ভদ্রলোকের নাম এনরিকো ভানজিনি। ইন্টার মিলানের সমর্থক। ইতালিয়ান ক্লাবটির প্রতি তাঁর ভালোবাসা সেই ৭ বছর বয়স থেকে। কিন্তু সান সিরোয় বসে খেলা দেখার সুযোগ হয়নি বহুকাল। গত বছর প্রথমবারের মতো সান সিরোয় গিয়ে দেখেছেন ইন্টারের খেলা। তাঁর বয়স তখন ৯৯ বছর।
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল প্রথম লেগে আজ সান সিরোয় এসি মিলানের মুখোমুখি হবে ইন্টার। সান সিরো মিলানের প্রতিবেশী দুই ক্লাবেরই ঘরের মাঠ। প্রথম লেগ ইন্টার খেলবে ‘অ্যাওয়ে’ দল হিসেবে। ফিরতি লেগে স্বাগতিক।
ভানজিনি প্রথম লেগ দেখতে মাঠে যাবেন না। ১০০ বছর বয়সে মাঠে গিয়ে খেলা দেখা? আসলে যেতে পারবেন না বলাই ভালো। ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাদুয়ায় নার্সিং হোম থেকে প্রথম লেগটি দেখবেন ভানজিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ভানজিনি তাকিয়ে আজকের এই ম্যাচে। কেন?
ভানজিনির কাছে এ প্রশ্নের উত্তর শুনলে কারও কারও নিজের পছন্দের ক্লাবকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে ইচ্ছা হতে পারে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স যখন ভানজিনির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে, তখন তাঁর গায়ে ইন্টারের জার্সি, পেছনে লেখা নাম। সেই জার্সি গায়েই ভানজিনি বলেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন ইন্টারকে জিততে দেখার আনন্দটা আমাকে দেন। আশা করি তিনি রাজি হবেন।’
ইতালির শীর্ষ লিগে ১৯০৯ সালে অভিষেকের পর কখনো অবনমিত না হওয়া ইন্টারের এমন সমর্থক হয়েও জীবনের দীর্ঘ একটা সময় মাঠে যেতে না পারার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন ভানজিনি। সেসব কারণ সমর্থকদের জন্য নতুন কিছু না হলেও ইন্টারের প্রতি ভানজিনির ভালোবাসার গভীরতাটা বোঝা যায়, ‘৭ বছর বয়সে ইন্টারকে ভালোবাসতে শুরু করি...কখনো মাঠে যেতে পারিনি। কারণ, টাকা ছিল না।’
পছন্দের ক্লাবের একটা জয় দেখতে আপনি কী করতে পারেন? প্রশ্নটি অবান্তর মনে হতে পারে, কারণ পছন্দের ক্লাবের জন্য সমর্থকমাত্রই পাগলাটে অনেক কিছুই করেন। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, ১০০ বছর বয়সী একজন মানুষ জীবনসায়াহ্নে এসে প্রিয় দলের একটা জয় দেখতে জীবনধারণের অবলম্বন নিজের পেনশন পর্যন্তও ছাড়তে রাজি, ‘আমি (একটা জয়ের জন্য) সবকিছুই করতে পারব। এমনকি নিজের সামান্য পেনশনও ছেড়ে দেব।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইতালিয়ান সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছেন ভানজিনি। ১৯৪৩ সালে মিত্রবাহিনীর কাছে ইতালির আত্মসমর্পণের পর জার্মানদের হাতে ধরা পড়েন। ঠিকানা হয় দাসাও নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। ভাগ্য তাঁকে সেখান থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার পর বাড়ি ফিরে আসেন ভানজিনি। বাস ও ট্রাকচালক হিসেবে শুরু করেন নতুন জীবন। ইন্টারকে সমর্থন দিয়ে গেছেন এর মধ্যেই। এবার তাঁর শততম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ জার্সি উপহার দিয়েছে তিনবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
ভানজিনির প্রাত্যহিক জীবনও ইন্টারময়—সকালে ঘুম থেকে উঠে ইতালির ক্রীড়া দৈনিক ‘লা গাজেত্তা দেল্লো’য় প্রিয় ক্লাবের খবর পড়ে দিন শুরু করেন। আইপডও আছে। অ্যাপ নামিয়ে কীভাবে খেলা দেখতে হবে সেসবও শিখে ফেলেছেন। এই বুড়ো বয়সে যে চাইলেই অন্য কোথাও গিয়ে খেলা দেখতে পারেন না, ‘আগে যেসব বন্ধুর বাসায় টিভি আছে, সেখাতে যেতাম। বাস চালানোর সময় যাত্রীদের বলেছি, চিৎকার–চেঁচামেচি করবেন না। আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু শুনছি।’ গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানে রেডিওতে ইন্টারের ম্যাচের ধারাবিবরণী আরকি!
ইন্টারের বর্তমান কোচ সিমোন ইনজাগি যা করছেন, তাতে খুব খুশি ভানজিনি। তাঁর এখন একটাই চাওয়া, নগর প্রতিদ্বন্দ্বী মিলানকে হারিয়ে ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যেন উঠতে পারে তাঁর প্রাণের ক্লাব ইন্টার।
শতবর্ষী সমর্থকের এই প্রার্থনা কি পূরণ হবে? ইন্টার কি শুনতে পাচ্ছে?