ফাইনালে অব দ্য ইয়ার খেলতে নামছেন জামালরা
ফাইনালে অব দ্য ইয়ার খেলতে নামছেন জামালরা

জামালের চোখে বাংলাদেশের জন্য ‘ফাইনাল অব দ্য ইয়ার’ যে ম্যাচ

মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জামাল ভূঁইয়ার প্রথম কথাতেই ফুটে ওঠে এই ম্যাচের গুরুত্ব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘কালকের ম্যাচ হবে আমাদের জন্য ম্যাচ অব দ্য ইয়ার। বড় ম্যাচ, ফাইনাল অব দ্য ইয়ার। জিততে হবে যেভাবেই হোক।’

জামাল ভূঁইয়ার ‘এই ফাইনাল অব দ্য ইয়ার’ ম্যাচ আগামীকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় শুরু হবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়। আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন হলো সেই কিংস অ্যারেনাতেই। সেখানেই বাংলাদেশ অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন, মঙ্গলবার বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ফিরতি লড়াইটা কোনো মাত্রায় পৌঁছেছে।

২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে উঠতে লড়ছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ। দুই দল দুটি ম্যাচ খেলছে। মালেতে ১২ অক্টোবর প্রথম ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। আগামীকাল ফিরতি ম্যাচের জয়ী দলই পাবে গ্রুপ পর্বের টিকিট।

ম্যাচটা বাংলাদেশ দলের জন্য ‘মরাবাঁচা’র। কারণ, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যেতে না পারলে পরবর্তী প্রায় এক বছর ফিফা-এএফসির প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ পাওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এ–ই যখন সমীকরণ, তখন মালদ্বীপের সঙ্গে ম্যাচকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন জামাল, ‘এই ম্যাচ বড় চ্যালেঞ্জ হবে আমাদের জন্য।’

পরক্ষণে অবশ্য আশার কথাও জামালের কণ্ঠে, ‘আমরা জানি, মালদ্বীপ নিজেদের মাঠে খুব ভালো খেলে। কিন্তু বাইরে ওদের দুর্বলতা দেখা যায়। তা ছাড়া ঘরের মাঠ খেলা আমাদের সুবিধা দেবে। তাই আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

জামালের জন্য মালদ্বীপ লড়াই ‘বাঁচা–মরা’র

জয়ের জন্য কী করণীয়, সেটাও জানেন অধিনায়ক, ‘আমাদের আরও প্রাণশক্তি নিয়ে খেলতে হবে। মালদ্বীপে যখন খেলেছি (১২ অক্টোবর), আমাদের প্রাণশক্তির একটু ঘাটতি ছিল। মাঠ ছিল আলাদা। ওরা মাঠে পানি দেয়নি। ওখানে আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম। তবে কাল ফুটবলারদের জন্য সবকিছু ভালোভাবে হবে আশা করি। কোনো অজুহাত চলবে না, আমাদের জিততে হবে।’

আনিসুর রহমান নিষিদ্ধ থাকায় মালের ম্যাচে পোস্টের নিচে অভিষেক হয়েছে তরুণ মিতুল মারমার। মিতুলের প্রশংসা করে জামাল বলেছেন, ‘সে দারুণ খেলেছে। অভিষিক্ত সেন্টারব্যাক শাকিলও ভালো খেলেছে।’ তবে কথা উঠেছে ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের গোল মিস নিয়ে। জামাল অবশ্য আশাবাদী, ফাহিম গোল পাবেন, ‘মালেতে সে দুর্ভাগা ছিল কিছুটা। একটা গোল করতে পারলে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে ফাহিম। তাকে আমাদের সমর্থন দিতে হবে। এটা ঠিক, স্ট্রাইকারদের ওপর চাপ আছে। শুধু স্ট্রাইকার নয়, সবার ওপরই চাপ আছে। মোরছালিন নেই। সে গোল পেয়েছে এর আগে। আশা করি ফাহিমও পাবে।’

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ‘হোম’ ম্যাচ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী জামাল

সংবাদ সম্মেলনে আগামীকালের ম্যাচে ‘হোম সুবিধা’ নিয়েই কথা হয়েছে বেশি। দুই দলই দাবি করেছে, কিংসের মাঠ তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা। ঘরের মাঠ বলে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মালদ্বীপের কোচ আলী সুজাইনও বলেছেন, কিংসের মাঠ তাঁদের বাড়তি সুবিধা দেবে।

মাঠ বাড়তি সুবিধা কি না—এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই মাঠ বসুন্ধরা কিংস ও শেখ রাসেলের হোম মাঠ। শুধু এই দুই দলের খেলোয়াড়েরাই নয়, এখানে অন্যরাও খেলে। ফলে, সবার জন্যই মাঠ একটা সুবিধা। এখানকার পরিবেশ দারুণ। বাংলাদেশের সেরা মাঠ এখন সম্ভবত এটিই।’

কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কথা, ‘মাঠ অবশ্যই আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা। কিংসের মাঠ খুব ভালো। মালের চেয়ে অনেক ভালো কন্ডিশন আমাদের জন্য। যেটা শুধু আমাদের জন্য নয়, ম্যাচের জন্যও ইতিবাচক। এটা আমাদের অবশ্যই সহায়তা করবে। আশা করি, পুরো মাঠই দর্শকে ভরে যাবে।’

ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা নিতে চান জামাল

ম্যাচ নিয়ে কাবরেরা শুনিয়েছেন আশার কথাও, ‘মালেতে দুই দলের তুমুল লড়াইয়ের পর আমরা ঢাকা ফিরেছি কিছুটা আশাবাদী মন নিয়ে। অনেক দিন পর আমরা মালেতে ড্র করেছি, যে ড্র আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। এখন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি, বিউটিফুল চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি। ঘরে খেলব, অনেক দর্শকের সামনে খেলব। আমরা উজ্জীবিত এবং সামনে তাকিয়ে আছি।’

গোল করতে না পারা এখনো সমস্যা কি না—এ প্রশ্নে বাংলাদেশ কোচ সরাসরি উত্তর দেননি। আস্থা রাখতে চান স্থানীয়দের ওপর, ‘আমরা একটা গোল করেছি মালেতে। সবকিছু ইতিবাচক। আমাদের নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে।’

জামাল তৈরি মালদ্বীপ–চ্যালেঞ্জের জন্য

মালদ্বীপের কোচ আলী সুজাইনের চোখে ম্যাচটা দুই দলের জন্যই ‘মরাবাঁচা’র। তাঁর কথা, ‘মালেতে প্রায় সমানে সমান ম্যাচ হয়েছে। দুর্ভাগ্য, আমরা ৮৭ মিনিটে গোল করে ধরে রাখতে পারিনি।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাঠে খেলা চাপ কি না—এ প্রশ্নে বলেন, ‘চাপ অনুভব করছি না; বরং আমি মনে করি ভালো মাঠ খেলা হবে। এটা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা; বাংলাদেশের জন্য নয়।’

আলী সুজাইন যোগ করেন, ‘অনেকে মনে করতে পারেন, ঘরের মাঠে মালদ্বীপকে হারাবে বাংলাদেশ। তবে আমি মনে করি, আমরা জিততে পারি। আমরা ভালো মাঠে ভালো ফুটবল খেলতে পারি। এই মাঠ আমাদের মালের চেয়েও ভালো। ফলে, এখানে আমরা ভালো খেলব। আপনি যদি ভাবেন মালদ্বীপ পিছিয়ে, আমি বলব, ভালো মাঠ আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেবে। এখানে বাংলাদেশ সমর্থন পাবে ঠিক। সমর্থন তো তারা মালেতেও পেয়েছে। মালের মাঠে আমাদের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি সমর্থন পেয়েছে।’