নাজমুল হাসান ও কাজী সালাউদ্দিন
নাজমুল হাসান ও কাজী সালাউদ্দিন

কাজী সালাউদ্দিনের বাসায় ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, কী কথা হলো তাঁদের

দুজনের মধ্যে কথার যুদ্ধ জমে উঠেছিল ১০ মাস আগে। একজন আরেকজনকে খোঁচা দিয়েছিলেন। শুরুটা করেন কাজী সালাউদ্দিন, তাঁকে জবাব দেন নাজমুল হাসান। দেশের দুই শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থার দুই প্রধানের পাল্টাপাল্টি সে সময় সংবাদের শিরোনামে এসেছিল।

নাজমুল হাসান এখন বিসিবির সভাপতির পাশাপাশি দেশের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীও। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি পদেই আছেন। সম্প্রতি কাজী সালাউদ্দিনের বাইপাস সার্জারি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর থেকে নিভৃতে নিজের বাসাতেই থাকছেন চিকিৎসকের পরামর্শে। সালাউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর বারিধারার বাসায় যান যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান। এ সময় মন্ত্রণালয় বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি নাজমুলের সঙ্গে।

সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে কাজী সালাউদ্দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। ২০ মিনিটের সাক্ষাৎ শেষে নাজমুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ওনার যখন সার্জারিটা হয়, তখন তো নির্বাচনে (জাতীয়) শেষ মুহূর্ত। আমি তখন এলাকায় ছিলাম। তখন থেকেই ওনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। ঢাকায় এসেই ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে কথা হয়েছে।  তাঁকে দেখতে যেতে চাই, কী অবস্থা আমাকে জানাতে বলি। ওনারা বলেন, জানাবেন। আমি আবার বাইরে চলে গেলাম এসিসির এজিএমের জন্য। আসার পর বললেন যেকোনো সময় আসতে পারেন। পরশু দিন বলল, আমি আজ চলে এলাম দেখতে।’

কাজী সালাউদ্দিনের বাসায় ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান

সালাউদ্দিনকে দেখে কী মনে হলো, সেটাও জানিয়েছেন নাজমুল, ‘দেখে মনে হলো আল্লাহর রহমতে উনি খুব ভালো আছেন এখন। অনেক সুস্থ। হাঁটাচলা করছেন স্বাচ্ছন্দ্যে, সেটা দেখে ভালো লেগেছে। সার্জারির পর পুনর্বাসন দরকার আছে। আরও কিছুদিন সেটা করতে হবে।’

ফুটবল নিয়ে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে আমি আগেই বসেছি। তখনই ওনাদের মূল ইস্যুগুলো শুনেছি। আজকে উনি (কাজী সালাউদ্দিন) কয়েকটি সমস্যার কথা বলেছেন। আমি বলেছি, ঠিক আছে আপনি একেবারে সুস্থ হয়ে আসেন। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র পাঠাতে বলেছি, আমি দেখব।’

কী কী সমস্যার কথা বলেছেন সালাউদ্দিন? ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, ‘একই জিনিশ। একটা হচ্ছে, খেলার মাঠ নেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম লম্বা সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে, ওনাদের খেলার কোনো জায়গা নেই। এটা বড় সমস্যা। পরশু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম দেখতে যাচ্ছি আমি। কীভাবে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়, আপ্রাণ চেষ্টা করব। খেলার কোনো জায়গা বের করতে পারি কি না, দেখব।’

দুজনের বৈরিতা মিটে গেল কি না প্রশ্নে নাজমুলের উত্তর, ‘এত বছরের সম্পর্ক এক দিনের কথায় তো আর শেষ হয়ে যায় না। ছোটবেলা থেকে মাঠে যেতামই ওনার খেলা দেখতে। এটা তো অস্বীকার করার পথ নেই। ওনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলার বাংলাদেশে আর নেই। অনেক সময় অনেক কথায় উনি আহত হতে পারেন, আমিও পারি। সেটা ওখানেই শেষ।’

গত বছর মার্চে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্বে কেন খেলানো হলো না নারী ফুটবল দলকে, সেই বিতর্কে নিজেদের অবস্থানকে তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে ফোন করেছিল। দল পাঠাতে আর্থিক সহায়তার কথাও জানিয়েছে। আর্থিক সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীকে কেন জানাইনি, এ কথাও আমাকে বলা হয়েছে।’

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ম্যাচ চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। সেখানে ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি? এমন প্রশ্নেই নাজমুলকে খোঁচা দিয়ে সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ফুটবলেরও প্রিয়। সবার ব্যক্তিত্ব তো এক নয়। আমি তো লোক দেখিয়ে বলব না, প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছে। আমি ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। স্বাধীনতা থেকে আজ পর্যন্ত। আমি ওই নাটক করতে পারব না। লোক দেখাতে পারব না। দুঃখিত, এটাই আমার চরিত্র।’

সালাউদ্দিনের কথার জবাব দিয়ে বিসিবিপ্রধান বলেছিলেন, ‘যে যত কথাই বলুক, এসব নিয়ে আমি মন খারাপ করি না। তবে আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগছে মেয়েরা (অলিম্পিক বাছাই) যেতে পারল না! তা–ও মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য! এর চেয়ে দুঃখ, কষ্ট… মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কষ্টটাই না পেয়েছেন!’

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এখন দেশের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীও

নাজমুল হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে, ফুটবল বোর্ডে যেসব পরিচালকেরা আছে, তারা ২০ লাখ টাকা দিতে পারবে না! তাদের অনেকের দৈনিক খরচই তো ২০ লাখ টাকা। আমরা বলছি, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, পুরো পৃথিবী মেনে নিচ্ছে, সেখানে আমরা বলছি যে মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য আমাদের মেয়েরা প্রি–অলিম্পিক খেলতে যেতে পারল না! এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর হয় না। তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না।’

নাজমুল হাসান তখন এও বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করলে আমি যেখানেই থাকি, যে অবস্থায় থাকি, ফোন ধরবই। আমি জানি না, এটা নিয়ে কেন বলেছে। আমি বলছি এ কারণে এটার সঙ্গে ওটার কী সম্পর্ক আমি জানি না। আমার মনে হয় সমস্যাটা আপনাদের, আপনারা এত বাজে প্রশ্ন করলেন কেন। আপনারা হিসাব চাচ্ছেন, টাকা কী করেছেন। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে যান কেন। এটা করলে তো উনার মাথা খারাপ হবে, এটা সবাই জানেন। এমন প্রশ্ন করেন কেন। করলে মাথা ঠিক থাকবে?’