মাঠে জার্মানির সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। ২০২৩ সালে ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৩টিতে জিতেছে তারা। এমনকি ব্যর্থতার দায়ে কোচ হানসি ফ্লিককে সরিয়ে ইউলিয়ান নাগলসমানকে নিয়ে এসেছে জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি)।
যদিও এই পরিবর্তনের সুফল এখনো পায়নি। অনেকেই বলেছেন, স্বাগতিক না হলে জার্মানির হয়তো এবার ইউরোতেই খেলা হতো না। ইউরোর সাত মাসের কম সময় হাতে থাকা অবস্থায় দলের এমন পারফরম্যান্স ভাবাচ্ছে জার্মান ফুটবল–সমর্থকদেরও।
তবে খেলার প্রস্তুতিতে পিছিয়ে থাকলেও মাঠসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত প্রস্তুতিতে ভালোই এগিয়ে গেছে আয়োজক জার্মানি। মূলত ২০০৬ বিশ্বকাপে আয়োজনের জন্য অবকাঠামোগত যে ভিত তারা তৈরি করেছিল, সেটির ওপরই আস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের সেই দৃষ্টান্তই এখন ইউরোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে জার্মানিকে।
জার্মানিতে আগে থেকেই অনেক বিশ্বমানের ভেন্যু রয়েছে। যে কারণে ২০২৪ ইউরোর জন্য নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে হয়নি তাদের। নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, এটা বিশেষ ব্যাপার যে কোনো কিছুই নতুনভাবে তৈরি করতে হবে না। স্টেডিয়ামগুলো আগে থেকেই আছে।
আগেই বলা হয়েছে, জার্মানি এবারের ইউরো আয়োজনে বিশেষভাবে নির্ভর করছে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের অবকাঠামোর ওপর। যা কিনা গত ১৮ বছর জার্মানিজুড়ে গর্বের প্রতীক হয়ে আছে। এবারের ইউরো যে ১০ ভেন্যুতে হবে, এর মধ্যে ৯টিতেই ২০০৬ বিশ্বকাপ হয়েছিল। ভেন্যুগুলো হলো বার্লিন, মিউনিখ, ডর্টমুন্ড, স্টুটগার্ট, হামবুর্গ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, কোলন, গেলসেনকিরশেন ও লাইপজিগ। এর বাইরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডুসেলডর্ফের ৫৪ হাজার ৬০০ আসনবিশিষ্ট মাঠ মেরকার স্পিয়েল অ্যারেনা।
দুই জার্মানি একীভূত হওয়ার পর এবারই প্রথম ইউরো আয়োজন করছে জার্মানি। এর আগে ১৯৮৮ সালে পশ্চিম জার্মানি ইউরো আয়োজন করেছিল। তবে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের মতো এবারও জার্মানির পূর্ব অংশ থেকে শুধু দুটি শহরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; রাজধানী বার্লিন ও লাইপজিগ।
২০২৪ ইউরো সামনে রেখে বেশির ভাগ স্টেডিয়ামই দারুণ অবস্থায় আছে। শুধু স্টুটগার্টের নেকারস্টেডিয়নে বড় ধরনের সংস্কার কাজ চলছে। জার্মানির দক্ষিণ–পশ্চিম অঞ্চলের এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল মূলত ১৯৭৪ বিশ্বকাপের জন্য। এখন ইউরো সামনে রেখে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে এর সংস্কারকাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চ্যান্সেলর শলৎস গত জুনে এবারের ইউরোকে ‘ইউরোপের জন্য হোম গেম’ বলে অভিহিত করেছিলেন। যেখানে একাধিক দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সমালোচনাও করেছিলেন। এর আগে করোনা মহামারির সময় ২০২০ ইউরো আয়োজিত হয়েছিল ১১টি দেশে। তবে জার্মানি এবার ভ্রমণ সীমিত করতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোকে মূলত তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করেছে। যেখানে দলগুলোকে একটি বেস ক্যাম্প বাছাইয়ের সুযোগও দেওয়া হয়েছে।
তিনটি অঞ্চলের একটি হচ্ছে উত্তরের বার্লিন, হামবুর্গ ও লাইপজিগ। দ্বিতীয়টি পশ্চিম অঞ্চলের কোলন, ডুসেলডর্ফ, গেলসেনকিরশেন ও ডর্টমুন্ড। আর তৃতীয়টি মিউনিখ, স্টুর্টগার্ট ও ফ্রাঙ্কফুর্ট।
আয়োজক জার্মানিসহ আরও ২০টি দেশ এরই মধ্যে ইউরোর টিকিট নিশ্চিত করেছে। প্লে–অফ খেলে নির্বাচিত হতে হবে বাকি তিন দলকে। প্রথম রাউন্ডের টিকিট বিক্রি হয়েছে গত অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে। ১২ লাখ দর্শক এরই মধ্যে নিজেদের আসন নিশ্চিত করেছে। টিকিট বরাদ্দ চাহিদাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি কারা ইউরোতে সুযোগ পাবে, সেটি না জেনেই প্রায় দুই কোটি টিকিটের আবেদন জমা পড়েছে।
আজ রাতে গ্রুপ পর্বের ড্র হওয়ার পর আগামী সোমবার আরও ১০ লাখ টিকিট ছাড়া হবে। শেষ তিন দল নিশ্চিত হওয়ার পর পরের ধাপের টিকিট ছাড়া হবে। আসরে ৫১ ম্যাচে মিলিয়ে ২৭ লাখ দর্শক উপস্থিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্লিন
মাঠ : অলিম্পিয়াস্টেডিয়ন
ক্লাব : হার্থা বার্লিন
ধারণক্ষমতা : ৭৪,৫০০
ইউরো ২০২৪ : গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ, শেষ ষোলোর এক ম্যাচ, একটি কোয়ার্টার ফাইনাল ও ফাইনাল।
মিউনিখ
স্টেডিয়াম: আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা
ক্লাব: বায়ার্ন মিউনিখ
ধারণক্ষমতা: ৬৭,০০০
ইউরো ২০২৪ : উদ্বোধনী ম্যাচসহ গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ, শেষ ষোলোর এক ম্যাচ ও একটি সেমিফাইনাল।
ডর্টমুন্ড
স্টেডিয়াম: সিগনাল ইদুনা পার্ক
ক্লাব: বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
ধারণক্ষমতা: ৮২,০০০
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ, শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ ও একটি সেমিফাইনাল।
স্টুটগার্ট
স্টেডিয়াম: নেকারস্টেডিয়ন
ক্লাব: স্টুটগার্ট
ধারণক্ষমতা: ৬০,৪৪৯
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ ও একটি কোয়ার্টার ফাইনাল।
হামবুর্গ
স্টেডিয়াম: ফক্সপার্কস্টেডিয়ন
ক্লাব: হামবুর্গ
ধারণক্ষমতা: ৫৭,০০০
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ ও একটি কোয়ার্টার ফাইনাল।
ডুসেলডর্ফ
স্টেডিয়াম: মেরকার স্পিয়েল অ্যারেনা
ক্লাব: ফর্চুনা ডুসেলডর্ফ
ধারণক্ষমতা: ৫৪,৬০০
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ, শেষ ষোলোর এক ম্যাচ ও একটি কোয়ার্টার ফাইনাল।
কোলন
স্টেডিয়াম: রেইনএনার্জি স্টেডিয়ন
ক্লাব: কোলন
ধারণক্ষমতা: ৫০,০০০
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ ও শেষ ষোলোর এক ম্যাচ।
ফ্রাঙ্কফুর্ট
স্টেডিয়াম: ডয়েচে ব্যাংক পার্ক
ক্লাব: আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট
ধারণক্ষমতা: ৫১,৫০০
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ ও শেষ ষোলোর এক ম্যাচ।
লাইপজিগ
স্টেডিয়াম: রেডবুল অ্যারেনা
ক্লাব: আরবি লাইপজিগ
ধারণক্ষমতা: ৪১,৫০০
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ ও শেষ ষোলোর এক ম্যাচ।
গেলসেনকিরশেন
স্টেডিয়াম: ভেলটিনস অ্যারেনা
ক্লাব: শালকে
ধারণক্ষমতা: ৬২,২৭১
ইউরো ২০২৪: গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ ও শেষ ষোলোর এক ম্যাচ।