পেনই এগিয়ে। ফলে স্পেনকে আমি নকআউটের দৌড়ে শীর্ষে রাখছি।

টুর্নামেন্টের জৌলুশ আর সৌন্দর্যের খাতিরেও চাই স্পেন থাকুক। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দলগুলোকে নিয়েই আমরা বেশি কথা বলি, মঙ্গল কামনা করি। তবে স্পেন থাকলে টুর্নামেন্টটা বাড়তি রং পায়। স্পেনের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে জানি, টিমটা খেলছেও ভালো। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে কোস্টারিকাকে উড়িয়ে দিয়েছে ৭ গোলে। এমন টিম বিদায় নিলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।

স্পেনের সঙ্গে তাহলে অন্য দলটা কে? জার্মানি? কোস্টারিকা বা জাপান? ২ ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা জার্মানির ভাগ্য অবশ্য তাদের হাতে নেই। অন্য ম্যাচের ওপর ঝুলে আছে নয়্যার-মুলারদের বিশ্বকাপ–যাত্রা। চারবারের বিশ্বসেরাদের নিয়ে আগেই বলেছিলাম, একটা পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। ২০১৪ সালে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গতবার গ্রুপ থেকেই বিদায়। এবার প্রথম ম্যাচেই জাপানের কাছে হেরেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে স্পেনের সঙ্গে কোনোমতে ড্র। এই জার্মানি এবারও গ্রুপ থেকেই বিদায় নিতে পারে এবং সেই শঙ্কাই বেশি।

গ্রুপে বাকি থাকল কোস্টারিকা আর জাপান। স্পেনের সঙ্গে বাজে শুরু করা কোস্টারিকা জাপানকে হারালেও খুব ভালো খেলছে না দলটি। আমি কেন জানি কোস্টারিকার ওপর বাজি রাখতে পারছি না। প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে আলোচনায় উঠে আসা জাপান দ্বিতীয় ম্যাচে খেই খারিয়েছে। তবে সুযোগ যেহেতু আছে, জাপান দ্বিতীয় রাউন্ডে চলেও যেতে পারে।

‘এফ’ গ্রুপে দুই ম্যাচেই হেরে কানাডা বাদ। সুতরাং তাদের নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও মরক্কোর মধ্যে দুটি দল যাবে নকআউটে। ক্রোয়েশিয়া আর মরক্কো হতে পারে সেই দুই দল। বেলজিয়ামের বিপক্ষে আজ ক্রোয়েশিয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বেলজিয়াম দলটা জ্বলে উঠতে পারছে না। তাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু ওদের সমস্যাও অনেক। গত ম্যাচে কেভিন ডি ব্রুইনাদের মনে হয়েছে নিজেদের ছায়া। বেলজিয়াম আজ জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে, তবে আমার মনে হচ্ছে, গ্রুপেই থমকে যাবে তাদের দৌড়।

এই গ্রুপ থেকে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গী হতে পারে মরক্কো। সেনেগাল যেমন নজরকাড়া ফুটবল খেলে পরশু নকআউটে নাম লিখিয়েছে, মরক্কোও পরের রাউন্ডে যেতে পারে বলে আমার ধারণা। কানাডার সঙ্গে ড্র হলেই চলছে তাদের। মরক্কোর ফুটবলারদের পায়ের কাজ ভালো। লাতিন আর ইউরোপের ছোঁয়া আছে ওদের খেলায়। মরক্কোর খেলা আমার বেশ ভালো লেগেছে। ওরা শরীরনির্ভর ফুটবল খেলছে না। তাই মরক্কোর উপর আস্থা রাখছি আমি।