পেপ গার্দিওলার হাত ধরে অবশেষে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মুকুট পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে শনিবার রাতে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরার প্রতিযোগিতা জিতেছে ইংল্যান্ডের ক্লাবটি।
২০০৮ সালে আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মালিকানাধীন আবু ধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ সিটি কিনে নেওয়ার পর এই লক্ষ্যই ধার্য করা হয়েছিল—চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইউরোপসেরা হতে হবে।
সে লক্ষ্যে ২০১৬ সালে পেপ গার্দিওলাকে কোচ বানিয়ে আনা হয়েছিল। এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে বাজিমাত করল গার্দিওলার সিটি। তাতে দারুণ এক ইতিহাসও লেখা হলো। ইংল্যান্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে এক মৌসুমে ‘ট্রেবল’ জিতল সিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের পর চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতায় এই মৌসুমটা সিটির খেলোয়াড় থেকে সমর্থকেরা যেমন মনে রাখবেন, তেমনি মৌসুম শেষ হওয়ায় কিছুদিন পর থেকে আগামী মৌসুমের প্রস্তুতিও শুরু করতে হবে। তো, আগামী মৌসুমে লক্ষ্যটা কেমন হতে পারে সিটির? ইংল্যান্ডের সংবাদ সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (পিএ) সেটাই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে—
প্রথম ইউরোপসেরার মুকুট, কিন্তু শেষ নয়
অবশ্যই। আরও অনেক চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের আশাই করবে ম্যানচেস্টার সিটি। সে লক্ষ্য পূরণের পথে তারা আগামী মৌসুম থেকেই চেষ্টা চালাবে। এবার জয়ের পর গার্দিওলার মন্তব্যটা মনে আছে নিশ্চয়ই, ‘আমরা তাদের (রিয়াল মাদ্রিদ) চেয়ে মাত্র ১৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা পিছিয়ে। সতর্ক হও রিয়াল মাদ্রিদ। কারণ, আমরা পথেই আছি।’ গার্দিওলা রিয়ালকে কথাটা মজা করে বললেও ভেতরে–ভেতরে এটাই যে লক্ষ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিটি ইউরোপে নিজেদের শক্তির ভিতটা আরও শক্ত করতে চায়, এ জন্য প্রয়োজন একাধিক চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।
সে জন্য প্রতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার আশা যেমন বাস্তবসম্মত আশা নয়, তেমনি হালও ছাড়বে না তারা। প্রতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য থাকবে সিটির। এরপর যতটা এগোনো যায়। দলবদলের বাজারে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালা ক্লাবটি গার্দিওলার অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগের শোকেসে ট্রফিসংখ্যা আরও বাড়াতে চায়।
পেপ গার্দিওলা থাকবেন তো
ম্যানচেস্টার সিটির চ্যাম্পিয়নস লিগের নেপথ্য নায়ক বলা হয় তাঁকে। কারণ, দাঁড়াতে হয় ডাগআউটে। কিন্তু সেখান থেকে গার্দিওলার খেলানো ছকেই সিটি যেহেতু সাফল্য পেয়েছে, তাই স্প্যানিশ কোচ আসলে সিটির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের কেন্দ্রবিন্দুই। ২০১৬ সালে গার্দিওলাকে নিয়ে আসার পর পাঁচবার লিগ জয়ের পাশাপাশি এফএ কাপ, লিগ কাপসহ ঘরোয়া সব প্রতিযোগিতাই জিতেছিল সিটি।
বাকি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেটাও এই মৌসুমে হয়ে যাওয়ায় সিটি খুব স্বাভাবিকভাবেই চাইবে গার্দিওলাকে যত দিন সম্ভব ধরে রাখতে। কিন্তু গার্দিওলার ব্যাপারে একটি বিষয় হলো, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যাওয়ার অভ্যাস নেই তাঁর। সিটিতে প্রতিবারই কম সময়ের জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছেন গার্দিওলা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে চুক্তির মেয়াদ পূরণ করে তবেই সিটি ছাড়তে পারেন গার্দিওলা। কিন্তু সিটি নিশ্চিতভাবেই তাঁকে আরও বেশি সময়ের জন্য পেতে চাইবে।
স্কোয়াড কতটা সংস্কার করতে হবে
‘ট্রেবল’ জেতায় ম্যানচেস্টার সিটির স্কোয়াডকে নিখুঁত ভাবতেই পারেন যে কেউ। তবে পেপ গার্দিওলা ও ম্যানচেস্টার সিটি ভিন্ন কিছু ভাবতে পারে। জোয়াও ক্যানসেলো গত জানুয়ারিতে ধারে ক্লাব ছাড়ায় এই পজিশনে যোগ্য খেলোয়াড় খুঁজতে পারেন গার্দিওলা। স্প্যানিশ কোচের জন্য এই পজিশন বেশ আগে থেকেই মাথাব্যথার কারণ। বের্নার্দো সিলভা ও ইলকায় গুন্দোগানের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন এর আগে শোনা গিয়েছিল। তাঁরা চলে গেলে নতুন খেলোয়াড় সই করাতে হবে সিটিকে। গুন্দোগানের সঙ্গে সিটির চুক্তি মৌসুম শেষেই ফুরিয়েছে এবং এখনো নতুন চুক্তির ব্যাপারে সিটিকে সম্মতি জানাননি। আর বের্নার্দো সিলভা নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজছেন। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে ক্লাব ছাড়বেন।
খেলার মান ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ
ম্যানচেস্টার সিটি এই মৌসুমে যেভাবে খেলেছে, আগামী মৌসুমেও তা ধরে রাখা ভীষণ কঠিন হবে। লিভারপুলকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গত মৌসুমে এফএ কাপ, লিগ কাপ ও কমিউনিটি শিল্ড জিতেছিল লিভারপুল।
কিন্তু দুর্দান্ত সেই ফর্ম এবার আর ধরে রাখতে পারেনি ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তবে সিটির ক্ষেত্রে একটি বিষয় আশা দেখাতে পারে। ছয় বছরে পাঁচবার প্রিমিয়ার লিগ জেতানো গার্দিওলা জানেন খেলার মান কীভাবে ধরে রাখতে হয়।