সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)
সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)

জালিয়াতির অভিযোগ

ঘরোয়া ফুটবলে নিষিদ্ধ বিকেএসপি

আগামীর ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে আশির দশকে সাভার জিরানী বাজারে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। সময়ের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশের খেলাধুলার বড় একটা অংশ জুড়ে আছে। সেই বিকেএসপির ফুটবল দলই কিনা আগামী বছর ঘরোয়া ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না!

সেটাও খেলোয়াড়ের নিবন্ধনে জালিয়াতির অভিযোগে। ঘরোয়া ফুটবলে বিকেএসপিকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার কথা আজ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে বাফুফে।

গত আগস্টে শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে চকবাজারের হয়ে খেলার জন্য বিকেএসপির সঙ্গে একটা চুক্তি হয়। ওই লিগেই বিকেএসপির তিন খেলোয়াড় মোহাম্মদ তাসিন সাহেদ, ইহসান হাবিব ও মোহাম্মদ রিফাত কাজী চকবাজারের হয়ে খেলেন যথাক্রমে নাইমুর রহমান, হাসান মিয়া ও মোহাম্মদ রিফাত পরিচয় দিয়ে। পরের তিনজন খেলোয়াড় হিসেবে নিবন্ধিত, তবে বয়স কিংবা মানের সুবিধা নিতে তাঁদের পরিচয় দিয়ে তাসিন, ইহসান ও রিফাতকে খেলানো হয়।

এরপর দ্বিতীয় বিভাগের খেলোয়াড় নিবন্ধনের সময় তাসিন, ইহসান ও রিফাত তাঁদের আসল নাম ব্যবহার করে বিকেএসির পক্ষে নিবন্ধন করতে গেলে ব্যাপারটা বাফুফের নজরে আসে। তখন এই তিনজনকে বিকেএসপির হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে না খেলানোর নির্দেশনা দেয় বাফুফে, কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয় তাঁদের। তিনজনই অপরাধ স্বীকার করেন বাফুফের কাছে।

এই শিক্ষার্থীরা তখন বাফুফেকে জানান, তাঁদের কোচ রবিউল ইসলাম পরিচয় বদলে খেলার ব্যাপারটা জানেন এবং তাঁর মাধ্যমেই তাঁরা চকবাজার কিংসে খেলেছেন। রবিউল ইসলাম আবার চকবাজারের কোচও ছিলেন। সে কারণে বাফুফে মনে করছে তিন খেলোয়াড়ের তথ্য গোপনের অপরাধের দায় রবিউল ইসলাম এড়াতে পারেন না। ওদিকে চকবাজারের প্রধান কোচ ছিলেন আবার বিকেএসপিরই জ্যেষ্ঠ ফুটবল কোচ শাহীনুল হক। এই পুরো ঘটনার জন্য তখন সতর্কও করা হয় বিকেএসপিকে।

কিন্তু বিকেএসপি সতর্ক না হয়ে আবারও তথ্য গোপন করে ‘ইকরামুল ইসলাম’ নামের অন্য এক শিক্ষার্থীকে ‘তাহসান হোসেন’ নামে নিবন্ধন করায় দ্বিতীয় বিভাগ লিগে। ‘তাহসান’ নাম নিয়ে ইকরাম বেশ কয়েকটি ম্যাচও খেলেছেন। কিন্তু গত ২৪ নভেম্বর দ্বিতীয় বিভাগ লিগে বিকেএসপি-আরামবাগ ফুটবল একাডেমির ম্যাচের পর বিষয়টা বাফুফের নজরে এনে প্রতিবাদ জানায় আরামবাগ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের পর আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাস্তির কথা জানায় বাফুফে। বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বিকেএসপি ঘরোয়া ফুটবলে আগামী এক বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সঙ্গে ১ লাখ টাকা জরিমানাও। বিকেএসপিকে চলতি দ্বিতীয় বিভাগ লিগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁদের খেলা ম্যাচ এবং সামনের ম্যাচগুলোর প্রতিপক্ষকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

নাম পরিবর্তনকারী চার খেলোয়াড় তাসিন, ইকরাম ইহসান ও রিফাতকে ছয় ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকেএসপির জ্যেষ্ঠ ফুটবল কোচ শাহীনুল হক এবং কোচ রবিউল ইসলামকে ফুটবল-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাফুফে। দুজনকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর হয়ে যাওয়া আরামবাগ-বিকেএসপি ম্যাচে আরামবাগকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে বিকেএসপির মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও জবান দেননি।