অবিশ্বাস্য অঙ্কের বেতন-বোনাস, একই সঙ্গে ক্রীড়া প্রকল্পের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ—এমন অভাবনীয় এক প্রস্তাবেই রিয়াল মাদ্রিদে এক পা দিয়ে ফেলেও পিএসজিতে ‘ইউটার্ন’ করেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
এমনও গুঞ্জন ছিল, এমবাপ্পে ইচ্ছা করলে দলের কোচই বদলে দিতে পারবেন। এমনকি কোন খেলোয়াড়কে দলে নেওয়া হবে, কাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়েও নাকি সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
সেই ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই নাকি নেইমারকে পিএসজি থেকে বিদায় করতে চেয়েছিলেন ফরাসি তারকা। তবে তাঁর সেই চাওয়া এখনো পূরণ হয়নি। বলা ভালো, পিএসজি তাঁর সেই খায়েশ মেটায়নি।
স্বাভাবিকভাবেই নেইমারের কানেও গেছে বিষয়টি। ব্রাজিলিয়ান তারকা যে সেটি ভালোভাবে নেবেন না, সেটি তো বলা বাহুল্যই।
সে কারণেই নেইমার ও এমবাপ্পের সম্পর্ক কেমন হবে—মৌসুমের শুরু থেকেই এমন একটি প্রশ্ন উঠেছিল ফুটবল বিশ্বে। চোটের কারণে লিগের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি এমবাপ্পে। লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ চোটমুক্ত হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ফরাসি এ স্ট্রাইকার। মঁপেলিয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচ ঘিরেই ঘটেছে অনেক কাণ্ড।
ম্যাচের প্রথমার্ধের শেষ দিকে আক্রমণের সময় ভিতিনিয়া বল এমবাপ্পেকে না দিয়ে লিওনেল মেসির দিকে বাড়িয়ে দেন। এমবাপ্পে সেই মুহূর্তে হাত-পা ছুড়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। সেটি চোখ এড়ায়নি কারোরই।
ওই আক্রমণেই আর যাননি ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা। ব্যাপারটি ছিল মারাত্মক দৃষ্টিকটু। ম্যাচের পরেও নাকি ড্রেসিংরুমে নেইমার-এমবাপ্পের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। যদিও সতীর্থদের হস্তক্ষেপে সেটি বেশি দূর গড়ায়নি। এর পর থেকে কেউ কারও মুখ দেখছেন না। যা নিয়ে নতুন মৌসুমের শুরুতেই উত্তপ্ত পিএসজি-শিবির।
নেইমারের বিদায়ের সঙ্গে পিএসজির সব পেনাল্টি নিজেই নেবেন—এমন একটা শর্তও নাকি দিয়েছিলেন। অথচ মঁপেলিয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচে প্রথম পেনাল্টি মিস করার পর দ্বিতীয় পেনাল্টিটি নেওয়ার সুযোগ আর পাননি এমবাপ্পে। দ্বিতীয় পেনাল্টি নিয়েছিলেন নেইমার, যা ড্রেসিংরুমে নেইমার-এমবাপ্পের হাতাহাতি হওয়ার পেছনের আরেকটা কারণ।
এমবাপ্পের চুক্তি অনুযায়ী, মাঠের নেতৃত্বও থাকবে তাঁর হাতে। মেসি, নেইমার, রামোসের মতো সিনিয়র ফুটবলারদের জন্য সেটি বেশ অসম্মানজনকই। এমবাপ্পেকে এমন ক্ষমতা দেওয়ায় তাই শুধু নেইমার নন, অখুশি পিএসজির অনেক ফুটবলারই। যে কারণে পিএসজিতে অনেকটা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছেন ফরাসি স্ট্রাইকার।
এমন ঘটনার পরে এক ফুটবলপ্রেমী পেনাল্টি নিয়ে পিএসজির সমালোচনা করে টুইট করেছিলেন। টুইটটি অনেকটা এ রকম, ‘এটা অফিশিয়াল, এমবাপ্পেই এখন পিএসজির হয়ে পেনাল্টি নেবেন। স্পষ্টতই এটা চুক্তির বিষয়। কারণ, বিশ্বের কোনো ক্লাবেই নেইমার পেনাল্টি নেওয়ার জন্য দ্বিতীয় পছন্দ হতে পারে না।’
টুইটটি এখানেই শেষ করেননি ওই ফুটবলপ্রেমী। তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, এটা চুক্তি নবায়নের বিষয়। এমবাপ্পে পিএসজিকে নিজের মনে করে!’ টুইটটি নজরে পড়েছে নেইমারের।
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার তাঁর ভেরিফায়েড টুইটার থেকে এই টুইটে ‘লাইক’ও দিয়েছেন, যা দুজনের সম্পর্ক আরও তিক্ত করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে পিএসজির সুখের ঘরে এমন আগুন নেভাতে ঘুম নেই নতুন কোচ গালতিয়েরের। জরুরি মিটিং ডেকেছিলেন তিনি। যদিও নেইমার ও এমবাপ্পেকে নিয়ে করা সে মিটিং শেষে এমবাপ্পের মন গলেনি বলেই খবর দিচ্ছে সংবাদমাধ্যম লা পারিসিয়ান।