গত মে মাসের শেষ দিকে ঝড় উঠেছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলে। হঠাৎ জাতীয় নারী দলের প্রধান কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন গোলাম রব্বানী। ২৮ মে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) পদত্যাগপত্র পাঠান।
দীর্ঘ ৩৬ দিন পর বাংলাদেশের নারী ফুটবলে গোলাম রব্বানীর অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে বাফুফে আজ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আগামীর পথচলায় গোলাম রব্বানীকে শুভকামনাও জানিয়েছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। যদিও পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে বলেই বাফুফের এ বিজ্ঞপ্তি।
কিন্তু এত দেরিতে কেন? বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম তিনি ফিরে আসুন। যে কারণে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছিল না। যেহেতু একটি দলের নতুন কাজে নেমেছেন তিনি, ফলে ধরে নেওয়া যায় গোলাম রব্বানীর আর ফেরার সম্ভাবনা নেই। অপেক্ষার কারণেই দেরি হয়েছে। তাঁর পদত্যাগপত্র ১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে বলে নেওয়া হবে।’
১৩ ও ১৬ জুলাই নেপালের সঙ্গে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে দুটি প্রীতি ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশ নারী দলের কোচ থাকবেন কে? সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বাফুফের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলি ছুটি কাটিয়ে আগামীকাল ঢাকায় ফিরবেন। পল নিজেই নারী দলের প্রধান কোচের ভূমিকায় নামতে পারেন। ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পল’—বলেছেন বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার।
স্মলির সঙ্গে কিছু বিষয়ে গোলাম রব্বানীর টানাপড়েন চলছিল। গোলাম রব্বানী প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু না বললেও আকার ইঙ্গিতে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। পদত্যাগপত্রে অবশ্য বিশ্রাম ও পরিবারকে সময় দেওয়ার কথাই বলেছেন তিনি। কিন্তু মাসখানেক বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজে নেমে পড়েছেন গোলাম রব্বানী। নিজেই দিলেন সেই খবর, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নারী ফুটবল দল গড়েছে। আপাতত দুই মাসের জন্য আমি সেই দলের দায়িত্ব নিয়েছি। ২ জুলাই থেকে কাজও শুরু করেছি।’
তবে আগামী দিনে শুধু নারী দল নয়, ছেলেদের দলও কোচিং করাতে চান গোলাম রব্বানী। তাঁর কথা, ‘এমন নয় যে আমি নারী দল নিয়েই কাজ করব। সামনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ আছে। সেখানেও আমি কাজ করতে পারি।’
সাবেক ফুটবলার গোলাম রব্বানী ২০০৬ সালে কোচ হিসেবে বাফুফেতে যোগ দেন। ২০০৯ থেকে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক নারী দল নিয়ে কাজ শুরু। ২০১০ সালে কক্সবাজারে প্রথম নারী সাফে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন। সেই থেকে টানা ১৩ বছর বাংলাদেশের সব কটি বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানীই।
তাঁর অধীন সব মিলিয়ে আটবার বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেরা সাফল্য গত সেপ্টেম্বরে নেপালে প্রথমবারের মতো সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে ছয়বার। এএফসি অনূর্ধ্ব–১৬ ফুটবলে দুইবার চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। তাঁকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী দলে তৈরি হয়েছে একটা শূন্যতা।