গোলসংখ্যায় ইন্টার মিলানের আক্রমণত্রয়ী এখন শীর্ষে
গোলসংখ্যায় ইন্টার মিলানের আক্রমণত্রয়ী এখন শীর্ষে

মেসি, রোনালদোদের ত্রয়ী কোথায়, কোথায় এমবাপ্পে-হলান্ডদের ত্রয়ী

বার্সেলোনার এমএসএন আর রিয়াল মাদ্রিদের বিবিসি ত্রয়ীকে এই কয় বছরে ভুলে যাওয়ার কথা নয়। মেসি–সুয়ারেজ–নেইমারের এমএসএন এবং বেল–বেনজেমা–ক্রিস্টিয়ানোর বিবিসি ত্রয়ী ফুটবলকে মাতিয়ে রেখেছিল টানা কয়েক বছর। আক্রমণভাগের এই ত্রয়ীদের নিয়ে ঘরোয়া লিগ তো বটেই, চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছে বার্সা–রিয়াল।

মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার কিংবা বেল-বেনজেমা-ক্রিস্টিয়ানোরা এখন ত্রয়ী হিসেবে অতীত। ছয়জনের মধ্যে গ্যারেথ বেল বুট জোড়া তুলে রেখেছেন। বাকি পাঁচজন খেলা চালিয়ে গেলেও কেউই আর ইউরোপে নেই। মেসি ও সুয়ারেজ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে। আর রোনালদো (আল নাসর), নেইমার (আল হিলাল) ও বেনজেমারা (আল ইত্তিহাদ) সৌদি আরবে। তবে বিবিসি, এমএসএন না থাকলেও রিয়াল–বার্সায় ত্রয়ীর উপস্থিতি এখনো আছে। দলের প্রয়োজনে আর খেলার ধরনের কারণেই যেকোনো দলে আক্রমণত্রয়ী গড়ে ওঠে। কিন্তু মেসি, রোনালদোর ত্রয়ী লা লিগায় যে ছাপ রেখে এসেছে, এখন কি দেখা মিলছে তেমন কিছুর? তারকামূল্যে না হোক, গোলের সংখ্যায়ও কি এমএসএন, বিবিসি–ত্রয়ীকে ছুঁতে পারছেন কেউ?

লা লিগায় একই সময়ে এমএসএন ও বিবিসিকে দেখা গেছে তিনটি মৌসুম। ২০১৪ সালে সুয়ারেজের বার্সেলোনায় আসা দিয়ে যার শুরু, আর ২০১৭ সালে নেইমারের বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি। বাকি চারজনই আগে–পরেও খেলেছেন। দুই ভয়ংকর আক্রমণত্রয়ীর তিন মৌসুমের মধ্যে ২০১৪–১৫ মৌসুমে বিবিসির গোল ছিল ৭৬টি, এমএসএনের ৮১। পরের মৌসুমে বিবিসির ৭৮, এমএসএনের ৯০। আর ২০১৬–১৭ মৌসুমে বিবিসি ৪৩, এমএসএন ৭৮। এর মধ্যে সর্বশেষ মৌসুমে বেল চোটে থাকায় অনেকগুলো ম্যাচ মিস করেছিলেন।

চলতি ২০২৩–২৪ মৌসুমের পরিসংখ্যান বলছে, এমএসএন, বিবিসির কাছাকাছিও যেতে পারছে না বার্সা–রিয়ালের বর্তমান আক্রমণভাগ। রিয়ালের আক্রমণভাগের দায়িত্বে এখন রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, জোসেলু ও জুড বেলিংহামরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করা বেলিংহাম (১৬), রদ্রিগো (৮) ও জোসেলুর (৮) মোট গোলসংখ্যা ৩২। লিগের প্রথম ২৫ ম্যাচে মোট ৫৩টি গোল করেছে রিয়াল মাদ্রিদ, সর্বোচ্চ তিন গোলদাতার অবদান তাতে ৬০.৪ শতাংশ। লিগে বাকি থাকা ১৩ ম্যাচে বেলিংহামরা খুব ভালো খেললেও যে বিবিসির ২০১৪–১৫ বা ২০১৫–১৬ মৌসুমের গোলসংখ্যা ছুঁতে পারবেন না, সেটা একপ্রকার নিশ্চিতই।

বার্সেলোনার বর্তমান ত্রয়ীর অবস্থা অবশ্য আরও করুণ। রবার্ট লেভানডফস্কি (১২), ফেরান তোরেস (৭) আর ইলকায় গুন্দোয়ানরা (৫) মিলে এখন পর্যন্ত করতে পেরেছেন মাত্র ২৪ গোল। যা এমএসএন–ত্রয়ীর তিন মৌসুমের কোনো একটির অর্ধেকও নয়। এবারের লা লিগায় গোলসংখ্যায় সেরা ত্রয়ীতে বার্সেলোনার অবস্থান ৪ নম্বরে। রিয়াল মাদ্রিদের ৩২ গোলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ গোল আতলেতিকো মাদ্রিদের আলভারো মোরাতা (১৩), আঁতোয়ান গ্রিজমান (১১) ও মার্কোস লরেন্তের (৬)।

সুয়ারেজ, মেসি ও নেইমার—বার্সেলোনার এমএসএন

তবে লা লিগা ছাড়িয়ে দৃষ্টিটা যদি ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে ফেলা হয়, লা লিগার সেরা দুই ত্রয়ীর অবস্থান বেশ পেছনেই। ২০২৩–২৪ মৌসুমের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ শেষে গোলসংখ্যায় সবার ওপরে বায়ার্ন মিউনিখের হ্যারি কেইন, লেরয় সানে ও জামাল মুসিয়ালা এবং ইন্টার মিলানের লাওতারো মার্তিনেজ, মার্কাস থুরাম ও হাকান চালহানুগলো ত্রয়ীরা। বুন্দেসলিগা ও সিরি ‘আ’র দুই ত্রয়ী লিগে এখন পর্যন্ত গোল করেছে ৩৯টি করে। এর মধ্যে বায়ার্নের হয়ে একাই ২৫ গোল এ বছরই দলটিতে যোগ দেওয়া কেইনের। দুই জার্মান সানে ও মুসিয়ালা করেছেন বাকি ১৪ গোল।

ইতালিতে ইন্টারের হয়ে সর্বোচ্চ ২০ গোল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্তিনেজের। অন্যদের মধ্যে থুরামের গোল ১০টি, চালহানুগলোর ৯টি। সিরি ‘আ’তে সবচেয়ে বেশি গোল করা ত্রয়ীর দলই এখন লিগ পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে। তবে বুন্দেসলিগায় বায়ার্নের ক্ষেত্রে তা নয়। এরই মধ্যে শীর্ষে থাকা বায়ার লেভারকুসেনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে কেইন–সানে–মুসিয়ালাদের দল।

মজার বিষয় হচ্ছে, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের ত্রয়ীতে তৃতীয় স্থানে থাকা দলটি লেভারকুসেন বা অন্য কোনো লিগের শীর্ষ দল নয়। অবস্থানটি বুন্দেসলিগার ৩ নম্বর দল স্টুটগার্টের। প্রথম ২২ ম্যাচে দলটির মোট গোল ৫১, এর মধ্যে ৩৮টিই এসেছে সেরহো গিরাসি, ডেনিস উনদাব ও ক্রিস ফারিচের কাছ থেকে। শতাংশের হারে ৭৪.৫।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি ৩৩টি গোল আছে দুটি ত্রয়ীর। এখানে ম্যানচেস্টার সিটির ৫৭ গোলের ৩৩টি এসেছে আর্লিং হলান্ড (১৭), ফিল ফোডেন (৮) ও হুলিয়ান আলভারেজের (৮) কাছ থেকে। সমানসংখ্যক গোল করেছেন লিভারপুলের ত্রয়ী মোহাম্মদ সালাহ (১৫), দারউইন নুনিয়েজ (৯) ও দিয়োগো জোতারা (৯) মিলেও (গত রাতে লিভারপুল-লুটন ম্যাচের আগপর্যন্ত)।

আক্রমণত্রয়ীর দিক থেকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে অবশ্য ফ্রেঞ্চ লিগের দল পিএসজিতে। সর্বশেষ দুই মৌসুমে এই ক্লাবে ছিল এমএসএন, বিবিসির মতো তারকাত্রয়ী—মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে। এর মধ্যে ২০২১–২২ মৌসুমে তিনজনের লিগে গোলসংখ্যা ছিল ৪৭, ২০২২–২৩ মৌসুমে ৫৮। এ বছর মেসিও নেই, নেইমারও নেই। এমবাপ্পের সঙ্গে আক্রমণভাগে হাত মিলিয়েছেন রান্দাল কোলো মুয়ানি ও ভিতিনিয়া। ফ্রেঞ্চ লিগে পিএসজির দাপট দেখা যাচ্ছে আগের মতোই, কিন্তু ত্রয়ীর আক্রমণ উধাও। এখন পর্যন্ত ৩২ গোল করেছেন এমবাপ্পে–মুয়ানি–ভিতিনিয়ারা, যার ২১টিই একা এমবাপ্পের।

দলের প্রয়োজনে খেলতে খেলতে তৈরি হওয়া ত্রয়ী আর আক্রমণভাগের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ে তৈরি হওয়া ত্রয়ীর মধ্যে যে বড় পার্থক্য, পিএসজির ২০২২–২৩ আর ২০২৩–২৪ মৌসুমই বলে দিচ্ছে। বলে দিচ্ছে এই তথ্যও যে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের কোনো ত্রয়ীই এমএসএন, বিবিসির কাছাকাছি যেতে পারছে না!