কাতারেই শেষ বিশ্বকাপ—এমন ইঙ্গিত ২০২২ বিশ্বকাপের আগেই দিয়েছিলেন নেইমার। তবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিল বাদ পড়ার পর ভাবনায় বদল কিছুটা বদল এনেছিলেন। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে টিএনটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাজিল তারকা ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
এবার সরাসরিই বললেন, ‘২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে চাই।’ নেইমার কথাটা বলেছেন এমন সময়ে, যখন সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে একটি ম্যাচেও মাঠে নামতে পারেননি।
সম্প্রতি ফরাসি সংবাদমাধ্যম আরএমসি স্পোর্টের সাংবাদিক মারিওন বার্তোল্লি ও বেনোইত বোউত্রনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নেইমার। বোউত্রন ৩২ বছর বয়সী আল হিলাল ফরোয়ার্ডের কাছে জানতে চেয়েছোন, ২০২৬ বিশ্বকাপ জয় তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ লক্ষ্য কি না।
জবাবে নেইমার বলেন, ‘সবার আগে আমি আল হিলালের হয়ে ভালো একটি মৌসুম কাটাতে চাই। মারাত্নক এক চোট থেকে কেবল ফিরেছি। নিজের পর্যায়ে ফিরতে ও কেন এখানে আছি, তা বোঝাতে এখনো হাতে সময় আছে। আমার অগ্রাধিকার হলো—ভালোভাবে সেরে ওঠা। শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে আবারও খেলা শুরু করা। আল হিলালের হয়ে আমি ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে চাই। কারণ, ক্লাবের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
নেইমার এরপর ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই বিশ্বকাপে খেলা সব খেলোয়াড়েরই লক্ষ্য। আমি এরই মধ্যে তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছি। অবশ্যই চতুর্থটিতেও খেলতে চাই। এটায় মনোযোগী থাকতে হবে এবং ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে।’
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে খেলা নেইমারের ক্যারিয়ার বেশ চোটপ্রবণ। তাঁর সর্বশেষ বড় চোট গত বছর ১৮ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে। বাঁ হাঁটুতে এসিএল চোটের পাশাপাশি মিনিসকাসেও আঘাত পেয়েছিলেন। এক বছর পর এ বছর অক্টোবরে আল হিলালের হয়ে মাঠে ফেরেন। তবে গত মাসে পাওয়া চোটে আবারও এক মাসের জন্য ছিটকে পড়েন। জাতীয় দল ব্রাজিলের জার্সিতেও এখনো ফেরা হয়নি। অপেক্ষাটা আগামী বছর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। গত বছরে সেপ্টেম্বরে কিংবদন্তি পেলেকে (৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল) পেছনে ফেলেন নেইমার (১২৮ ম্যাচে ৭৯)। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, শৈশবে সেই ছোট্ট নেইমারটি এমন স্বপ্ন দেখেছিল কি না।
নেইমারের উত্তর, ‘শৈশবে যত স্বপ্ন দেখেছি, সব ইতিমধ্যেই ছাড়িয়ে গিয়েছি। ছোটবেলায় সান্তোস ও ব্রাজিলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরও বেশি দিয়েছেন। ক্যারিয়ার নিয়ে আমি খুশি, অনেক বড় বড় ক্লাবে খেলেছি। আর এখন ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা। এই অর্জনে আমি খুব খুশি।’ নেইমার এরপর বলেছেন, ‘আমার সন্তানেরা জানবে, আমার দেশের ইতিহাসে আমি গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম।’
আগামী বছর মার্চে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। নেইমার বাছাইপর্বের এই ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষা করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বলেছেন, ‘অবশ্যই। আমি ফিরব। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি। আমাকে এবারই (গত নভেম্বরে বাছাইয়ের ম্যাচে) ডাকতে পারত। কিন্তু কোচের সঙ্গে কথা বলার পর বুঝেছি, তিনি না ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু পরেরবার আমি অবশ্যই সতীর্থদের সঙ্গে থাকব। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে ভালো আর কিছুই হয় না। আশা করি দল আরও উন্নতি করবে।’
দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্ব টেবিলে ১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ব্রাজিল। এই মহাদেশ থেকে শীর্ষ ছয় দল সরাসরি খেলবে ২০২৬ বিশ্বকাপে। সপ্তম দলটিকে দিতে হবে প্লে অফ পরীক্ষা।