গোললাইন থেকে

মরক্কো যোগ্যতা প্রমাণ করেই সেমিতে

ফ্রান্স আর আর্জেন্টিনার শেষ চারে আসা কোনো চমক নয়। তবে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে ওঠা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। গতবারের রানার্সআপ হওয়া সত্ত্বেও ক্রোয়েটদের নিয়ে আশাবাদী ছিলাম না আমিও। কারণ, ওদের খেলার ধরন কখনো মন কাড়েনি। শেষ চারে মোটেও আশা করিনি মরক্কোকেও। কিন্তু গত রাতে পর্তুগালকে বিদায় করে উত্তর আফ্রিকার দেশটি এখন সেমিফাইনালে।

যদি বলি, মরক্কোকে প্রথম ম্যাচ দেখেই বুঝে ফেলেছিলাম এত দূর আসবে, সেটা হবে বানানো কথা। শুধু আমি কেন, ফুটবলবোদ্ধাদের কেউই মনে হয় না টুর্নামেন্টের শুরু থেকে মরক্কোকে এ জায়গায় দেখতে চেয়েছে। কিন্তু সব হিসাব পাল্টে ম্যাচ বাই ম্যাচ উন্নতিই শুধু করেনি ওরা, সবার মনও জয় করে নিয়েছে—এ কথা মানতেই হবে। ধাপে ধাপে উন্নতি করে এখন তো পরিণত একটা দলের মতো লাগছে ওদের। গ্রুপ থেকে ফাঁকতালে চলে আসেনি মরক্কো, যোগ্যতার প্রমাণ রেখেই এসেছে।

প্রথম দিকে মরক্কোর ফুটবলাররা মাঠে প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করেছে। এখন মনে হচ্ছে, সেটা তারা উদ্দেশ্যহীনভাবে করেনি। তাদের রিকভারি রান, বলের ওপর চ্যালেঞ্জ—সবকিছুই ভালো হয়েছে। অতিরিক্ত আবেগে অপ্রয়োজনীয় কিছু করেনি মাঠে, যা করেছে, সবই কাজে এসেছে। যে কারণে দলটির এই সফলতা।

কোয়ার্টার ফাইনালের আগে একটি টিভি চ্যানেলে বলছিলাম, পর্তুগাল এগিয়ে থাকলেও জেতার সম্ভাবনা আছে মরক্কোর। ওদের ফুটবলারদের বড় গুণ, প্রাণশক্তি প্রচুর। দৌড়াদৌড়িতে মনে হয়, এই বিশ্বকাপের সেরা অ্যাথলেটিক দল তারা। কিছু খেলোয়াড় তো ইউরোপে খেলে, হাকিমি পিএসজিতে। খেলোয়াড়দের মান ভালোর সঙ্গে পরিপক্বতা মিলে এই বিশ্বকাপের সেরা চমক মরক্কো।

ইংল্যান্ড–ফ্রান্স ম্যাচে ইংল্যান্ড তুলনামূলক ভালো খেললেও জিতেছে ফ্রান্সই। কাইল ওয়াকার বলেছিল সে এমবাপ্পেকে দৌড়াতে দেবে না। কথা রেখেছে সে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি ইংল্যান্ডের। আসলে একজনকে পাহারায় রাখলে সুযোগ তৈরি হয় আরেকজনের সামনে। সেটাই হলো শেষ পর্যন্ত।

এক ম্যাচে দুটি পেনাল্টি একজনের পক্ষে নেওয়া কঠিন। হ্যারি কেইন অভিজ্ঞতার কারণে নিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় অন্য কাউকে দিয়ে নেওয়া যেত দ্বিতীয় পেনাল্টিটা। যত ভালো খেলোয়াড় হোক, দিন শেষে সবাই রক্ত–মাংসের মানুষ। একেবারের শেষ দিকে দ্বিতীয় পেনাল্টিটা নেওয়ার সময় কেইনকে ক্লান্ত মনে হয়েছে। যা–ই হোক, পেনাল্টি মিস হতেই পারে। এটা খেলারই অংশ। তবে ইংল্যান্ড হারলেও অনেক দিন পর তাদের খেলা ভালো লেগেছে। কেইন দ্বিতীয় গোলটা পেলে ওরা জিততেও পারত।

কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে সেমিফাইনাল লাইনআপ যা দাঁড়িয়েছে, তাতে মরক্কো বা ক্রোয়েশিয়া বিরাট কিছু করে না বসলে লাতিন আর ইউরোপ ফাইনালই হতে যাচ্ছে সম্ভবত। আর্জেন্টিনা যে ছন্দে আছে, তারা ফাইনালে যেতেই পারে। সর্বশেষ ২০১৪ ফাইনাল খেলেছে ওরা। আর ফ্রান্স তো সর্বশেষ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নই। দুই দলই বড় মঞ্চে অহরহ খেলে। তবে তার আগে দুই দলকে টপকাতে হবে ক্রোয়েশিয়া আর মরক্কোর বাধা। যেভাবে এবারের বিশ্বকাপে অঘটন ঘটেছে, ফাইনালে চমক থাকবে না, আপনি অবশ তা শতভাগ জোর দিয়ে বলতে পারবেন না।