ইরান এখনো অশান্ত। সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্রতিদিন হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, আর পুলিশি ধরপাকড় তো আছেই। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কাতার বিশ্বকাপ খেলছে ইরান ফুটবল দল। দোহায় বাংলাদেশ সময় রাত একটায় আজ যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হবে ইরান। রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত এই ম্যাচে মাঠে নামার আগেই বেশ চাপে পড়েছেন ইরানের ফুটবলাররা। বিশ্বকাপে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সূত্র মারফত সিএনএন জানিয়েছে, ইরানের সরকার দেশের জাতীয় দলের ফুটবলারদের পরিবারগুলোকে হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে খেলোয়াড়েরা নিজেদের আচরণে ‘সংযত’ না হলে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কারাবাস এবং অত্যাচারের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
২১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দেশের জাতীয় সংগীতে গলা না মিলিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন ইরানের ফুটবলাররা। ‘সঠিক উপায়ে’ হিজাব না পরায় ইরানি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তরুণী মাসা আমিনি পুলিশি হামলায় প্রথমে মারাত্মক আহত ও মারা যাওয়ার পর দেশটির মানুষ বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। চার শর বেশি মানুষ মারা গেছেন চলমান এই বিক্ষোভে। দেশের মানুষের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলাননি ইরানের ফুটবলাররা। সিএনএনকে সেই সূত্র জানিয়েছে, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের (আইআরজিসি) সদস্যদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের।
সিএনএনকে সূত্র জানিয়েছে, আরজিসির সদস্যরা খেলোয়াড়দের বলেছেন বিশ্বকাপে জাতীয় সংগীত না গাইলে কিংবা প্রতিবাদ কর্মসূচি হাতে নিলে খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যদের ‘সহিংসতা ও নির্যাতনে’র শিকার হতে হবে। ওয়েলসের বিপক্ষে গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন ইরানের খেলোয়াড়েরা। ম্যাচটি ২–০ গোলে জিতে নেয় ইরান।
সিএনএন জানিয়েছে, বিশ্বকাপে ইরান যে নিরাপত্তা এজেন্সির অধীন তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে আছে সেই সূত্র। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের চোখে চোখে রাখতে ইরানের সামরিক কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বাইরের কারও সঙ্গে দেখাশোনা কিংবা ঘোরাঘুরির অনুমতিও নাকি দেওয়া হয়নি ইরানের খেলোয়াড়দের, জানিয়েছে সিএনএন। সূত্রের উদ্ধৃতিও প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংবাদমাধ্যম, ‘ইরানের প্রচুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা কাতারে খেলোয়াড়দের তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং নজরে রেখেছেন।’
খেলোয়াড়েরা পরিবার নিয়ে হুমকি পাওয়ার পর ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজ নাকি দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে সিএনএনকে সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি, ঠিক কী কী বিষয় নিয়ে আইআরজিসির কর্মকর্তারা এবং কোচের মধ্যে কথা হয়েছে। কুইরোজ অবশ্য এর আগে বলেছেন, ফিফার নিয়মের মধ্যে থেকে প্রতিবাদ জানাতে পারেন খেলোয়াড়েরা।
সিএনএন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের ‘উপহার ও গাড়ি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইরান সরকার। কিন্তু জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা না মেলানোয় প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে সরকার। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ‘ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে (ইরানের) সরকার হাজারো ভুয়া সমর্থককে গ্যালারিতে ঢুকিয়েছে, যেন ইরানের প্রতি সমর্থনটা বোঝা যায়। পরের ম্যাচেও (যুক্তরাষ্ট্র) এমন সমর্থকের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’