বেলিংহামের ১৬ আর রিয়ালের ১৫—দুটি সংখ্যা। এ দুটি সংখ্যায় কোনো প্যাঁচ নেই, নেই কোনো রহস্য। যাঁরা পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করতে পছন্দ করেন, তাঁরা হয়তো এরই মধ্যে বুঝে গেছেন, সংখ্যা দুটি দিয়ে কী বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হচ্ছে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। সেখানে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। এবার বিষয়টি আরও পরিষ্কারই হয়ে গেল। রিয়াল মাদ্রিদের জুড বেলিংহাম যেহেতু ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়, এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালটা যেখানে হচ্ছে, সেই ওয়েম্বলিতে এর আগে বেলিংহামের খেলারই কথা। তা তিনি এখানে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ১৫টি ম্যাচ।
জিদান আমার প্রেরণা এবং তিনি মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যা করেছেন, আমি সেটাই করতে চাইজুড বেলিংহাম
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জুন ওয়েম্বলিতে নিজের ১৬তম ম্যাচটি খেলতে নামবেন বেলিংহাম। রিয়ালের ১৫তম বিষয়টি অবশ্য তা নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে এখন পর্যন্ত রেকর্ড ১৪টি শিরোপা জিতেছে রিয়াল, ১ জুন ১৫তম হবে কি না, সেটা দেখার অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব। বেলিংহাম অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েই রেখেছেন, ‘ওয়েম্বলিতে যাব ১৫তমর খোঁজে।’
বেলিংহামের কাছে অবশ্য এই সংখ্যাগুলো বেশি রোমাঞ্চ বা শিহরণের বিষয় নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল, সেটাও আবার খেলবেন নিজের শহর থেকে মেট্রোতে মাত্র সোয়া ২ ঘণ্টার দূরত্বের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এবং সেই ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ সাবেক ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। সেখানে খেলেই নিজেকে তিনি চিনিয়েছেন রিয়াল, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখসহ ইউরোপের সব বড় ক্লাবকে।
বেলিংহামের এই রোমাঞ্চ আর শিহরণের মূল খুঁজতে গেলে প্রথম নামটাই পাবেন স্ট্রাউরব্রিজ। ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডের ছোট্ট এক মার্কেট-টাউন। ছোট এই শহরের বড় ফুটবল তারকা বেলিংহাম। ফুটবলে তাঁর হাতেখড়ি স্টাউরব্রিজ ক্লাবেই। খুব বেশি দিন অবশ্য নিজের ছোট্ট শহরে থাকেননি বেলিংহাম। ৭ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমান ১০ মাইল দূরের মেট্রোপলিটন শহর বার্মিংহামে। খেলতে শুরু করেন সেখানকারই ক্লাব বার্মিংহাম সিটিতে।
এটা পাগলাটে। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার প্রথম ফাইনাল। সেটাও আবার ইংল্যান্ডে এবং ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে।জুড বেলিংহাম, রিয়াল মাদ্রিদের ইংলিশ তারকা
বার্মিংহাম সিটির যুব দলে ৯ বছর খেলে রপ্ত করেন ফুটবলের সব সারগাম। একপর্যায়ে পালা আসে সেই সারগাম দিয়ে সাজানো গান বড় মঞ্চে পরিবেশনের। বার্মিংহামের মূল দলে সেই কাজই করেছেন ২০১৯-২০ মৌসুমে। ফুটবল রোমান্টিকদের মুগ্ধ করে জিনেদিন জিদানের ভক্ত নজর কাড়েন বরুসিয়া ডর্টমুন্ড কর্তৃপক্ষের। পরের মৌসুমেই জার্মানির দলটি তাঁকে দলে ভেড়ায়। সেখানে তিন মৌসুম খেলার পর গত বছর বেলিংহামকে দলে ভেড়ায় রিয়াল।
রিয়ালের তাঁকে দলে ভেড়ানোর মানে ছিল একটাই—এবার বড় মঞ্চে ফুটবলের শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করার সুযোগ বেলিংহামের! সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি করে যেতে থাকলেন দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স। দ্রুতই বড় তারকা হয়ে উঠতে থাকেন গত বছরের জুনেই কিশোরের খোলস ছেড়ে যুবকের পোশাক পরা বেলিংহাম। এর মানে, তাঁর বয়স এখন মাত্র ২০ বছর।
ওয়েম্বলিতে এর আগে ১৫ বার খেললেও এ মাঠে তাঁর এবার পা রাখতে চলাটা অন্য রকমই। এবারই যে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলবেন তিনি। সেই ফাইনালে ওয়েম্বলিতে নিজের সাবেক দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে কেমন লাগছে বেলিংহামের? শোনা যাক তাঁর কণ্ঠেই, ‘এটা পাগলাটে। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার প্রথম ফাইনাল। সেটাও আবার ইংল্যান্ডে এবং ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে।’
এরপর নিজের সাবেক দলকে নিয়ে বলেছেন, ‘তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। ফাইনালে ওঠাটা তাদের প্রাপ্য ছিল। পুরোনো কিছু বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা হবে দারুণ ব্যাপার।’
ফাইনালে রিয়ালের হয়ে কী ভূমিকা রাখতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে নিজের আদর্শ জিনেদিন জিদানকে টেনে এনেছেন বেলিংহাম, ‘জিদান আমার প্রেরণা এবং তিনি মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যা করেছেন, আমি সেটাই করতে চাই।’
রিয়ালের হয়ে ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন জিদান। জার্মানিরই আরেক ক্লাব বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জেতা সেই ফাইনালে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক ভলিতে রিয়ালের জয়সূচক গোলটি করেছিলেন জিদান। বেলিংহামের স্বপ্নও এখন এমন কিছুই।