ডি-বক্স থেকে

অঘটন আরও দেখা যাবে

সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয় মোটামুটি নিশ্চিতই ধরে নিয়েছিলাম। অঘটনের সম্ভাবনা দেখেছিলাম ৫-৭ ভাগ। কী আশ্চর্য, সেই ৫-৭ ভাগই মাঠে ফলে গেল! শুরুতেই এমন হারে আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা কষ্ট পেয়েছে জানি।

তবে সমর্থক হিসেবে নয়, একজন সাবেক খেলোয়াড় ও কোচের চোখ দিয়ে আমি ম্যাচটা দারুণ উপভোগ করেছি। ভালো লেগেছে সৌদি আরবের নৈপুণ্য। যোগ্যতর দল হিসেবেই দুবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দিয়েছে এশিয়ার দেশটি। তবে এখানেই শেষ নয়। আমার তো মনে হয়, কাতার বিশ্বকাপে অঘটন আরও দেখা যাবে।

আর্জেন্টিনার হারের কারণ অনেক। প্রথমত, দলটাকে আমার ভারসাম্যপূর্ণই মনে হয়নি।

এমন ম্যাচে যেমন চনমনে থাকা উচিত, সেটাও তারা ছিল না। শারীরিকভাবে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের ক্লান্ত লেগেছে। যখন গা ঝাড়া দিয়েছে, ততক্ষণে সময় শেষ। আগেই বলছিলাম, আর্জেন্টিনার দুই সেরা ফরোয়ার্ড আনহেল দি মারিয়া ও লিওনেল মেসির বয়স ৩৪ ও ৩৫। যার ওপর সবচেয়ে বেশি আলো, সেই মেসি খেলতেই পারেনি সেভাবে। দি মারিয়া শেষ দিকে একটু বাড়তি চেষ্টা করেছে কিন্তু ছন্দ খুঁজে পায়নি। বয়স যে একটা ব্যাপার, সেটা আবারও বোঝা গেল।

প্রথম আলোয় লেখা কলামে আমি এবার আর্জেন্টিনাকে শীর্ষ ফেবারিটের তালিকায় রাখিনি। আমার প্রথম দুই পছন্দ ফ্রান্স ও ব্রাজিল। তিনে ইংল্যান্ড, চারে আর্জেন্টিনা। মেসিদের একটু পেছনে রাখার কারণ, টানা ৩৬টি ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপে এসেছে ওরা। নিজেদের সেরা খেলাটা বিশ্বকাপের আগেই খেলে ফেলেছে। এখন সেরাটা মেলে ধরতে সময় লাগবে বলে আমার মনে হয়।

প্রবল শক্তিধর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরব হাইলাইন ডিফেন্স নিয়ে খেলেছে, ফলে ম্যাচটা তারা রাখতে পেরেছে মাঝমাঠে। সৌদি কোচ জানতেন, বক্সের আশপাশে আর্জেন্টিনাকে জায়গা দিলে বড় বিপদ, তাই তিনি ডিফেন্স লাইনটা ওপরে তুলে দেন। প্রতিপক্ষের এমন কৌশলের জবাব বের করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ফলে বারবার অফসাইড হয়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা, অফসাইডে তাদের একাধিক গোলও বাতিল হয়েছে। অতিরিক্ত অফসাইড এড়াতে আর্জেন্টিনা সেন্টার লাইনে ছোট ছোট পাস খেলে দ্রুত থ্রু ঠেলতে পারত। তাহলে হয়তো অফসাইড এড়ানো যেত। কিন্তু সেটা হয়নি। আমার মতে, এখানেই মার খেয়েছে আর্জেন্টিনা।

সৌদি আরব কৌশলী ফুটবল খেলেছে। ওরা শারীরিকভাবে ফিট ছিল। সবাই ভালো রানিং করেছে। বক্স টু বক্স রানিং ভালো ছিল তাদের। গোল ২টিও খুব সুন্দর করেছে। কোনোভাবেই এগুলো ফাঁকতালে পাওয়া নয়। দলের অভাবনীয় এই জয়ে অবদান রেখেছে সব বিভাগ।

রক্ষণ ভালো খেলেছে। গোলকিপার তো প্রাচীরই তুলে দিয়েছিল! সে তার সামনে আসা ক্রসগুলো ভালোভাবে সামলেছে। এমনিতে এশিয়া বা আমাদের এ অঞ্চলের গোলকিপাররা সেভাবে মাঠে দারুণ কিছু করে সাড়া ফেলতে পারে না। কিন্তু ইউরোপের ফুটবলে গোলকিপারের ভূমিকা অনেক বেশি। ইংলিশ ক্লাব চেলসি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে পিটার চেকের দারুণ নৈপুণ্যে। একজন সাধারণ ফুটবলার দুই পা দিয়ে খেলে। কিন্তু গোলকিপার খেলে হাত-পা সবই ব্যবহার করে। গোলকিপারের ভালো খেলার সুযোগ তাই বেশি।

ম্যাচে আর্জেন্টিনার পাওয়া পেনাল্টিটা একেবারেই ঠিক আছে। সৌদি আরবের সমস্যা আমাদের মতো। আমাদের দেশে বক্সে এ ধরনের ফাউল এড়িয়ে যান রেফারি। কিন্তু বিশ্বকাপে এসব ফাউল করে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই।

ফলে এশিয়ার দলগুলো কমবেশি এমন সমস্যায় পড়তে পারে। আমি বলব, সৌদি আরব খুব বোকার মতো পেনাল্টিটা দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। পরে সেই ক্ষতি তারা পুষিয়ে নিতে পেরেছে।

কিন্তু সৌদি আরবের কাছে হারের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হতে পারে শিরোপাপ্রত্যাশী আর্জেন্টিনার জন্য। ‘সি’ গ্রুপটা এখন বলা যায় ‘গ্রুপ অব ডেথ’। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে মেক্সিকো, পোল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচই জিততে হবে আর্জেন্টিনাকে। আমি নিশ্চিত, গতকালের ম্যাচের ভুল শুধরে আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে। কিন্তু মুশকিল হলো, পরের দুটি ম্যাচ জিতবেই, সেই নিশ্চয়তা আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিও দিতে পারবেন না।