পাঁচ বছর কাটিয়ে ২০২২ সালে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে আর্সেনালে যোগ দেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। দলবদলে এক ক্লাব ছেড়ে অন্য ক্লাবে যাওয়া অবশ্য নতুন কিছু নয়। অর্থনৈতিক সুবিধা, ক্লাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, পারফরম্যান্সের ঘাটতি, ট্রফি জেতার আকাঙ্ক্ষা, ম্যাচে যথেষ্ট সময় না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে খেলোয়াড়দের দল বদল করতে হয়। এত দিন কিছু না বললেও এবার নিজের দলবদলের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন জেসুস। সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার ‘পাগলামো সিদ্ধান্তের’ কারণেই সিটি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা।
জেসুসের দলবদলের পেছনে মূলত ভূমিকা রেখেছিল গার্দিওলার একটি সিদ্ধান্ত। ২০২১ সালের নভেম্বরে পিএসজির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গার্দিওলা। ম্যাচের আগে জেসুস দলের প্রধান স্ট্রাইকার হিসেবে অনুশীলন করলেও পরবর্তী সময়ে সিটি কোচ আলেকসান্দার জিনচেঙ্কোকে খেলান ফলস নাইন হিসেবে। জেসুসকে তিনি বাদ দেন শুরুর একাদশ থেকে। কোচের এ সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি জেসুস। কান্নাভেজা চোখে সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্লাব ছাড়ার।
সেদিনের পুরো ঘটনা তুলে ধরে জেসুস বলেছেন, ‘সেটা ছিল পিএসজির বিপক্ষে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ। যেখানে তিনি জিনচেঙ্কোকে ফলস নাইন হিসেবে খেলান। পাগলামি ছাড়া আর কী! আগের দিন অনুশীলনেও তিনি জিনচেঙ্কোকে ব্যবহার করেননি, আর তিনি আমাকে খেলিয়েছিলেন স্ট্রাইকার হিসেবে। এ নিয়ে জিনচেঙ্কো আমার সঙ্গে মজাও করেছিল। বলেছিল, “সেদিন তোমার জন্য আমার খারাপ লেগেছিল।”’
জেসুস এখানেই থামেননি। তিনি বলে চলেন, ‘ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগের ঘটনা। তখন দল খাবে, ৩০ মিনিট বিশ্রাম নেবে এবং ম্যাচের জন্য মাঠে যাবে, এমন সময় তিনি আমাদের এটা বলেছিলেন। আমি আর খেতে পারিনি। আমি সরাসরি রুমে চলে গিয়েছিলাম এবং কাঁদছিলাম। আমি আমার মাকে ফোন করে বলি, “আমি ক্লাব ছাড়তে চাই। আমি বাসায় যাব। কারণ, তিনি জিনচেঙ্কোকে খেলাচ্ছেন, আমাকে নয়। তিনি একজন লেফটব্যাককে সেখানে খেলাচ্ছেন।” আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’
গার্দিওলার এমন সিদ্ধান্তের পর সেদিন আর ওয়ার্মআপও করেননি জেসুস। তবে দল বিপদে পড়লে ঠিকই ডাক পড়ে তাঁর। দ্বিতীয়ার্ধের ৫০ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে গোল করলে পিছিয়ে পড়ে সিটি। ৩ মিনিট পরেই জেসুসকে মাঠে নামান গার্দিওলা। একটি গোল ও অন্য গোলে অ্যাসিস্ট করে দলের জয়ে অবদানও রেখেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান।
জেসুসের মুখেই বিস্তারিত শোনা যাক, ‘আমি সেদিন একটি অ্যাসিস্ট এবং একটি গোল করি। ম্যাচের রূপ বদলে ২–১ করে দিই। এর ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগের পরের ম্যাচে (লাইপজিগের বিপক্ষে) আমি ভেবেছিলাম আমাকে রাখা হবে। কিন্তু সেই ম্যাচে আমি খেলিনি। গার্দিওলার সঙ্গে এমন অনেক কিছু হয়েছে। এটা সহজ ছিল না। ব্যাপারটা অনেক কঠিন ছিল। সে কারণেই আমি ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেখানে আমি আর থাকতে চাইনি।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, জেসুসের সঙ্গে গত মৌসুমে জিনচেঙ্কোও সিটি ছেড়ে আর্সেনালে আসেন।
গার্দিওলার এমন ট্যাকটিক্যাল পাগলামি অবশ্য নতুন কিছু নয়। চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বাদ দিয়েই একাদশ সাজিয়েছিলেন এই স্প্যানিশ কোচ। যার খেসারত দিয়ে সেবার শিরোপাও হারাতে হয়েছিল সিটিকে।