টমাস টুখেল, জাভি হার্নান্দেজ ও মরিসিও পচেত্তিনো
টমাস টুখেল, জাভি হার্নান্দেজ ও মরিসিও পচেত্তিনো

ইউরোপিয়ান ফুটবলে কোচ নিয়ে যত ‘ক্যাওয়াস’

ঘটনাটা ২৫ ফেব্রুয়ারি অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় বায়ার্ন মিউনিখ-আরবি লাইপজিগ ম্যাচের। খেলা শুরু হতেই বায়ার্ন কোচ টমাস টুখেলকে দেখা গেল ডাগআউটের সামনে রুপালি রঙের একটি স্যুটকেসের ওপর বসে থাকতে। টুখেলের এমন কাণ্ডে সেদিন সবাই বেশ অবাকই হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে জার্মান কোচ নিজেই অবশ্য স্যুটকেস রহস্যের খোলাসা করেন। জানান, এই স্যুটকেস তিনি বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন। যার ভেতরে তাঁর ব্যবহার্য সব জিনিস আছে। সবকিছু এরই মধ্যে গোছানো হয়ে গেছে।

টুখেলের স্যুটকেস গোছানোর কারণ, চার দিন আগেই ব্যর্থতার কারণে মৌসুম শেষে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে নিশ্চিত হয় তাঁর বিদায়। সেই ঘটনা নিয়ে মজা করতেই টুখেলের এই স্যুটকেস-কাণ্ড। এমনিতেই অবশ্য কোচদের চাকরির অনিশ্চয়তা বোঝাতে বলা হয়, তাঁদের ব্যাগ নাকি সব সময় গোছানোই থাকে। সেদিন টুখেল যেন সেই ‘প্রবাদবাক্য’টিকেই সত্য প্রমাণ করেছিলেন। তবে টুখেলই একমাত্র নন, মৌসুমজুড়ে আরও অনেক কোচকে নিয়ে চলেছে এমন ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলা। যার সর্বশেষ শিকার মরিসিও পচেত্তিনো। সমঝোতার ভিত্তিতে যাঁকে গত গতকাল বিদায় জানিয়ে দিয়েছে চেলসি।

চলতি মৌসুমে শুরুটা বাজেভাবে করলেও শেষ দিকে এসে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় চেলসি। শেষ পর্যন্ত ৬ নম্বরে থেকে মৌসুম শেষ করে স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটি। এতেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। কোচ বদলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সরিয়ে দেওয়া হলো আর্জেন্টাইন পচেত্তিনোকে। রোমান আব্রামোভিচের মালিকানায় বারবার কোচ বদল করা চেলসির অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেই অভ্যাস বদলাতে পারলেন না নতুন মালিক টড বোয়েলিও। মালিকানায় আসার দুই বছরের মধ্যেই ছাঁটাই করলেন চারজন কোচকে।

পচেত্তিনোর ছাঁটাই হওয়ার ঘটনা অবশ্য কোচ নিয়ে ইউরোপিয়ান ফুটবলে চলতে থাকা মহানাটকেরই একটি অংশ। বায়ার্ন ও চেলসি সেই বিশাল রঙ্গমঞ্চের দুটি কুশীলবমাত্র। শীর্ষ পাঁচ লিগে এরই মধ্যে একাধিক কোচ চাকরি হারিয়েছেন বা ছেড়েছেন। যে তালিকায় আছেন বেশ কজন হাইপ্রোফাইল কোচও।

বিদায় নিলেন মরিসিও পচেত্তিনো

শুরুতেই বলা হচ্ছিল টুখেলের কথা। ফেব্রুয়ারিতে টুখেলের বিদায় নিশ্চিত করার পর থেকে নতুন কোচের সন্ধানে আছেন বায়ার্ন। রালফ রাংনিক থেকে জাবি আলোনসো পর্যন্ত বেশ কজন কোচের বাভারিয়ান ক্লাবটিতে আসার কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। এমনকি কোচ না পেয়ে টুখেলকে রেখে দেওয়ার কথাও ভেবেছিল তারা।

যদিও শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয় উভয় পক্ষ। সর্বশেষ বায়ার্নের সম্ভাব্য কোচ হওয়ার তালিকায় শোনা গেছে ভিনসেন্ট কোম্পানির নাম। পেপ গার্দিওলার এই শিষ্য গত মৌসুমে ইংলিশ ক্লাব বার্নলির কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মৌসুম শেষে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে গেছে ক্লাবটি। এখন শেষ পর্যন্ত টুখেলের পরিবর্তে কোম্পানিকে বায়ার্ন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

কোচ নিয়ে বিপাকে আছে স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সেলোনাও। জানুয়ারির শেষ দিকে টানা ব্যর্থতায় দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাভি হার্নান্দেজ। এরপর নতুন কোচের সন্ধানে নামে স্প্যানিশ ক্লাবটি। সম্ভাব্য কোচ হিসেবে হ্যানসি ফ্লিকসহ একাধিক নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত কাউকে চূড়ান্ত করতে পারেনি বার্সা। পুরো বিষয়টি নাটকীয় মোড় নেয় এপ্রিলের শেষ দিকে এসে।

মৌসুস শেষে বায়ার্নকে বিদায় জানাবেন টুখেল

ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা ও স্পোর্টিং ডিরেক্টর ডেকোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বার্সায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জাভি। তখন নিজের অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করার কথা বলেছিলেন এই স্প্যানিশ কিংবদন্তি। কিন্তু নাটক যে তখনো শেষ হয়নি। সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, জাভিকে সরাতে বার্সার বোর্ড কর্মকর্তারা নাকি লাপোর্তাকে চাপ দিচ্ছেন।

ফলে যেকোনো মুহূর্তে ছাঁটাই হতে পারেন জাভিও। টুখেল-পচেত্তিনো ছাড়াও এরই মধ্যে চাকরি ছেড়েছেন বা হারিয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন কোচ। এর মধ্যে ডেভিড ময়েস, রবার্তো ডি জেরবি, জোসে মরিনিও, ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি উল্লেখযোগ্য। অ্যালেগ্রি আবার দায়িত্ব হারিয়েছেন দলকে শিরোপা জেতানোর পর। অদ্ভুতই বটে!

কোচদের চাকরি নিয়ে এমন নির্মম নাটকীয়তার ভিন্ন দৃষ্টান্তও দেখা গেছে এ মৌসুমে। লিভারপুল থেকে ইয়ুর্গেন ক্লপের বিদায়ের শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ক্লাবটির সমর্থক-খেলোয়াড়েরা। অ্যানফিল্ডে ক্লপের বিদায়-আয়োজন মৌসুমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর একটিও হয়ে থাকবে। ক্লপের বিদায় কাঁদিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী কোচ এবং খেলোয়াড়দেরও।

তবে এমন রাজসিক বিদায়ও কি কোচদের চাকরির অনিশ্চয়তাকে কি ঢাকতে পারবে! আগামী মৌসুমেও হয়তো দেখা যাবে একই দৃশ্য। এক রোববারে যাঁকে সন্তের মর্যাদা দেওয়া হবে, পরের রোববারে তাঁকেই ছুড়ে ফেলা হবে স্টেডিয়াম চত্বরের বাইরে।