শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী চলছে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না এমনকি দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোও।
সরকার পতনের দিন গত সোমবার বিকেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয় ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্লাবকে। একই দিনে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে ধানমন্ডিরই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবেও। সেখানেও হয়েছে লুটপাট। গতকাল এক দল দুর্বৃত্ত আবারও ক্লাবটিতে ভাঙচুর চালায়।
ধানমন্ডি ৮ নম্বরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের প্রবেশমুখেই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেজ ছেলে শেখ জামালের একটি ম্যুরাল। সেই জায়গাটিতে এখন কিছুই নেই। নেই ক্লাবের গেটের ওপর থাকা ক্লাবের নামফলকও।
ক্লাবের এক নিরাপত্তাপ্রহরী জানান, গতকাল দুপুরের দিকে হঠাৎ একদল দুর্বৃত্ত ক্লাবে লাঠিসোঁটা নিয়ে হানা দেয়। নিরাপত্তারক্ষীরা ভাঙচুর না করার জন্য অনুরোধ করলে তাঁরা মারধরের শিকার হন। দুর্বৃত্তরা ক্লাবে ঢুকে অফিস, সভাকক্ষ ও খেলোয়াড়দের কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সভাকক্ষে থাকা ক্লাবের বিভিন্ন ট্রফি নিয়ে যায় তারা।
এমনকি অফিস ও সভাকক্ষের এসি, চেয়ার, সোফা, কম্পিউটার, বিদেশি কোচদের ছয়টি লাগেজ—সবই নিয়ে গেছে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা। অফিসকক্ষে সংরক্ষিত মূল্যবান কাগজপত্রে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তারা। লুট হয়ে গেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব প্রাঙ্গণে থাকা ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রির দোকানটিও। ভাঙচুর করা হয়েছে ক্লাব প্রাঙ্গণে অবস্থিত জুসবার ও ক্যানটিন।
ভাঙচুর শুরুর পরপরই ধানমন্ডি সোসাইটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তারক্ষীদের ক্লাবে পাঠানো হয়েছিল। এ মুহূর্তে ধানমন্ডি সোসাইটির নিরাপত্তাপ্রহরীরাই ক্লাব পাহারা দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে নিরাপত্তাপ্রহরীদের প্রধান সমন্বয়ক জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গেটের দায়িত্বে নিরাপত্তাপ্রহরী ও ক্লাবের কয়েকজন কর্মী ছিলেন। দুর্বৃত্তরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আসায় তাদের করার কিছুই ছিল না। পরে ধানমন্ডি সোসাইটির পক্ষ থেকে ক্লাবের সম্পদ রক্ষায় আমাদের পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে তিনবার শিরোপা জিতেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। সাফল্য আছে বিদেশের মাটিতেও। ক্লাবটির সাফল্য আছে ক্রিকেটেও। ২০২১-২২ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়ন তারা। একসময় এই ক্লাবের নাম ছিল ‘ধানমন্ডি ক্লাব’। স্থানীয় শিশু-কিশোর-তরুণদের জন্য উম্মুক্ত ছিল মাঠটি।
কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্লাবের নাম পরিবর্তন করা হয়। ধানমন্ডি ক্লাব হয়ে যায় লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। স্থানীয়দের জন্য তখন থেকেই ক্লাবটি আর উন্মুক্ত নয়।