এল ক্লাসিকোর মঞ্চে আজ কি নায়ক হতে পারবেন ভিনিসিয়ুস বা রাফিনিয়া
এল ক্লাসিকোর মঞ্চে আজ কি নায়ক হতে পারবেন ভিনিসিয়ুস বা রাফিনিয়া

ভিনি না রাফিনিয়া—এল ক্লাসিকোর মঞ্চে আজ নায়ক কে

একটা ম্যাচ কত কিছু বদলে দিতে পারে!
একটা ম্যাচ একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে তাঁর ক্লাবের ভাবনা বদলে দিতে পারে, বদলে দিতে পারে সমর্থকদের দেখার চোখ এবং বদলে যেতে পারে প্রতিপক্ষের কৌশল।
উদাহরণ চান, রাফিনিয়াকে দেখুন। ২০২২ সালের মাঝামাঝি লিডস ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর খুব আহামরি কিছু কখনো করতে পারেনি। বছরখানেক ধরে তো এ রকম অবস্থা, তাঁর জন্য বার্সেলোনা অন্য ক্লাবের প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিল। যাঁকে দিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না, তাঁকে রেখে কী লাভ!
এই মৌসুমের শুরু থেকে হান্সি ফ্লিকের অধীনে রাফিনিয়ার বদলে যাওয়ার শুরু। কিন্তু তারপরও তাঁকে নিয়ে মাতামাতি ততটা হচ্ছিল না, যতটা হয় লামিনে ইয়ামাল, রবার্ট লেভানডফস্কিদের নিয়ে।

বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন রাফিনিয়া


তারপর চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে তিন দিন আগের সেই ম্যাচ। রাফিনিয়া যেন ভাবলেন, এটাই মোক্ষম সুযোগ, সবাইকে ম্লান করে নিজেকে বড় মঞ্চে জাহির করার। সেটা কী দারুণভাবেই না করলেন। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করলে যে কেউ আলো কাড়বেন। তারপর সেটা যদি হয় সেই বায়ার্ন, যাদের ৯ বছর ধরে হারাতে পারেনি বার্সেলোনা। রাফিনিয়ার ওই হ্যাটট্রিকে অবশেষে বার্সা সেই অধরা জয় পায় ৪-১ গোলে।

সেই ম্যাচের পর হঠাৎ করেই যেন মনে হতে থাকে, এই বার্সেলোনা দলে রাফিনিয়া তো খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার চিন্তাটাও আপাতত বাদ দিতে হয় বার্সেলোনার। উল্টো রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে আজ রাতের এল ক্লাসিকোর আগে রাফিনিয়া হয়ে ওঠেন বার্সেলোনার সবচেয়ে আলোচিত খেলোয়াড়। কোনো সন্দেহ নেই, এখন তাঁকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তিকেও।


এ তো গেল রাফিনিয়ার হঠাৎ আলোয় চলে আসার গল্প। এবার তাঁর মতো আরেক ব্রাজিলিয়ানের গল্প শুনুন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যাঁর আলোতে থাকার অভ্যাস। ২০১৮ সালে ফ্ল্যামেঙ্গো ছেড়ে যখন রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলেন, তখন থেকেই তিনি নেইমার–পরবর্তী যুগে ব্রাজিলের সম্ভাব্য মহাতারকা বলে বিবেচিত। রিয়াল মাদ্রিদের শুরুর দিনগুলোয় অবশ্য তাঁকে করিম বেনজেমাদের আড়ালেই থাকতে হয়েছে তাঁকে। তবে আড়াল থেকে আলোতে আসতে বেশি সময় নেননি ভিনি। ২০২১-২২ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হলেন, পরের মৌসুমে জায়গা পেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা একাদশে, আর গত মৌসুমে তো রিয়ালের লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সবচেয়ে বড় ভূমিকাই বলা যায় তাঁর। যার পুরস্কার হিসেবে তিনি আগামী সোমবার প্যারিসে ব্যালন ডি’অর পাচ্ছেন বলেও জোর গুঞ্জন।

ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র

কিলিয়ান এমবাপ্পে, জুড বেলিংহাম, রদ্রিগোদের নিয়ে রিয়ালে যে তারার মেলা, সেখানে পারফরম্যান্সের বিচারে সবচেয়ে উজ্জ্বল সম্ভবত ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই। তার ওপর চ্যাম্পিয়নস লিগে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে এমন অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, অসাধারণ হ্যাটট্রিক। যে হ্যাটট্রিকে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচ রিয়াল জিতেছে ৫-২ গোলে। যে ম্যাচে ভিনিকে দেখে সেরা সময়ের মেসি-রোনালদোকে মনে পড়েছে অনেকের, রিয়াল কিংবদন্তি এমিলিও বুত্রাগুয়েনোর মনে পড়েছে পেলেকে! খুব স্বাভাবিকভাবেই আজ রাতের এল ক্লাসিকোতে দুই দল মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোটা থাকবে ভিনির ওপর।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ম্যাচ শেষেও আলোটা ভিনি ধরে রাখতে পারবেন, নাকি তাঁকে ম্লান করে উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন রাফিনিয়া?
বিস্ময়করভাবে পরিসংখ্যান এই মৌসুমে রাফিনিয়াকেই এগিয়ে রাখছে। বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রাফিনিয়া ১৩ ম্যাচ খেলেছেন এখন পর্যন্ত, গোল করেছেন ৯টি, করিয়েছেন আরও ৮টি। অন্যদিকে রিয়ালের হয়ে ভিনি ১৪ ম্যাচে গোল করেছেন ৮টি, করিয়েছেন ৭টি।
এল ক্লাসিকোতে অবশ্য আগের পরিসংখ্যান, মুখোমুখি লড়াইয়ে ইতিহাস, এসব খুব একটা কাজে আসে না। এটা মর্যাদার লড়াই, স্নায়ুর লড়াই। প্রতিটি ম্যাচ এখানে তারকা হয়ে ওঠার মঞ্চ।
এখন দেখার অপেক্ষা, সেই মঞ্চে আজ ভিনি আলো কেড়ে নেন, নাকি রাফিনিয়া? নাকি দুজনকেই ম্লান করে অন্য কেউ হয়ে ওঠেন ক্লাসিকোর নায়ক!