এখনকার দিনে ডেভিড বেকহামকে দেখা যায় ইন্টার মায়ামির একজন হিসেবে। ইংল্যান্ডের সাবেক এই মিডফিল্ডার যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস দলটির প্রেসিডেন্ট ও অন্যতম মালিক। এই বেকহামকে ফুটবল বিশ্ব চিনেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড় হিসেবে। গত শতাব্দীর শেষ দিক থেকে একুশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত টানা ১১ বছর ইউনাইটেডে ছিলেন বেকহাম, এ সময়ে জেতেন ৬টি প্রিমিয়ার লিগ ও ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।
গত দুই দশকে বেকহামের পথচলায় অনেক পরিবর্তন হলেও এখনো ইউনাইটেডকে অনুভব করেন বেকহাম। মায়ামির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকলেও কাজ করতে চান ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটির সঙ্গে। ৪৮ বছর বয়সী বেকহাম জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইউনাইটেডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটা হবে তাঁর জন্য অনেক বড় পাওয়া।
২০০৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ইউনাইটেড ছেড়েছিলেন বেকহাম। এর বছর দুই পর ইউনাইটেডের মালিকানায় যুক্ত হয় গ্লেজার পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসায়ী পরিবারটি গত কয়েক বছর ধরে সমর্থকদের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবের মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। আগামী নভেম্বরে কাতারের শেখ জসিম বিন হামাদ অথবা যুক্তরাজ্যের স্যার জিম র্যাটক্লিফের কাছে গ্লেজার পরিবারের থাকা পুরো মালিকানা বা সিংহভাগ স্থানান্তর করা হতে পারে।
ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং মালিকানাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেকহামের সঙ্গে কথা বলে দ্য অ্যাথলেটিক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটিকে বেকহাম বলেন, গ্লেজার পরিবারের চলে যেতে হবে, ‘এখনই চলে যাওয়ার সময়। কারণ, সমর্থকেরা তাদের চাচ্ছে না। আপনি যদি একবার সমর্থকদের আস্থা হারিয়ে ফেলেন, বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে, তাহলে ফিরে পাওয়াটা কঠিন। এখানে পরিবর্তন হওয়াটা দরকার। আমরা সবাই দেখছি, সবাই জানি।’
মাঠের ফুটবলে ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক সময় ভালো যাচ্ছে না। ২০১২-১৩ মৌসুমের পর প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা নেই, চ্যাম্পিয়নস লিগ নেই ২০০৭-০৮-এর পর। বেকহাম মাঠের ফুটবলে সাফল্য ফেরাতে বড় বিনিয়োগ দরকার বলে মনে করছেন, ‘মাঠে বা মাঠের বাইরে কোথাও ইউনাইটেডের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। মাঠের খেলায় এরিক টেন হাগ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর দলের একজন সমর্থক ও সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার চাওয়া, মালিকানা বদলের বিষয়টির সমাধা হোক। ক্লাবের এখন বিনিয়োগ দরকার। অনুশীলন সুবিধা, স্টেডিয়াম, মাঠের খেলোয়াড়—এসব বিষয়ে পরিবর্তন দরকার।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের উন্নতির জন্য কী কী দরকার, তার দৃষ্টান্ত ম্যানচেস্টারেই আছে জানিয়ে বেকহাম বলেন, ‘চোখের সামনে যখন ম্যানচেস্টার সিটি আছে। সিটি শুধু জয় পাচ্ছে তা নয়, ওরা ভবিষ্যতের জন্যও তৈরি হচ্ছে। পেপ গার্দিওলার অধীনে একটা স্থিরতার মধ্যে এসেছে ওরা, যার প্রতি আমি অনুরক্ত।’
এক সময় যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছিল ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল দল, ফুটবলারদের সবচেয়ে আকর্ষণের জায়গা, সেই জায়গায় আবার ফিরিয়ে নিতে বেকহাম নিজে কি হাত বাড়িয়ে দেবেন?
মায়ামি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ত সময় কাটানো বেকহাম সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, ‘এই মুহূর্তে আমার মনোযোগের পুরোটাই মায়ামি। এ নিয়েই সব কাজ। আর (ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে) আমাকে কিছু বলাও হয়নি। তবে ইউনাইটেডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে। সামনে কী হয় কে জানে? আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে কী ঘটে দেখা যাক। আশা করি (মালিকানা নিয়ে) একটা সিদ্ধান্ত হবে, আর যদি আমি কোনোভাবে জড়িত হই ... আর না হলেও একজন ইউনাইটেড সমর্থক হয়ে থাকব।’