ম্যানচেস্টার সিটি তারকা ফিল ফোডেন
ম্যানচেস্টার সিটি তারকা ফিল ফোডেন

ফোডেন যেভাবে সিটির ‘নির্ভরযোগ্য’ হয়ে উঠলেন

আর্লিং হলান্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা কিংবা হুলিয়ান আলভারেজের সঙ্গে সচরাচর উচ্চারিত হয় না ফিল ফোডেনের নাম। এমনকি জ্যাক গ্রিলিশ, রদ্রি বা জন স্টোনসদের কাতারেও কদাচিৎ শোনা গেছে তাঁর কথা। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে সিটির অন্যতম সেরা পারফরমারের কথা বললে ফোডেনের নাম ওপরের দিকেই থাকবে।

মাঝে হলান্ড-ডি ব্রুইনারা যখন চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন, তখনো সিটিকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। সিটির আক্রমণভাগে ফোডেনের যতটা প্রভাব, ততটা কৃতিত্ব তিনি পান কি না, সে প্রশ্নও তাই কেউ চাইলে তুলতেই পারেন।
২০০৯ সাল থেকে সিটির সঙ্গে আছেন ফোডেন। ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে খেলে প্রস্তুত করেছেন নিজেকে। ২০১৬ সালে সিটির মূল দলে ডাক পান এই মিডফিল্ডার।

তখন ফোডেনের বয়স মাত্র ১৬। শুরুতে বদলি হিসেবে নামলেও মূল একাদশে সুযোগ পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হয় তাঁর। অল্প বয়সে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করলেও সিটির মূল দলে ফোডেন ছিলেন অনিয়মিত মুখ। ম্যাচ টাইমও ছিল না বলার মতো। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। এমনকি সে সময় খেলার ধরনের কারণে তাঁর নামও হয়েছিল ‘দ্য স্টকপকেট ইনিয়েস্তা’

সিটিতে প্রিমিয়ার লিগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৩ ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে ফোডেন খেলেছেন মাত্র ৩২৭ মিনিট। ২০১৯-২০ মৌসুমে সেটি বেড়ে হয় ২৩ ম্যাচ ও ৮৯২ মিনিট। ২০২০-২১ মৌসুমে ২৮ ম্যাচে খেলেন ১,৬১১ মিনিট। পরের মৌসুমে ২৮ ম্যাচে ২,১৩৪ মিনিট খেলার সুযোগ পান ফোডেন। ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩২ ম্যাচে মাঠে নেমে ১,৮৪২ মিনিট খেলার সুযোগ পান ফোডেন। এ ছাড়া তিন ম্যাচে অবশ্য চোটের কারণে বাইরে ছিলেন তিনি।

এভাবেই হ্যাটট্রিক উদ্‌যাপন করেন ফোডেন

এ চিত্র অবশ্য বদলে গেছে চলতি মৌসুমে, এ মৌসুমে লিগে এখন পর্যন্ত সিটির খেলা ২৬ ম্যাচের প্রতিটিতে সুযোগ পেয়েছেন ফোডেন। যেখানে বেশির ভাগ ম্যাচেই পুরো সময় মাঠে ছিলেন এই ইংলিশ তারকা। এই ২৬ ম্যাচে ৯ গোলের পাশাপাশি ৭টি সহায়তাও আছে তাঁর। ৯ গোলের মধ্যে একটি হ্যাটট্রিকও আছে। ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে সিটির ৩-১ গোলের জয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফোডেন।

বিশেষ করে মাঝমৌসুমে হলান্ড-ডি ব্রুইনারা যখন চোটের সঙ্গে লড়ছিলেন, তখন আক্রমণভাগে দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন ফোডেনই। ডি ব্রুইনা আসার পর তাঁর কাঁধ থেকে দায়িত্বের বোঝা কিছুটা নেমেছে বটে, তবু ফোডেন যে গার্দিওলার বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন, তা বলাই যায়। এ মৌসুমে হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি এভারটনের বিপক্ষে সমতাসূচক গোল, বোর্নমাউথের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো গোল এবং শেফিল্ডের বিপক্ষে জোড়া সহায়তা করেও বড় প্রভাব রেখেছেন ফোডেন।

এর আগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। সিটি কোচ বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, গোল এবং সহায়তার দিক থেকে ফিল (ফোডেন) দলের জন্য সবচেয়ে প্রভাববিস্তারী মৌসুম পার করছে। সে গোল করে আনন্দ পায় এবং বক্সের ভেতর কাছাকাছি জায়গায় বেশ হুমকিও তৈরি করতে পারে। সে সব সময় সেখানে উপস্থিত থাকে। অনন্যসাধারণ একজন খেলোয়াড়। সে এখনো তরুণ এবং সিটির হয়ে ২৫০ ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এই পরিসংখ্যান দলে তার প্রভাবকে তুলে ধরে।’ এর আগে ২০২২ সালে ফোডেনকে নিয়ে গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘সে পাঁচটি পজিশনে খেলতে পারে।’

ফোডেন নিজের প্রভাব রাখতে শুরু করলেও সিটিতে এখনো আসল পথচলা শুরু বাকি। এ মৌসুম শেষেই ডি ব্রুইনার সৌদি আরব পাড়ি জমানোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদি সে খবর সত্যি হয়, তবে সিটিতে আগামী মৌসুম থেকে মিডফিল্ড জেনারেলের দায়িত্ব নিতে হতে পারে তাঁকে। ডি ব্রুইনার পুরোপুরি বিকল্প হয়ে উঠতে এখনো লম্বা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি তাঁর। তবে পথ যতই দীর্ঘ হোক, ছন্দ ধরে রাখলে সেটুকু পথ পাড়ি দেওয়া ফোডেনের জন্য মোটেই কঠিন হওয়ার কথা নয়।

রোববার ঘরের মাঠে ইউনাইটেডের মুখোমুখি হওয়ার আগে সিটিকে আশা জোগাচ্ছেন ফোডেন। ইতিহাদে ইউনাইটেডের সর্বশেষ ভ্রমণে তিনি যে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। কিন্তু কপাল এমন যে সেদিনও পুরো আলো তাঁর ওপর ছিল না। সেদিন হ্যাটট্রিক করেছিলেন হলান্ডও। এরপরও নিশ্চয়ই সেই স্মৃতি আরেকবার ফেরাতে চাইবেন ফোডেন। এটি করতে পারলে সিটির শিরোপা–দৌড়ে টিকে থাকার কাজটুকু যে আরেকটু সহজ হবে।