গোলের পর হলান্ডের উদ্‌যাপন
গোলের পর হলান্ডের উদ্‌যাপন

ম্যান সিটি ৩: ০ বায়ার্ন মিউনিখ

রেকর্ড গড়ে ম্যান সিটিকে সেমির কাছাকাছি নিয়ে গেলেন হলান্ড

প্রথমার্ধে এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও তাঁকে চুপ করিয়ে রাখতে পেরেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। কিন্তু সময়টা যে এখন আর্লিং হলান্ডের। কতক্ষণ আর ঠেকিয়ে রাখা যায়! ম্যাচের ৭০ মিনিটে গিয়ে দেখা মেলে হলান্ড জাদুর। তাঁর দারুণ এক অ্যাসিস্টে দলকে গোল এনে দেন বের্নার্দো সিলভা। ৬ মিনিট পর গোলের খাতায় নাম লেখান হলান্ড নিজেই। এটি ছিল এ মৌসুমে হলান্ডের ৪৫তম গোল। এই গোলে প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের আরেকটি নতুন মাইলফলকও স্পর্শ করলেন হলান্ড। তাঁর সামনে এখন যেন আর কোনো রেকর্ডই নিরাপদ নয়।

হলান্ড জাদু শুরুর আগে অবশ্য গোল করে প্রথমার্ধে সিটিকে এগিয়ে দেন রদ্রি। সবমিলিয়ে সিটির জয় ৩-০ গোলের ব্যবধানে। এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন লিগের সেমিফাইনালের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেল সিটি। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে বায়ার্ন কোচ থমাস টুখেলের ওপর চ্যাম্পিয়ন লিগ ফাইনাল হারের শোধও নিয়ে নিলেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। ২০২১ সালে তৎকালীন চেলসি কোচ টুখেলের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করেছিলেন গার্দিওলা

ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিট আক্রমণকে পাখির চোখ করে দুই দল। দুই দলই চেষ্টা করে পাল্টাপাল্টি আক্রমণে গিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে। বায়ার্নের চেয়ে ম্যান সিটির আক্রমণগুলোই ছিল অনেক বেশি গুছানো। সিটি খেলোয়াড়দের নিজেদের মাঝে বোঝাপড়াও ছিল দারুণ। এই ম্যাচে ফরমেশন সাজানোর ক্ষেত্রেও কিছুটা ঝুঁকি নেন পেপ গার্দিওলা।

সিটির গোল উদ্‌যাপন

৩-২-২-৩ ফরমেশনে চাপে পড়ার সুযোগও ছিল অনেক। যদিও দ্রুত কৌশলে বদল এনে ৪-২-১-৩ ফরমেশনে খেলতে শুরু করে সিটি। ম্যাচের প্রথম দিকে পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বায়ার্নকে খুব কমই সুযোগ দিয়েছে সিটি। ৫ম মিনিটে হলান্ড শট নিলেও সেটি ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। সিটির হাই প্রেসিংয়ের বিপরীতে বায়ার্নকে আক্রমণে যেতে সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছিল।

১৪ মিনিটে সিটির প্রেসিংয়ে নাকাল হয়ে তাদের গোল প্রায় উপহার দিয়েই ফেলেছিল বায়ার্ন। সে যাত্রায় অবশ্য কোনোভাবে হলান্ডকে ঠেকিয়ে দেয় তারা। চাপ সামলে দ্রুত অবশ্য গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বায়ার্ন। সিটি যদিও অতিথিদের থিতু হওয়ার খুব একটা সুযোগ দিচ্ছিল না। ২২ মিনিট ফের সম্ভাবনা জাগিয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন হলান্ড। ২৬ মিনিটে রুবেন দিয়াজ দারুণ নৈপুণ্যে জামাল মুসিয়ালাকে ঠেকিয়ে দিলে গোল খাওয়া থেকে রক্ষা পায় সিটি।

এক মিনিট পর রদ্রির অনেক দিন মনে রাখার মতো এক গোলে এগিয়ে যায় সিটি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের বুলেট গতির বাঁকানো শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন রদ্রি। এগিয়ে গিয়েও সিটি অবশ্য আক্রমণের ধারা থেকে সরে আসেনি। ৩৪ মিনিটে বায়ার্ন গোলরক্ষক ইয়ান সোমের অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ইকেই গুন্দোয়ানের শট ঠেকিয়ে না দিলে তখনই ব্যবধান ২-০ করতে পারত ইতিহাদের দলটি।

বিরতির আগ পার্যন্ত আরও একাধিকবার বায়ার্ন রক্ষণের পরীক্ষা নেয় সিটি। যদিও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। প্রথমার্ধে বলদখলে বায়ার্ন এগিয়ে থাকলেও, সুযোগ তৈরিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। সিটির পোস্ট লক্ষ্য করে প্রথম ৪৫ মিনিটে ৪টি শট নিলেও কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।

রদ্রির গোলের পর সিটি খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন

বিরতির পরপর ম্যাচের ধারা বদলানোর চেষ্টা করে বায়ার্ন। শুরুতেই লেরয় সানের শট ঠেকান সিটি গোলরক্ষক এদেরসন। একটু পর ফের বেঁচে যায় সিটি। তবে নিজেদের ভুলে সিটিকে দ্বিতীয় গোল উপহার দিয়েই ফেলেছিল বায়ার্ন। বল ক্লিয়ার না করে নিজেদের মাঝে দেওয়া নেওয়া করতে গিয়েই মূলত বিপদ বাড়ায় জার্মান ক্লাবটি।

যদিও সে যাত্রায় মারাত্মক এই ভুলের খেসারত দিতে হয়নি জার্মান চ্যাম্পিয়নদের। ৫৩ মিনিটে আবারও সানে পরীক্ষা নেন এদেরসনের। তবে এবারও সফল হতে পারেননি সাবেক এই ম্যান সিটি তারকা। কয়েক মিনিট পর কর্নারের বিনিময়ে গোল ঠেকিয়ে দলকে রক্ষা করেন সোমের। এ সময় পরপর কয়েকটি আক্রমণে বায়ার্নকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে সিটি। যদিও শেষ মুহূর্তে গিয়ে আক্রমণগুলো ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল।

৭০ মিনিটে অবশ্য আর ঠেকিয়ে রাখা যায়নি সিটিকে। দুর্দান্ত এক গোলে ব্যবধান ২-০ করে স্বাগতিকেরা। জ্যাক গ্রিলিশের প্রেসিংয়ে নিজেদের পোস্ট থেকে ২৫ গজ দূরে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান বায়ার্নের উপামেকানো। এরপর দারুণ এক ব্যাকহিলে সেই বল গ্রিলিশ বাড়িয়ে দেন হলান্ডকে। দুর্দান্ত এক ক্রসে অরক্ষিত বের্নার্দো সিলভার দিকে বল বাড়ান হলান্ড। হেডে লক্ষ্যভেদ করে দলকে জোড়া গোলের লিড এনে দেন পর্তুগিজ তারকা।

একটু পর সোমের ত্রাতা না হলে ব্যবধান ৩-০ করতে পারত সিটি। কিন্তু পরের মুহূর্তে হলান্ডকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি সোমেরও। এবার দুর্দান্ত ক্রস থেকে জন স্টোনস হেডে বল বাড়ান হলান্ডের দিকে। নিঁখুত ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দলকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এই নরওয়েজীয় তারকা।

এরপর ম্যাচের বাকি সময়ে দুই দলই গোলের অনেক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু গোলরক্ষকদের ফাঁকি দিয়ে কেউ জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেনি। সিটির দাপুটে জয়ে শেষ হয় ম্যাচ। আগামী বুধবার রাতে দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নের মাঠে আতিথ্য নেবে সিটি।